করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

চুনারুঘাটে ঐতিহাসিক চা শ্রমিক দিবস উদযাপনে সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

আব্দুর রাজ্জাক রাজু, চুনারুঘাটঃ আজ ২০ মে, ঐতিহাসিক চা শ্রমিক বা ‘মুল্লুকে চলো’ দিবস।চুনারুঘাটের ২৩ টি চা বাগান সহ দেশের বিভিন্ন চা বাগানগুলোতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিনটি। এই দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় ১৯২১ সালের সেই ভয়াল ঘটনাকে, যখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শোষণ আর নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে নিজভূমে ফেরার আকুতি বুকে নিয়েছিলেন হাজার হাজার চা শ্রমিক।

চুনারুঘাট উপজেলার লস্করপুর ভ্যালীর চানপুর চা বাগানে জেলার সকল চা শ্রমিকরা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।
(২০ মে)মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠান চলবে।
চানপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সাধন সাঁওতাল এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন..সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেত্রী শাম্মী আক্তার।

আরো বক্তব্য রাখেন, অধ্যক্ষ আজিজুল হাসান চৌধুরী শাহীন,এডভোকেট জুনায়েদ আহমেদ,সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান চা কন্যা খাইরুন আক্তার,উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মারুফ মিয়া,চা শ্রমিক নেতা যুবরাজ ঝরা,কাঞ্চন পাত্র,স্বপন সাঁওতাল,চা শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা সফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
চা শিল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে শুধু চীনেই চায়ের প্রচলন ছিল। ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চা চাষ শুরু করে। এরপর বৃহত্তর সিলেটে বিস্তীর্ণ চা বাগান গড়ে তোলার জন্য ভারতের আসাম, উড়িষ্যা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়। ‘গাছ হিলেগা, রুপিয়া মিলেগা’ (গাছ নড়বে, টাকা মিলবে) – এমন লোভনীয় প্রতিশ্রুতিতে আকৃষ্ট হয়ে শ্রমিকরা ভিড় করে বাংলাদেশে। তবে এখানে এসে তাদের মোহ দ্রুতই ভেঙে যায়। দুর্গম পাহাড় পরিষ্কার করে চা বাগান তৈরি করতে গিয়ে বন্য জন্তুদের আক্রমণে প্রাণ হারান অসংখ্য শ্রমিক। তার ওপর ছিল ব্রিটিশদের অকথ্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

এই অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তৎকালীন চা শ্রমিক নেতা পণ্ডিত গঙ্গাচরণ দীক্ষিত ও পণ্ডিত দেওসরণ। তাদের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯২১ সালের ২০ মে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক পায়ে হেঁটে রওনা হন তাদের ‘মুল্লুক’-এর (নিজ দেশ) উদ্দেশে। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তারা পৌঁছান চাঁদপুর মেঘনা স্টিমার ঘাটে। কিন্তু মুক্ত জীবনের স্বপ্ন তাদের অধরাই থেকে যায়। জাহাজে ওঠার মুহূর্তে ব্রিটিশ গোর্খা সৈন্যরা নির্বিচারে গুলি চালায় নিরস্ত্র শ্রমিকদের ওপর। মেঘনা নদীর জল সেদিন শ্রমিকদের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল, ভেসে গিয়েছিল শত শত তাজা প্রাণ। যারা ভাগ্যক্রমে পালিয়ে বাঁচতে পেরেছিলেন, আন্দোলন করার ‘অপরাধে’ তাদেরও সহ্য করতে হয়েছিল নির্মম নির্যাতন। চা শ্রমিকদের পরানো হয়েছিল বিশেষ পরিচিতি ট্যাগ, কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তাদের ভূমির অধিকার।

সেই ভয়াবহ স্মৃতি আজও তাড়িয়ে ফেরে চা শ্রমিকদের বংশধরদের। সেই থেকে প্রতি বছর ২০ মে দিনটি পালিত হয়ে আসছে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসেবে। এই দিনটি একদিকে যেমন শহীদ শ্রমিকদের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানায়, অন্যদিকে আজও চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে থাকে।

এই দিনটিকে কেন্দ্র করে চা বাগানগুলোতে আলোচনা সভা, র‍্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রমিকরা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করেন এবং নিজেদের ন্যায্য অধিকারের কথা তুলে ধরেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ