মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৫:১১ পূর্বাহ্ন
করাঙ্গীনিউজ:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘ এই পথচলায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠনটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য হারাচ্ছে সংগঠনটি। অনেক অর্জন ম্লান হচ্ছে নানা বিতর্কে জড়িয়ে। এছাড়া সাংগঠনিকভাবেও বেহাল। গঠনতন্ত্রে দুই বছরের বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রায় সাড়ে তিন বছর পরও কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়নি। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ দেশের বেশির ভাগ ইউনিট কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। কিছু নতুন কমিটি দেওয়া হলেও সেগুলো হয়েছে প্রেস রিলিজ দিয়ে। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা থাকলেও সম্মেলনের ঐতিহ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে দেশের বৃহৎ এই ছাত্র সংগঠনটি।
এছাড়া বিপরীত আদর্শের নেতাকর্মীদের অনুপ্রবেশ, স্বজনপ্রীতি, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডসহ নানা কারণে বেড়েছে বিশৃঙ্খলা, হতাশা। করোনাকালে মানবিক কর্মকাণ্ড প্রশংসিত হলেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। নারী কেলেঙ্কারি, ইয়াবা সিন্ডিকেটসহ নানা অপরাধে শিরোনাম হচ্ছে ছাত্রলীগ। তবে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের দাবি-করোনার কারণে মানবিক কাজে ব্যস্ত থাকায় সংগঠন গোছানোর কাজ তারা সেভাবে করতে পারেননি। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর এই কাজ শুরু করেছেন তারা।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জন্মলগ্ন থেকে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়ও সারা দেশের নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রলীগের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য সমুন্নত রেখেই কাজ করে যাচ্ছে। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অঙ্গীকার হচ্ছে-গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মের আলোকবর্তিকা নিয়ে কাজ করে যাওয়া।
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা আমাদের ২৪-২৫টির মতো জেলা ইউনিটের কমিটি দিয়েছি। এছাড়া কলেজ ও মেডিকেল ইউনিট মিলিয়ে ৩৫টির মতো হয়েছে। এর মধ্যে সম্মেলন করে কমিটি হয়েছে রাজশাহী মহানগর ও টাঙ্গাইলে। সিলেট জেলা ও মহানগরে কমিটি ছিল না। সেখানে সম্মেলন হয়নি, কর্মিসভা করেছি।
১৯৪৮ সালের আজকের দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপমহাদেশের বৃহৎ এ ছাত্রসংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছর রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে নামেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন ও এগারো দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী এ সংগঠনের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয় ও গৌরবোজ্জ্বল।
২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর দুই মাস পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই গঠিত হয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। সে হিসাবে দুই বছর মেয়াদি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই। এর আগে ২৯তম সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। তবে এক বছর গড়াতেই অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে শোভন-রাব্বানীকে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অপসারণ করা হয়। শোভন-রাব্বানীকে অপসারণের পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এক নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে সভাপতি ও এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কয়েক মাস ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেও ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তাদের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে করোনা মহামারি ও বন্যাসহ বিভিন্ন সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়ালেও সাংগঠনিক কার্যক্রম গোছাতে পারেননি নতুন নেতারা।
ছাত্রলীগের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলা নতুন কমিটি হয়েছে মোট ২৫টি। এর মধ্যে ২০১৯ সালে হয়েছে ১টি, ২০২০ সালে ৫টি এবং ২০২১ সালে ১৫টি নতুন কমিটি ঘোষিত হয়েছে। জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে মোট ১৪টি। এর মধ্যে ২০১৯ সালে চারটি, ২০২০ সালে ৬টি এবং ২০২১ সালে ৪টি কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালে সম্মিলিত মেডিকেল কলেজ শাখার নতুন কমিটি ঘোষিত হয়। একই বছর ৬টি মেডিকেল শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০২১ সালে আরও ৬টি মেডিকেলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ ইতোমধ্যে সম্মিলিত মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ এবং মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের ১২টি ইউনিটসহ মোট ১৩টি কমিটি ঘোষিত হয়েছে। তবে ঢাকায় বসে ঘোষণা করা এসব কমিটি নিয়ে বেশির ভাগ জায়গায় ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, উল্লিখিত ইউনিট কমিটির প্রায় সবই হয়েছে প্রেস রিলিজ দিয়ে। সর্বশেষ সম্মেলন ছাড়া প্রেস রিলিজ দিয়ে শনিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। সেই কমিটি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। শুধু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নয়, মহানগর ও জেলা শাখাগুলোও তাদের অধীনস্থ থানা, পৌর বা ইউনিয়ন কমিটি দিচ্ছে প্রেস রিলিজ দিয়ে। রোববার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ তাদের অন্তর্গত বংশাল, লালবাগ, রমনা, শ্যামপুর, খিলগাঁওসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ থানা কমিটি দিয়েছে সম্মেলন ছাড়াই প্রেস রিলিজ দিয়ে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসাইন বলেন, দুই বছরে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অর্জন হচ্ছে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে ব্যাপক হারে বিতর্কিত কমিটি দেওয়া। যদিও করোনার মধ্যে ছাত্রলীগের মানবিক কার্যক্রম ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু নিয়মিত কমিটি না হওয়া, সঠিক সময়ে দায়িত্ব বণ্টন না করাসহ বিভিন্ন কারণে সংগঠনের মধ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।