বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন
শাহ্ মোস্তফা কামাল, শায়েস্তাগঞ্জ থেকে: শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন। দেশের প্রায় সব ট্রেন গন্ত্যব্যে পৌঁছতে অতিক্রম করতে হয় জংশনটি। কিন্তু থাবা পার্টি ও মলম পার্টি সদস্যদের উৎপাতে গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশনটি যাত্রীদের কাছে বর্তমানে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। মুহুর্তেই খোয়াচ্ছেন মোবাইল, নগদ অর্থ ও স্বর্ণলংকারসহ নানা দামি জিনিসপত্র। থাবা পার্টির ও মলম পার্টির সবচেয়ে বেশি তৎপরতা লক্ষ করা যায় শায়েস্তাগঞ্জ রেলগেই পর্যন্ত। তাদের উপদ্রবে অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করেছেন খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।
ট্রেনগুলো গেট এলকায় পৌঁছালে কমে আসে গতি। ঐ এলাকায় চুরি ছিনতাই অহরহ ঘটনা ঘটে। শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে বিভিন্ন স্থানে থেকে যাত্রীরা আসা যাওয়া উঠানামা করছে। শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীরা বসে অথবা ট্রেনে উঠানামার সময় যাত্রীদের পকেট থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। এনিয়ে একধরনের ছিনতাইকারী মহিলা যাত্রীদের গলাথেকে স্বর্ণের চেইন নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এই সুযোগে থাবা পার্টি ও মলম পার্টির সদস্যরা ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েক জন ভুক্তভোগীরা জানান, রেললাইনের পাশে বিভিন্ন বয়সী কিশোর, তরুণ ও যুবকরা ওতপেতে বসে এবং দাঁড়িয়ে থাকে।
ট্রেনে জানালার পাশে থাকা মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায় পাশের বস্তি ও লোকালয়ে। এ ছাড়া কেউ কেউ ট্রেনের মধ্যেই অবস্থান করে। ট্রেন ছেড়ে দিলে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। পালানোর এক মিটিটের মধ্যে তারা অদৃশ্য হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে কাউকে ধরে ফেললেও সঙ্ঘবন্ধ চক্রের রোষানলে পড়তে হয়। স্টেশনটিতে গত ৬ মাসে শতাধিক এমন ঘটনা ঘটছে। আসেছে ঈদে ও তৎপরতা আও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেশ কয়কটি গ্রুপে ৭-৮ জন করে এমন টানা ও থাবা পার্টির সদস্য রয়েছে। এমন গ্রুপ রয়েছে বেশ কয়েকটি। এদের কাজ ও দায়িত্ব আলাদাভাবে বন্টন করা। মোবাইল ও মূল্যবান জিনিসপত্র আশপাশের বস্তি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিয়ে যাওয়া পর্যন্তই তাদের কাজ। এরপর তাদের গ্রুপের কিছুসংখ্যক সদস্য বাজারের কয়েকটি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে রেখে আসে। এদের মধ্যে অনেক মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানদার ও স্থানীয় নেতা এদের দলের সদস্য।
স্থানীয়রা জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে পাশে থাকা বস্তি। বস্তি বাস কররেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। যাদের অধিকাংশ অপনারধমুলক কাজে জড়িত। অপরদিকে, ছিনতাই শেষে ঘনবসতিপূর্ণ এসব এলাকায় চলে যেতে পারলেই থাকে অপরাধীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন এলাকার বাবুল হোসেন বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন পার হয়ে পরিবেশটা সুন্দর দেখে, করছিলাম হঠাৎ দেখি আমার ফোন নেই। চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে ফোনটা নিয়ে চলে গেছে।
অন্য এক ভুক্তভোগী জানান, রেললাইন ও স্টেশন দিয়ে কয়েকবার ঘুরবেন আপনাকে টার্গেট করে ফেলবে। কোন চক্করে পড়বেন আপনি নিজেও বুঝবেন না। একজনকে কিছু বলবেন মুহুর্তের মধ্যে ৫০ জন উপস্থিত হয়ে যাবে। এটি রীতিমতো ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। শায়েস্তাগঞ্জ নিজগাঁও এলকার বাসিন্দা সুমন ইসলাম বলেন, এই চক্র কত বড় এটা আপনার আমার ভাবনার বাইরে। এরা কখনও থাবা পার্টি, কখনও টোকাই, কখনও ভিক্ষুক আবার কখনও রাজনৈতিক দলের কর্মী।শায়েস্তাগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকায় কোন প্রোগ্রাম হলেই তাদেরকে লাগবেই। নেতাদের মূল শক্তি এসব বস্তির লোকজন।
সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়। শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ের স্টেশনের উত্তর পাশে বেশ কয়েক জন লোকজন রাতদিন গভীর রাত পর্যন্ত বসে সিগারেটে নেশাদ্রব্য মিশিয়ে টানছে। চোখে তাদের ঘুম ঘুম ভাব। খেলার ছলে কথা বলতে চাইলে দুজন দৌড়ে পালিয়ে যায় কিন্তু হেলিম বসে থাকে। হেলিম জানায়, সিলেট থেকে ২ বছর আগে শায়েস্তাগঞ্জ এসেছে। তার কাজ ছিনতাই, তবে ছিনতাই না করতে পারলে ভিক্ষা করে। একটি মোবাইল ছিনতাই করে বড়ভাইদের দিতে পারলে ৫০০/৬০০ টাকা পায়। কখনও কখনও শুধু নেশাদ্রব্যের মাধ্যমেই দিয়ে দেয় মোবাইলটা।
এদিকে, শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে প্রবণতায় দিশেহারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। জনবল সংকটের কারণে তার নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না। ফলে প্রকাশ্যে মাদক সেবন, ছিনতাই, রাহাজানির ঘটনা বাড়লেও তাদের তৎপরতা সীমিত। শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে পুলিশ ফাঁড়ি সূত্র বলছে, তাদের সর্বমোট জনবল ১৫ জন। শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক বাবুল আলম বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন এলাকায় ক্রাইমের যন্ত্রাণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আমি আও অনেক জায়গায় চাকরি করেছি কিন্তু এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পরিনি। গত কয়েক মাসে শুধুমাত্র ছিনতাই চুরির কারণে ১০-১৫ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছি। তারা কয়েকদিন পর আবারও কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে। আমাদের জনবল কম এই অল্প জনবল নিয়ে অভিযানে গেলে স্টশন ফাঁকা হয়ে যায়। ছিনতাইকারীদের ধরতে অনেক সময় কিশোর বিধিমালাও মানতে হয়। এ ছাড়া আমাদের কাছে অস্ত্রও নেই। অতিক্রম করা যায় না রেলের সীমানাও। সব মিলেয়ে পরিস্থিতি খুবই খারাপ। শায়েস্তাগঞ্জ থানার সহযোগী ও জনবল বাড়ানো হলে পরিস্থিতি পরিবর্তন করা যেতে পারে।