• Youtube
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

পাঞ্জাবি-টুপি পরিধান করার অপরাধে সিলেটে দুই শিক্ষককে বরখাস্ত!

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ২ এপ্রিল, ২০২১

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ২ জন শিক্ষককে পাঞ্জাবি পরিধান করে ক্লাশ নেয়ার অপরাধে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখান করে কলেজের বর্তমান ও সাবেক ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উটেছে।

এই ইস্যু নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের একজন সাবেক শিক্ষার্থীর করা ফেসবুক পোস্ট পাঠকদের উদ্দেশ্যে হুবুহু তোলে ধরা হলঃ-

একজন এক্স-জেসিপিএসসিয়ান হিসেবে, যে খুব বেশিদিন হয়নি জেসিপিএসসি ছেড়েছে, আমি মনে করি সাম্প্রতিক যেই ঘটনাটা মো. আব্দুল হালিম স্যার এবং জানামতে আরেকজন শিক্ষকের সাথে ঘটেছে, তা নিয়ে কথা বলা আমার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পরে। আমি চেষ্টা করব প্রশাসনের সিদ্ধান্ত কতটা ভুল এবং অন্যায় তা ব্যাখ্যা করতে।
হালিম স্যার জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের সিনিওর লেকচারার ছিলেন। কিছু সুত্রমতে, উনাকে জেসিপিএসসির চাকরি থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয় কারণ তিনি জেসিপিএসসি প্রশাসন এর আরোপ করা নতুন ড্রেসকোড মেনে নেননি যেইটা উনাকে পাঞ্জাবি ও টুপি পড়তে নিষেধ করতো, জেসিপিএসসির শিক্ষক থাকাকালীন যা তিনি গত ১৭ বছরের চাকরি জীবনে পরে আসছেন । নতুন ড্রেসকোডটি সকল পুরুষ শিক্ষককে বাধ্য করে ফর্মাল শার্ট-প্যান্ট পরতে। আমি ব্যবসায় শিক্ষা শাখার একজন ছাত্র ছিলাম এবং আমি জেসিপিএসসি তে ৭ বছর ধরে পড়েছি। হালিম স্যার এর কোনো ক্লাস না পেলেও, প্রিফেক্ট হওয়ার সুবাদে শৃংখলাজনীত দায়িত্ব পালনের সময় হালিম স্যার কে খুব কাছে থেকে দেখেছি আমি। উনার অধীনে কাজ করার আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো কিছুদিন গেইট ডিউটির সময়। হালিম স্যার ছিলেন ‘ডিসিপ্লিন’ শব্দটার মানবরুপ। উনার যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগতো তা হচ্ছে উনার কঠোরতা। যার জন্যে আমরা সবাই উনাকে ‘বাঘ’ বলে ডাকতাম। আমি কখনো তুলনা করতে চাইনাই কিন্তু আমি সৎ ভাবে বলতে পারি যে উনি আমার দেখা জেসিপিএসসির গুটিকয়েক ক্লাসি শিক্ষকদের মধ্যে একজন। উনার কথা বলার স্টাইল, যেইভাবে উনি কলেজের ডিসিপ্লিন মেইন্টেইন করতেন তা ছিলো প্রশংসনীয় এবং আমি আমার সাইন্সের বন্ধুদের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি, তিনি একজন ভালো লেকচারারও ছিলেন। প্রশাসন উনার সাথে যে ব্যবহারটা করেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা অন্যায়। একজন মানুষ হিসাবে, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি প্রত্যেক মানুষের পছন্দের স্বাধীনতা (Freedom of Choice) থাকা উচিত যতক্ষন না তা অন্য কাউকে আঘাত করছে বা তা আপত্তিকর। যেই নীতি সবাইকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী পোষাক পরার স্বাধীনতা দেয়, আমি সেই নীতির সমর্থক। এই বিষয়ে কারো, কোন মাথা ব্যাথা হওয়া উচিত না যতক্ষন তা সম্মান এবং শৃংখলার সহিত হচ্ছে। যেই পোশাক হালিম স্যার বেছে নিয়েছিলেন পরার জন্যে তা কাউকে আঘাত করেনি এবং তার শিক্ষকতার কাজের মাঝে বাধা হয়েও আসেনি। তাই উনাকে তার পোশাক এর জন্যে চাকরি থেকে চলে যেতে বাধ্য করা অবান্তর।
এরপরে আসে আইনগত বৈধতা এবং শিক্ষকরা কে, কি পরবে, কি পরবে না তা ঠিক করতে জেসিপিএসসি প্রশাসনের ক্ষমতার প্রাসঙ্গিকতা। আমি হালকা রিসার্চ করে কিছু জিনিস পেয়েছি। প্রথমত, আমাদের শিক্ষকগণ সম্ভবত ‘বাংলাদেশ সারভিস রুলস’ এর অন্তর্ভুক্ত নন। যদি অন্তর্ভুক্ত হয়েও থাকেন, তাহলে কোনো নির্দিষ্ট পোশাক পরতে বলা বা কোনো নির্দিষ্ট স্টাইল মানতে বলা বেআইনি এবং বাংলাদেশের সব সার্ভিস রুলসের পরিপন্থী। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ড্রেসকোড আরোপ করা সংবিধানবিরোধী কাজ। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৯ বাংলাদেশের নাগরিকদের চিন্তা, বিবেক এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার (Freedom of Expression) নিশ্চয়তা প্রদান করে। বাংলাদেশের হাইকোর্টের মতে, মত প্রকাশ এর স্বাধীনতা লেখালেখি, ছবি থেকে শুরু করে কোন কাজ করা, কীভাবে জীবনযাপন করবে কেউ , যেমনঃ তার আচরণ এবং পোশাকের ধরণ সহ বিভিন্ন কিছুর হতে পারে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং কনভেনশনের অধীনেও বাংলাদেশের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেমন International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR) এর একটি পক্ষ হিসাবে বাংলাদেশ অঙ্গীকার করেছে যে বাংলাদেশ গােপনীয়তার অধিকারে হস্তক্ষেপ রুখে দিবে (অনুচ্ছেদ ১৭) এবং মত প্রকাশের অধিকার রক্ষা করবে (অনুচ্ছেদ ১৯)। এই অধিকারগুলাে সম্মান ও রক্ষা করতে বাংলাদেশ বাধ্য এবং এমনভাবে করতে হবে যাতে কোনাে বৈষম্য না হয় কারাে প্রতি। International Covenant on Economic, Social and Cultural Rights (ICESCR) এর অনুচ্ছেদ ৭ সবাইকে কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত ও অনুকূল অবস্থার সুবিধা গ্রহনের অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। হাইকোর্টের মতে, কর্মক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারপ্রসূত এবং চাকরি করতে বাধা দেয় এমন ড্রেসকোড আরোপ উক্ত অনুচ্ছেদের বিধি বহির্ভূত এবং আইনত অপরাধ (“২০১০ বিচারঃ এডভোকেট সালাহউদ্দিন দোলন বনাম বাংলাদেশ” দেখুন)। তাই, জেসিপিএসসি প্রশাসন যা করেছে, তা সংবিধানবিরোধী এবং বেআইনি। যদি কোনো মামলা করা হয় প্রশাসন এর নামে, তাহলে প্রশাসন খুবই ঝামেলায় পরতো। আমি অবাক হয়েছিলাম যখন দেখলাম প্রতিষ্ঠানের প্রধান, যিনি আমার বিশ্বাসমতে অনেক উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার কথা, তিনি এইসব আইনগত বিষয় জানতেন না। উনার এইসব বিষয়ে জানা উচিত ছিলো এইরকম হাস্যকর ড্রেসকোড বাস্তবায়ন এর আগে। কারণ, আমি কোনো কারণ দেখিনা যার জন্যে জেসিপিএসসি একটা নির্দিষ্ট পোষাক পরতে বাধ্য করবে এবং আরেকটি পোষাক পরতে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে। যদি না অবশ্যই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো এক লে. কর্নেল, যাকে প্রতিষ্ঠান প্রধান করা হয়েছে, তিনি সকালে উঠে সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি এক পাবলিক প্রতিষ্ঠানকে (যার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক সিভিল শুধু উনি ছাড়া) মিলিটারি নিয়মে চালাবেন। আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি। সবাই নয়, কিন্তু অধিকাংশ আর্মি অফিসারই যখন নতুন প্রিন্সিপাল হয়ে আসেন ক্যান্ট. পাবলিকগুলোতে, তখন তারা তাদের ব্যবস্থাপনা চালান কিছুটা স্বৈরতান্ত্রিকভাবে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। Download Melbet app for online sports betting and casino games.

 

সেনাবাহিনীর ভিতরে হয়তো এই সুযোগগুলি পাননা তাই। এগুলা নতুন কিছু না অবশ্য। আমি তাদের ম্যানেজমেন্ট স্কিল জাজ করার কেউ না কিন্তু তাও বলতে হচ্ছে যে আমি এইসব “চৌকশ” অফিসারদের থেকে আরো ভালো কিছু আশা করি। যদি অর্ডার উপরের থেকেও এসে থাকে প্রিন্সিপাল এর কাছে, তাও আমি আমার বক্তব্য থেকে নড়বো না। ড্রেসকোড আরোপের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আমাদের শিক্ষকদের উপরে, তা অন্যায়, বৈষম্যমূলক এবং বেআইনি। এটা লজ্জাজনক।
সকল জেসিপিএসসিয়ান দের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে, তোমরা ভুলে যেয়না যে “জেসিপিএসসি” তারা না যারা জেসিপিএসসি চালায়। “জেসিপিএসসি” আমরা। শিক্ষক আর শিক্ষার্থীরা হচ্ছে “জেসিপিএসসি”। আমাদের ছাড়া জেসিপিএসসি কিছুই না। তাই একমুহূর্তের জন্যেও ভাইবো না যে এই বিষয়টা খুবই নগন্য যে তোমার চিন্তা করা লাগবে না এইটা নিয়ে। ভয় পাবা না কথা বলতে একদমই। এইটা ছিলো আমাদের শিক্ষকদের মানবাধিকার হরন আর বাংলাদেশের সংবিধানবিরোধী কাজ। তুমি যদি মনে কর তুমি কিছুই করতে পারবা না, তুমি ভুল। বিশ্বাস কর, সোশ্যাল মিডিয়াতে কথা বইলাই অনেক অসাধ্যসাধন করসে বাংলাদেশ। কথা বলো। প্রতিবাদ কর এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তোমরা এখন আমাদের শিক্ষকদের কন্ঠ। উনারা এখন কিছু বলতে পারবেন না চাইলেও কারণ উনারা চাকরি করেন। চাকরি উনাদের পরিবারকে খাওয়ায় যেইটা জেসিপিএসসি ছিনায় নিতে পারে। উনাদের হয়ে আওয়াজ তুলো।
EDIT: জেসিপিএসসির অভ্যন্তরীণ এক বিশ্বস্ত সুত্র থেকে জানতে পারলাম যে প্রাক্তন অধ্যক্ষ এর সময় থেকে অনেক দিন ধরেই কয়েকজন স্যারের ড্রেসকোড নিয়ে ঝামেলা হয়ে আসছে। জেসিপিএসসির নিজস্ব কন্সটিটিউশনে নাকি ড্রেসকোড এর কথা উল্লেখ আছে এবং সেখানে নাকি লেখা আছে শুধুমাত্র ধর্মশিক্ষার শিক্ষকগণ ধর্মীয় পোশাক পরিধান করতে পারবেন। বাকি সকল শিক্ষকগণ ফরমাল ড্রেস পরতে বাধ্য। আমি প্রশ্ন করলাম যে তাহলে এতদিন ধরে কেনো বিষয়টা উঠানো হয়নি। এই প্রশ্নের উত্তরে জানতে পারলাম যে অন্য কোন প্রিন্সিপালই কখনো এই বিষয়টায় অবজেকশন তুলেননি আগে। তাই স্যাররা এতদিন ধরে এরকম পোষাকেই দায়ীত্ব পালন করে এসেছেন। কিন্তু যেই প্রিন্সিপালকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, শুধু তিনিই এই বিষয় নিয়ে ঝামেলা করেছেন।
পুরো বিষয়টাকে আমার হাস্যকর মনে হয়েছে। কারণ ধর্ম শিক্ষকগণই একমাত্র ধর্ম পালন করবেন এমন কোনো কথা নেই। ধর্ম শিক্ষক না হলে তিনি ধর্ম পালন করবেন না/করতে পারবেন না এমনটা ভাবা বোকামি ও বাচ্চামী। নিজের ক্ষমতাবলে প্রতিষ্ঠানের কন্সটিউশন সংশোধন (amend) করা যেতে পারতো। অথবা নিয়ম-নীতিকে আগের অন্যান্য প্রিন্সিপালদের এর মতোন শিথিল করতে পারতেন কেইস বাই কেইস ব্যাসিস এ। কিন্তু তা না করে শিক্ষকদের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা, বেতন বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি আমার কাছে ‘হয়রানি’ ছাড়া কিছুই না।

পোস্ট লিংকঃ- ক্লিক করুন এখানে… 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ