বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন
শাহ মোস্তাফা কামাল,শায়েস্তাগঞ্জ থেকে:
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন এলাকায় শত কোটি টাকার মূল্যবান ভূ- সম্পত্তি বন্দোবস্তের নামে অবৈধ কাগজ সৃজন করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, শায়েস্তাগঞ্জ জংশন এলাকায় ৮৮৮দাগের প্রায় ১৩৩ শতাংশ জায়গা শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার দাবী করে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দায়ের করেন তৎকালিন মেয়র এমএফ আহমেদ অলি। শুনানীতে ৮৮৮ দাগের প্রায় ১৩৩ শতাংশ জায়গা শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মালিকানা বহাল রেখে পরবর্তী শুনানীর আগ পর্যন্ত স্থিতিবস্থা জারি করেন বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং শেখ মোঃ জাকির হোসেনের একটি বেঞ্চ।
এরপর থেকে জায়গাটি শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা ভোগ দখল করলেও সম্প্রতি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের তথ্য গোপন করে জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ভূয়া কাগজ সৃজন করে দোকান কোটা বরাদ্দের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। আর এ চক্রটির সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় ফুল মিয়া, শংকর দেবসহ আরও কয়েকজন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে বন্দোবস্তের নামে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর মার্কেটের প্রায় ৫০টি দোকান থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। তবে তাদের বন্দোবস্তের স্থায়ী কোন বৈধতা নেই। ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, মার্কেটের সামনের দোকান থেকে ৪ লাখ ২৫ হাজার এবং পেছনের দোকান কোটা থেকে ৩ লাখ ২৫ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে প্রতি দোকান থেকে।
অভিযুক্ত আব্দুল আউয়াল তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এ ধরনের কোন কাজের সাথে জড়িত নই, আমি এ ব্যাপারে কোন কিছু জানি না। শংকর দেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাদের কাছে বন্দোবস্তের কাগজ আছে, আমাদের কাগজ বৈধ। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী জানান, বিভিন্ন সময়ে ধাপে ধাপে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আজ এ বিষয় তো কাল অন্য বিষয়। এভাবেই দিনের পর দিন ইস্যু তৈরি করে আদায় করা হচ্ছে টাকা। বেকায়দায় পড়ে ব্যবসায়ীরাও টাকা দিচ্ছেন বাধ্য হয়ে। আব্দুল আউয়াল পুরো বিয়ষটা মনিটরিং করে তার তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে বন্দোবস্তের কাগজ তৈরি করেছেন। এর বিনিময়ে তিনি প্রতি দোকানদারের কাছ থেকে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা হারে মোট ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। তবে বন্দোবস্তের কাগজ ব্যবসায়ীদের নামে করার কথা থাকলেও কৌশলে তা শংকর, ফুল মিয়া, অলি মিয়া, আব্দুর রউফ, মর্তুজ আলীর নামে করা হয়েছে। তবে এ বন্দোবস্তের পুরো প্রক্রিয়াটাই ভুয়া।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এমএফ আহমেদ অলির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক আমার হব জানান, আমি খোঁজ নিয়েছি। তাদের কাছে যে কাগজ আছে তা ভুয়া। রেলওয়েতে এই কাগজের অফিসিয়াল কোন ডকুমেন্টস সংরক্ষিত নেই। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পর এ ধরনের কোন বন্দোবস্তের প্রশ্নই উঠে না। উচ্চ আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে পৌরসভার দায়ের করা রীট পিটিশনে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পর মূল ভবনের ১৬নং কোর্টে বিষয়টির প্রথম শুনানীর তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৪ জুন ২০১২ এবং পরে ১১ মার্চ ২০১২, ২৭ মার্চ ২০১৭, ২ এপ্রিল ২০১৭, ৩ এপ্রিল ২০১৭ এবং সর্বশেষ আজ ৩০ জুলাই এ ব্যাপারে বিজয় ৭১ ভবনের ৭নং কোর্টে শুনানীর কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে বিষয়টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও অবগতির জন্য দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি বাংলাদেশ রেলওয়ে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে ইমেইল বার্তার মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।