মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
মো: জসিম উদ্দিন:
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের প্রতিটি খাতেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে কৃষি অফিসটাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করছেন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার । কৃষকদের জন্য ধান কাটার মেশিন, সয়াবিন, ভুট্টা ও বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি চাষের যন্ত্রপাতি বরাদ্দ এনে তা প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার পছন্দের লোক দিয়ে অন্যদের নিকট বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ট্রেনিং, প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর নামে কৃষকদের এনে নামমাত্র নাস্তা ও সামান্য নগদ টাকা ধরিয়ে দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে বিদায় করা হয়। কৃষি অফিসটা তিনি দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করছেন এ কর্মকর্তা।
অভিযোগ উঠেছে, কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, প্রদর্শনী, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন খাতের বরাদ্দের সিংহভাগ লুটপাট হচ্ছে। তাঁরা কৃষকদের নিয়ে একটি ফসলের মাঠ দিবসের অনুষ্ঠান করে ব্যানার টাঙিয়ে ছবি তুলে রেখেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। এ ছাড়া প্রতিটি বরাদ্দের কলাম ফাঁকা রেখেই স্টক-রেজিস্টারে নেওয়া হয় কৃষকদের স্বাক্ষর ও টিপসই।
এসব অভিযোগের সত্যতার খোঁজে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রদর্শনীতে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকদের জন্য বরাদ্দের চার ভাগের তিন ভাগই চলে যাচ্ছে কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদারের পকেটে। সরকারি বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশও কৃষকরা পাচ্ছেনা। অফিসের যন্ত্রপাতি (মেশিন) থেকে শুরু করে প্রতিটি খাত থেকে কৃষি কর্মকর্তার বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাস্তা ও খাওয়ার দেওয়া হচ্ছেনা বলেও জানান অন্তত ১৫ জন কৃষক।
বেশির ভাগ কৃষকই জানেন না, তাঁদের জন্য সরকার কি পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে এবং কৃষকরা পাচ্ছেন কতটুকু। তাঁরা বলছেন, আমরা তো এত কিছু জানিও না, আর বুঝিও না। কৃষি অফিসে বরাদ্দের পরিমাণ জানতে চাইলে পরে আর কিছুই দেয় না। উল্টো তার নাম কেটে দেওয়ার হুমকি ধমকিও দেন এ কর্মকর্তা। এতে কৃষকরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।
কৃষি অফিস বলছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ধান, সবজি, সরিষা, পুষ্টি বাগান সহ বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে, এবং কৃষকদের সব বরাদ্দ পূর্ণভাবে বণ্টন করা হয়েছে। কিন্তু নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি সূত্র বলছে, উন্নত মানের ধান, গম, পাট ও ভুট্টার বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ জন কৃষককে ৫ একরের একটি করে প্রদর্শনী প্লট দেওয়ার কথা। কোন গ্রুপে ১৫ হাজার আবার কোন গ্রুপে ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না। হেক্টর-প্রতি কৃষকের জন্য যে পরিমাণ বীজ, সার, কীটনাশক,নগদ টাকাসহ যেসব উপকরণ দেওয়ার কথা, তাও দেওয়া হয়েছে নামমাত্র।
এএসসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে রয়েছে কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। প্রতিটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন ৩০ জন কৃষক। ওই প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী কৃষকের জন্য খাবার বাবদ বরাদ্দ ৪০০ টাকা এবং ব্যাগ বাবদ ৬৫০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ১০০ টাকা দামের ১ প্যাকেট বিরিয়ানি আর ১০০ থেকে ১৫০ টাকার একটি ব্যাগ। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাস্তা ও খাওয়ার দেওয়া হচ্ছেনা।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নিকট কৃষক ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দের তালিকা চাইলে তিনি আজ নয় কাল,এমন তালবাহানা করে তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ প্রতিবেদক কাগজপত্রের জন্য কৃষি অফিস অন্তত তিনবার গিয়ে তার কাছ থেকে এসব তথ্য নিতে পারেননি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে,চলতি বছরে বাহুবল উপজেলায় ধান এবং ভুট্টা কাটার মেশিন ৮ টি,কম্বাইন হারভেস্টার ২ টি,রিপার ৪ টি,রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ওয়াকিং টাইপ ২ টি ও পাওয়ার স্প্রয়ার ১ টি বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাহুবল উপজেলায় ভুট্টা চাষ না হলেও এ কর্মকর্তা লুটপাটের উদ্দেশ্যে ধান কাটার মেশিন বাদ দিয়ে ভুট্টা কাটার মেশিনের চাহিদা প্রেরণ করেন। আর সেই বরাদ্দকৃত মেশিনগুলো প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার অনুগত লোকজনের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে ফটোসেশান করে ওই মেশিন অন্যদের নিকট নামেমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। ৪ টি রিপার পেলেও ওইগুলো তার পছন্দের এক দালালের মাধ্যমে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ উঠে।
বাহুবল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের নামে কৃষি যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি জিনিসপত্র, মেইজ শেলার মেশিন বরাদ্দ দেখানো হলেও কৃষকরা এর কিছুই পান না।
পুষ্টি বাগানের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে ১৪৫ জন কৃষককে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতি কৃষককে ৫টি গাছের চারা,১০০ টাকার বীজ, ও ২০০ টাকার সার দিয়ে বাকি টাকা সম্পূর্ণ তার পকেটে ডুকান বলে অভিযোগ করেন অনেক কৃষক।
এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় বাগান পরিচর্যার জন্য শতাধিক কৃষককে ট্রেনিং দেওয়া হয়। এতে প্রত্যেক কৃষকের জন্য ১০ হাজার ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি কর্মকর্তা সাদা-কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ১ হাজার ক টাকা করে ধরিয়ে দেন। এ নিয়ে কৃষকদের সাথে কর্মকর্তার বাকবিতণ্ডাও হয়েছেন বলে তিনজন কৃষক এ প্রতিবেদকে নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়াও এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় কৃষক ট্রেনিংয়ের নামে ২০ টাকার নাস্তা,১০০ টাকার দুপুরের খাওয়া ও নগদে ১০০ টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ভাবেই চলছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি।
বড়ইউড়ি গ্রামের কৃষক মোঃ ইমন মিয়া জানান, আমার বাবা মৃত দুদা মিয়ার নামে কৃষি কার্ড রয়েছে। আমরা প্রকৃত কৃষক। আমার বাবা প্রায় ৮ বছর হয়েছে মৃত্যু বরণ করেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমরা কিছুই পাইনি। আমি অসংখ্য দিন দেখা করেছি। আমাকে বিভিন্ন সময় দেই দি দিচ্ছি বলে কৃষি অফিস থেকে শুধু আশ্বাসই দিতেছেন। গত ২ মাস আগে কৃষি অফিসের একজন মাঠ পরিদর্শক আমার বাড়িতে গিয়ে কৃষি ক্ষেত পরিদর্শন করে আমাকে একটি পুষ্টি বাগান দেওয়ার বলে আসছিল। আমার কাছে থেকে ভোটার আইডি কার্ড, ছবি নেওয়া হয়েছে। আমাকে ৩ দিন কৃষি অফিসে ডেকে নেওয়া হয়েছে এবং মাঠ পরিদর্শক নয়ন নামে একজন মাঠ পরিদর্শক বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। আজ ২ মাসের উপরে গত হয়েছে। কিন্তু এর কিছুই আমি পাইনি।
জাঙ্গালিয়া গ্রামের কৃষক সারুই মিয়া জানান, আমি প্রকৃত কৃষক। আমার কৃষি কার্ড আছে। আমার ধান বিভিন্ন ধরনের সবজি ও একটি কচুর ক্ষেত রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে একটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে একবার ১০০ টাকা ও কিছু বীজ পেয়েছেন তিনি।
বরাদ্দের বিষয়ে অফিসের এক সহকারী বলেন, কৃষক ও কৃষি যন্ত্রপাতি বরাদ্দের কোনো কপি আমাদের দেওয়া হয় না। অফিস থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়, আমরা ডায়েরিতে নোট করে নিই।
এ বিষয়ে বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদারের মোবাইল ফোনে জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করলে ও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রকল্পের উপ-পরিচালক নুুরে আলম সিদ্দিকীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে বাহুবল উপজেলা কৃষি অফিস
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের প্রতিটি খাতেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে কৃষি অফিসটাকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করছেন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার । কৃষকদের জন্য ধান কাটার মেশিন, সয়াবিন, ভুট্টা ও বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি চাষের যন্ত্রপাতি বরাদ্দ এনে তা প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার পছন্দের লোক দিয়ে অন্যদের নিকট বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ট্রেনিং, প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর নামে কৃষকদের এনে নামমাত্র নাস্তা ও সামান্য নগদ টাকা ধরিয়ে দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে বিদায় করা হয়। কৃষি অফিসটা তিনি দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করছেন এ কর্মকর্তা।
অভিযোগ উঠেছে, কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, প্রদর্শনী, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন খাতের বরাদ্দের সিংহভাগ লুটপাট হচ্ছে। তাঁরা কৃষকদের নিয়ে একটি ফসলের মাঠ দিবসের অনুষ্ঠান করে ব্যানার টাঙিয়ে ছবি তুলে রেখেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। এ ছাড়া প্রতিটি বরাদ্দের কলাম ফাঁকা রেখেই স্টক-রেজিস্টারে নেওয়া হয় কৃষকদের স্বাক্ষর ও টিপসই।
এসব অভিযোগের সত্যতার খোঁজে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রদর্শনীতে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকদের জন্য বরাদ্দের চার ভাগের তিন ভাগই চলে যাচ্ছে কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদারের পকেটে। সরকারি বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশও কৃষকরা পাচ্ছেনা। অফিসের যন্ত্রপাতি (মেশিন) থেকে শুরু করে প্রতিটি খাত থেকে কৃষি কর্মকর্তার বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাস্তা ও খাওয়ার দেওয়া হচ্ছেনা বলেও জানান অন্তত ১৫ জন কৃষক।
বেশির ভাগ কৃষকই জানেন না, তাঁদের জন্য সরকার কি পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে এবং কৃষকরা পাচ্ছেন কতটুকু। তাঁরা বলছেন, আমরা তো এত কিছু জানিও না, আর বুঝিও না। কৃষি অফিসে বরাদ্দের পরিমাণ জানতে চাইলে পরে আর কিছুই দেয় না। উল্টো তার নাম কেটে দেওয়ার হুমকি ধমকিও দেন এ কর্মকর্তা। এতে কৃষকরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।
কৃষি অফিস বলছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ধান, সবজি, সরিষা, পুষ্টি বাগান সহ বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে, এবং কৃষকদের সব বরাদ্দ পূর্ণভাবে বণ্টন করা হয়েছে। কিন্তু নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি সূত্র বলছে, উন্নত মানের ধান, গম, পাট ও ভুট্টার বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ জন কৃষককে ৫ একরের একটি করে প্রদর্শনী প্লট দেওয়ার কথা। কোন গ্রুপে ১৫ হাজার আবার কোন গ্রুপে ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না। হেক্টর-প্রতি কৃষকের জন্য যে পরিমাণ বীজ, সার, কীটনাশক,নগদ টাকাসহ যেসব উপকরণ দেওয়ার কথা, তাও দেওয়া হয়েছে নামমাত্র।
এএসসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে রয়েছে কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। প্রতিটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন ৩০ জন কৃষক। ওই প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী কৃষকের জন্য খাবার বাবদ বরাদ্দ ৪০০ টাকা এবং ব্যাগ বাবদ ৬৫০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ১০০ টাকা দামের ১ প্যাকেট বিরিয়ানি আর ১০০ থেকে ১৫০ টাকার একটি ব্যাগ। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাস্তা ও খাওয়ার দেওয়া হচ্ছেনা।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নিকট কৃষক ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দের তালিকা চাইলে তিনি আজ নয় কাল,এমন তালবাহানা করে তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ প্রতিবেদক কাগজপত্রের জন্য কৃষি অফিস অন্তত তিনবার গিয়ে তার কাছ থেকে এসব তথ্য নিতে পারেননি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে,চলতি বছরে বাহুবল উপজেলায় ধান এবং ভুট্টা কাটার মেশিন ৮ টি,কম্বাইন হারভেস্টার ২ টি,রিপার ৪ টি,রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ওয়াকিং টাইপ ২ টি ও পাওয়ার স্প্রয়ার ১ টি বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাহুবল উপজেলায় ভুট্টা চাষ না হলেও এ কর্মকর্তা লুটপাটের উদ্দেশ্যে ধান কাটার মেশিন বাদ দিয়ে ভুট্টা কাটার মেশিনের চাহিদা প্রেরণ করেন। আর সেই বরাদ্দকৃত মেশিনগুলো প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার অনুগত লোকজনের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে ফটোসেশান করে ওই মেশিন অন্যদের নিকট নামেমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। ৪ টি রিপার পেলেও ওইগুলো তার পছন্দের এক দালালের মাধ্যমে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ উঠে।
বাহুবল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের নামে কৃষি যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি জিনিসপত্র, মেইজ শেলার মেশিন বরাদ্দ দেখানো হলেও কৃষকরা এর কিছুই পান না।
পুষ্টি বাগানের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে ১৪৫ জন কৃষককে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতি কৃষককে ৫টি গাছের চারা,১০০ টাকার বীজ, ও ২০০ টাকার সার দিয়ে বাকি টাকা সম্পূর্ণ তার পকেটে ডুকান বলে অভিযোগ করেন অনেক কৃষক।
এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় বাগান পরিচর্যার জন্য শতাধিক কৃষককে ট্রেনিং দেওয়া হয়। এতে প্রত্যেক কৃষকের জন্য ১০ হাজার ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি কর্মকর্তা সাদা-কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ১ হাজার ক টাকা করে ধরিয়ে দেন। এ নিয়ে কৃষকদের সাথে কর্মকর্তার বাকবিতণ্ডাও হয়েছেন বলে তিনজন কৃষক এ প্রতিবেদকে নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়াও এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় কৃষক ট্রেনিংয়ের নামে ২০ টাকার নাস্তা,১০০ টাকার দুপুরের খাওয়া ও নগদে ১০০ টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ভাবেই চলছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি।
বড়ইউড়ি গ্রামের কৃষক মোঃ ইমন মিয়া জানান, আমার বাবা মৃত দুদা মিয়ার নামে কৃষি কার্ড রয়েছে। আমরা প্রকৃত কৃষক। আমার বাবা প্রায় ৮ বছর হয়েছে মৃত্যু বরণ করেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমরা কিছুই পাইনি। আমি অসংখ্য দিন দেখা করেছি। আমাকে বিভিন্ন সময় দেই দি দিচ্ছি বলে কৃষি অফিস থেকে শুধু আশ্বাসই দিতেছেন। গত ২ মাস আগে কৃষি অফিসের একজন মাঠ পরিদর্শক আমার বাড়িতে গিয়ে কৃষি ক্ষেত পরিদর্শন করে আমাকে একটি পুষ্টি বাগান দেওয়ার বলে আসছিল। আমার কাছে থেকে ভোটার আইডি কার্ড, ছবি নেওয়া হয়েছে। আমাকে ৩ দিন কৃষি অফিসে ডেকে নেওয়া হয়েছে এবং মাঠ পরিদর্শক নয়ন নামে একজন মাঠ পরিদর্শক বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। আজ ২ মাসের উপরে গত হয়েছে। কিন্তু এর কিছুই আমি পাইনি।
জাঙ্গালিয়া গ্রামের কৃষক সারুই মিয়া জানান, আমি প্রকৃত কৃষক। আমার কৃষি কার্ড আছে। আমার ধান বিভিন্ন ধরনের সবজি ও একটি কচুর ক্ষেত রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে একটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে একবার ১০০ টাকা ও কিছু বীজ পেয়েছেন তিনি।
বরাদ্দের বিষয়ে অফিসের এক সহকারী বলেন, কৃষক ও কৃষি যন্ত্রপাতি বরাদ্দের কোনো কপি আমাদের দেওয়া হয় না। অফিস থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়, আমরা ডায়েরিতে নোট করে নিই।
এ বিষয়ে বাহুবল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন এবিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রকল্পের উপ-পরিচালক নুুরে আলম সিদ্দিকীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।