শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের দিনে আমার আইভি চাচির কথাই বেশি মনে হচ্ছে। আর একটা অবাক কাণ্ড আপনারা হয়তো জানেন না, তাঁকে যখন সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয় আমরা ঠিক জানি না কখন কোন মুহূর্তে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা তাঁর কাছে ছিল। সে সময় তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাঁকে দেখতে যাবেন বলে তাঁর ছেলেমেয়েরা যারা বেডের কাছে ছিল, তাদের একটা কামরার মধ্যে নিয়ে তালা মেরে রাখে। প্রায় তিন–চার ঘণ্টা নাজমুল হাসান পাপন, বোন তানিয়া, ময়না—এদের সবাইকে একটা রুমে তালা দিয়ে রেখে তার পর খালেদা জিয়া যান আইভি রহমানকে দেখতে। আর খালেদা জিয়া যখন দেখে ফিরে আসেন, এর পরই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ কথাটা অনেকেরই জানা নেই, আমি এটা জানিয়ে রাখলাম যে কত বড় নৃশংসতা এরা করতে পারে!’
গ্রেনেড হামলার ওই ভয়াবহ ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, শুধু হত্যার চেষ্টাই না, হত্যার পর লাশ নিয়েও তারা যে কর্মকাণ্ড করেছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মারা যাওয়ার পর অনেকের লাশ তারা দিতে চায়নি। লাশ আত্মীয়স্বজনের কাছে তারা দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে দলের সমর্থক এবং যাঁরা জীবিত, তাঁরা যেহেতু সাহায্য করতে যান এবং সারা রাত তাঁদের চেষ্টার পর একে একে সেই লাশগুলো হস্তান্তর করে। তারা লাশটা পর্যন্ত দিতে চায়নি। পারলে লাশটা গুম করে ফেলত—এই ছিল অবস্থা।
হামলায় আহত ব্যক্তিদের দেশে–বিদেশে চিকৎসাসহ তাঁদের সুবিধা–অসুবিধায় পাশে দাঁড়িয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁদের অনেকেই আজ আর নেই, মারা গেছেন। অনেকেই পঙ্গু হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আহত ব্যক্তিদের আমরা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে সহায়তা দিয়েছি এবং সে সময় একটা আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে যে ফান্ড এসেছে, তা থেকে চিকিৎসাধীন প্রত্যেককে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি এবং এখনো আমরা দিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আহত যাঁদের চিকিৎসার প্রয়োজন, তাঁদের সহায়তা দিচ্ছি। মাসোয়ারা দিচ্ছি, তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, বিয়েশাদি যত রকমের সহযোগিতা দরকার, আমি এখনো তা করে যাচ্ছি। যাঁদের খুব খারাপ অবস্থা ছিল, আর্থিকভাবে তাঁদের সাহায্য এখনো অব্যাহত আছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানসহ সবার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে এক ডজনের বেশি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এ হামলায় শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর শ্রবণেন্দ্রীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত এবং অন্তত ৫০০ নেতা-কর্মী, পথচারী ও সাংবাদিক আহত হন।