বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন
এম, এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানানোর মিছিলকে কেন্দ্র করে নবীগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সৃষ্ট হওয়া বিরোধ ও সংঘাতের ঘটনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু জাহির এমপির কঠোর হস্তক্ষেপে নিষ্পত্তি হয়েছে। তিনি বিষয়টি নিস্পত্তি করে উভয় গ্রুপের নেতাদের অঙ্গীকার করান ভবিষ্যতে এরকম কার্যক্রম আর করবেন না এবং সকল মতবেধ ভুলে আগামী নির্বাচনে নৌকার জন্য কাজ করবেন। বিষয়টি নিস্পত্তি হওয়ার নবীগঞ্জ শহরে ও সচেতন মহলে স্বস্থির নিঃস্বাস ফিরে এসেছে। দুই দিন ধরে দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে চরম উত্তেজনা ও উদ্ভিন্ন পরিবেশ বিরাজ করছিলো।
শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে নবীগঞ্জ জে.কে উচ্চ বিদ্যালয়ে বিরোধ নিস্পত্তি করার লক্ষ্যে হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু জাহির এমপির সভাপতিত্বে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আবুল ফজল, সাংগঠনিক সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল, অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গতি গোবিন্দ দাশ, নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম মাঈনুদ্দিন চৌধুরী সুমন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক এম,এ মামুন, নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র এটিএম সালাম, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এম,এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক, সাইফুল জাহান চৌধুরী সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ মিলু, রিজভী আহমদ খালেদ, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল মালিক, ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে ইমদাদুর রহমান মুকুল, শাহরিয়ার নাদির সুমন, নির্মলেন্দু দাশ রানা, হাবিবুর রহমানসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সালিশ বৈঠকের সভাপতি জেলা ও আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু জাহির এমপি বলেন- দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইছে। মানুষ নির্বাচনকে উৎসব হিসেবে গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াত দেশে অরাজকতা সৃষ্টিসহ অগ্নি সন্ত্রাস চালিয়ে নির্বাচনের পরিবেশকে বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এই সময়ে নিজেদের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি ও বিরোধ থাকলে হবে না। বিএনপি ও জামায়াতকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। এক পর্যায়ে বিরোধপূর্ণ নেতাদের মধ্যে কোলাকুলি করে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে উভয় পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেন।
বুধবার দিবাগত রাতে ও বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানানোর মিছিলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিকসহ ১০ জন আহত হন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়- বুধবার রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন উদ্যোগে মিছিল বের করা হয়। নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক গতি গোবিন্দ দাশ, সাইফুল জাহান চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দরা মিছিল ও পথসভা করেন। ওইসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক লোকমান খানসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মিছিল ও পথসভায় যোগ দেন। পথসভা শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক তাদেরকে নামাজে রেখে কেন মিছিল শুরু করা হলো এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ সাধারণ সম্পাদক গতি গোবিন্দ দাশের কাছে জানতে চান। এসময় উক্ত বিষয় নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু ও পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য বাবলু আহমদের মধ্যে বাগবিত-া হয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা মীমাংসা করার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে নবীগঞ্জ শহরের শেরপুর রোডস্থ আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মালিক মিয়ার অফিসে সালিশ বৈঠকে বসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এসময় জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু ও বাবলু আহমদের বিরোধটি মীমাংসা করে দেওয়া হলে ঘটনার শেষ পর্যায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ মিলুর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিক (৫৫), পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবলু মিয়া (৩০), সঞ্জয় দাস (৪০), মিঠু শীল (৩০), সৌরভ তালুকদার (২৫), আনহার আহমদ (৩৫), জিজু মিয়া (৩০), জায়েদ মিয়া (৩২) সহ উভয়ের পক্ষের ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ শহরে অবস্থান নেয়। পরে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল খয়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে পুলিশ ও সিনিয়র নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু জাহির এমপি তাৎক্ষনিকভাবে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকালে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নবীগঞ্জ এসে উভয়ের বিরোধ আপোষে নিষ্পত্তি করেন।