বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী তেলিয়াপাড়া চা বাগান মাদক সেবন ও ব্যবসায়ীদের ব্যাপক আনাগোনা ছিল। মাদক ব্যবসায়ীদের দৌঁড়াত্মে বাগান কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ শ্রমিক অতিষ্ট হয়ে পড়ে।
চা বাগানের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় মাদক সেবীদের নিরাপদ আস্থানা গড়ে উঠে। চা বাগানের বেকার শ্রমিকরাও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। বাগানের ভেতরে নিরাপদ স্থান মনে করে মাদব সেবীরা চা বাগানে আস্থানা গাড়ে।
মাদকের ভয়াল থাবা থেকে চা বাগানবাসীকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে বাগানের ম্যানেজার ও সাধারণ শ্রমিকরা। তারা সবাই মিলে গঠন করে মাদক প্রতিরোধ কমিটি। এসব কমিটিকে স্কুল কলেজগামী এবং তরুণদের যুক্ত করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় বাগানের শীর্ষ ৩জন মাদক ব্যবসায়ীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।
বাগানের শ্রমিক নেতারা জানান গত কয়েক বছর ধরে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। মাদকের এ ব্যবসায় চা বাগানের কতিপয় বিপদগামী যুবক জড়িয়ে পড়ে।
ধীরে ধীরে বিস্তার বেড়েই চলছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে উঠতি বয়সের তরুণরা মোটর সাইকেল যোগে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মাদক সেবন ও কেনা বেচার কাজে জড়িয়ে পড়ে। পরদিন চা বাগানে সকাল বিকালে শতশত যুবক মোটর সাইকেলে এসে মাদকের ব্যবসা করত। অনেক চা শ্রমিকের ঘরে বসত মাদকের আসর।
তেলিয়াপাড়া স্মৃতি সৌধের দর্শনের অজুহাতে মাদকসেবীরা দর্শনার্থী পরিচয় দিয়ে চা বাগানে প্রবেশ করে মাদক সেবন ও পরিবহন করত। তাদের সঙ্গে চা বাগানের সাধারণ শ্রমিকরাও জড়িয়ে পড়ে। ধীরেধীরে মাদকের এই সর্বনাশা কান্ড ব্যাপক বিস্তার লাভ করে।
তেলিয়াপাড়া চা বাগানের শ্রমিক সভাপতি খোকন জানান আমরা প্রথমে বহিরাগত লোকদের বাগানে প্রবেশে কড়াকড়ি করলেও কোন কাজ হয়নি। পরে বাগানের ব্যবস্থাপক ও সাধারণ শ্রমিক ও ছাত্রদের নিয়ে মাদক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাদক বিরোধী র্যালী ও সমাবেশ করছি।
এখন থেকে স্মৃতিসৌধ দর্শনের নামে মাদক সেবীদের নজর রাখা হচ্ছে। কোন বহিরাগত লোক মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হচ্ছে। এখন তেলিয়াপাড়া চা বাগানকে মাদক মুক্ত করতে শতাধিক যুবক সোচ্ছার হয়ে উঠেছে। এতে করে এখন মাদকের ছড়াছড়ি অনেকাংশে কমতে শুরু করেছে।
তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক এমদাদুর রহমান মিঠু বলেন মাদক তেলিয়াপাড়া চা বাগানের একটি বড় সমস্যা ছিল। ধীরে ধীরে অক্টোপাসের মত মাদক যুব সমাজকে গিলে খাচিছল। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য পুলিশের সহযোগিতায় এখন চা বাগানে যুবকদের নিয়ে মাদক বিরোধী সংগঠন করা হয়েছে। এখন সন্দেহভাজন কোন মোটর সাইকেল আরোহী যুবক বাগানে প্রবেশ করলে তার গতিবিধি নজর দারী করা হচ্ছে। ন্যূনতম মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার আলামত পাওয়া গেলে তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে চা বাগানের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী খোকন সাওতাল, খোকন বাগতি ও সুধির পানকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে এখন চা বাগানে এখন মাদক ব্যবসায়ীকে দেখা যায় না।
মাধবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম আজমিরুজ্জামান বলেন, মাধবপুরকে মাদকমুক্ত করতে পুলিশ বেশ কয়েকজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে মাদক সহ গ্রেফতার করে হাজতে পাঠিয়েছে। তেলিয়াপাড়া চা বাগানকে মাদকমুক্ত করতে ম্যানেজার, শ্রমিক ও ছাত্রদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এখন পুলিশের পাশাপাশি বাগানে তারাও মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। আশাকরি পুরো মাধবপুর অচিরেই মাদক মুক্ত হবে।