বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
টিপু সুলতান জাহাঙ্গীর, বাহুবল (হবিগঞ্জ): হবিগঞ্জের বাহুবলে পেনা মাছ অবমুক্তকরণে মৎস্য কর্মকর্তা দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ায় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ কর্মসূচী বয়কট করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান।
এ নিয়ে শুক্রবার দুপুরে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে পুরো উপজেলায় তোলপাড় সৃষ্ঠি হয়। উপজেলা প্রশাসন রাতভর মিটিং করেছেন। সর্বশেষ শুক্রবার দিবাগত ভোর রাত ৪টায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে ফেসবুকের স্ট্যাটাস কেটে দেয়ার অনুরোধ করা হয়।
উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান তার ফেসবুক আইডিতে যা লিখেছেন তা করাঙ্গীনিউজ গ্রাহকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল “মাছের পোনা অবমুক্ত প্রসঙ্গে দ্বিমত! আজ বাহুবল উপজেলায় এক লক্ষ টাকার মাছের পোনা ৩৩৪ কেজি জলাশয়ে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু মৎস্য কর্মকর্তা আত্নসাত করার পায়তারা করেন। পরে এম.পি সাহেব কে সাথে নিয়া দীননাথ সরকারী মডেল হাই স্কুলের পুকুরে ৫ কেজি, বাহুবল মাদ্রাসার পুকুরে ৫ কেজি ও করাঙ্গী নদীতে ৫ কেজি পোনামাছ অবমুক্ত করেন মাত্র। এবং কালাপুর আশ্রায়ন কেন্দ্রের পুকুরে মাছের পোনা ছাড়তে গেলে ৫০ কেজি বলেন, সেখানে আমার প্রতিনিধি আগে থেকে ছিল সে চ্যালেঞ্জ করলে উজন করা হয় তখন ১৫ কেজি পোনা পাওয়া যায়। মোট ৩০ কেজি পোনা মাছ সমস্ত উপজেলায় অবমুক্ত করা হয়।এমপি সাহেবকে সাথে নিয়ে বাকী সব পোনা মাছ অবমুক্ত করার কথা। কিন্তু তিনি যাননি এই সুযোগে মৎস্য কর্মকর্তা আর কোথাও মাছের পোনা অবমুক্ত করে নাই। এমনকি কালাপুরে আমার প্রতিনিধি ছারা সরকারী কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধি ছিলনা। এবং গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে কোন পোনা অবমুক্ত করা হয়নি। ৩০৪ কেজি পোনা মাছ মৎস কর্মকর্তা আত্নসাত করেন”।
ফেসবুক স্ট্যাটাস ও বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলায় পোনা অবমুক্তকরণের জন্য বরাদ্ধ আসে এক লক্ষ টাকা। ওই এক লক্ষ টাকায় ৩৩৪ কেজি পোনা মাছ অবমুক্ত করা যায়। বরাদ্ধ পাওয়ার পরই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নামমাত্র পোনা মাছ অবমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহন করেন। এ বিষয়টি তিনি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জানতে পারেন। মৎস্য কর্মকর্তাকে সতর্ক করার জন্য গত বৃহস্পতিবার উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সভায় আলোচনাও করেন তিনি।
শুক্রবার সকালে পোনা মাছ অবমুক্ত করার পূর্বেই তিনি জানতে পারেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরাদ্ধে যে পরিমান পোনা মাছ অবমুক্ত করার কথা তার চেয়ে কম পোনা মাছ এনছেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়টির আঁচ করতে পেরে তিনি পোনা মাছ অবমুক্তকরন অনুষ্ঠান বয়কট করেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান জানান এমপিকে সাথে নিয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীননাথ সরকারী মডেল স্কুলে ৫ কেজি, হামিনগর মাদ্রাসায় ৫ কেজি ও করাঙ্গী নদীতে কেজি পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালাপুর অশ্রায়ন কেন্দ্রের পুকুরে ৫০ কেজি পোনা মাছ অবমুক্ত করতে গেলে সেখানে থাকা উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিদের সন্দেহ হয়।
পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি পোনা মাছগুলি ওজন করে ১৫ কেজি দেখতে পায়। কালাপুর আশ্রায়ন কেন্দ্রের পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করার সময় উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কোন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন না।
তিনিটি স্থানে এমপি মাছের পোনা অবমুক্ত করে অন্য কোথাও যাননি। এ সুযোগে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সারা উপজেলায় ৩০ কেজি মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। এ ছাড়াও গুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরে মাছের পোনা অবমুক্ত করার কথা থাকলেও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাওরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেননি।
উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে মৎস্য কর্মকর্তা ৩০৪ কেজি পোনা মাছের টাকা আত্নসাৎ করেছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানান।
উপজেলা চেয়ারমান ফেসবুকের স্ট্যাটাস শেষ পর্যন্ত কেটে দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত রাতে (শুক্রবার দিবাগত ভোররাত) ৪টায় ফোন দিয়ে ইউএনও/ওসি সাহেব আমার বাসায় আসতে চেয়েছিলেন। আমি তাদের আসতে বারন করলে তারা আমাকে ফেসবুকের স্ট্যাটাস কাটতে অনুরোধ করেন। পরে আমি স্ট্যাটাস কেটে দেই। এর পরে প্রশাসন থেকে কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেনি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিসবাহ উদ্দিন আফজাল বলেন, নীতিমালা অনুয়ায়ী ৩০৪ কেজি পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে, এখানে কোন দুর্নীতি হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা হক বলেন, উপজেলায় মাছের পোনা নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি। যেখানে ৫০ কেজির কথা বলা হয়েছে সেখানে আমাদের রেজুলেশনে ২০ কেজি লেখা ছিল। তখন কিছু পোনা মাছ কম ছিল পরে আমরা পুরন করে ছেড়েছি।