মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০১:১৩ অপরাহ্ন
বাহুবল (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার ও পরিষদের অন্যান্য সদস্য ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অসহযোগিতার কারণে এলাকার কাঙ্খিত উন্নয়ন ঘটাতে পারেননি। ২০১৯ সালের ১০ মার্চ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রকাশ্য বিরোধীতার কারণেই উন্নয়ন কর্মকান্ডে ভূমিকা রাখতে পারেননি।
পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মীসূচীর (এডিপি) আওতায় প্রাপ্ত বরাদ্দ ও বছরে বিভিন্ন সময়ে টিআর কাবিখার মাধ্যমে এলাকার রাস্তাঘাটের কিছু উন্নয়ন কাজ করেছেন। কিন্তু উপজেলাবাসীর জীবনমান উন্নয়নে এবং বড় কোন উন্নয়ন কর্মে নিজেকে ভূমিকায় আনতে পারেননি। তবে এডিপি বা টিআর কাবিখা বাস্তবায়নে প্রতি ক্ষেত্রেই সুবিধা নিয়ে পিআইসি প্রকল্প দিয়ে নিজের অনেকটা আখের গুছিয়েছেন। তৎকালীন সংসদ সদস্য শাহনওয়াজ গাজীর সাথেও দ্বন্ধে দ্বন্ধে পাঁচ বছর পার করে চলেছেন সৈয়দ খলিলুর রহমান।
নির্বাচিত হওয়ার প্রথম বছর এলাকায় বিচরণ করে মসজিদ মন্দির ও এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ঘটাবেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার আমলে উপজেলার কোথাও খুন খারাবি ঘটবে না দিয়েছিলেন প্রতিশ্রুতি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই হীতে বিপরীত। অনেক মসজিদ মাদ্রাসা ও মন্দির আছে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েও কোন বরাদ্দ দিতে পারেননি আজও। ফলে জনগণের কঠোর সমালোচনায় আছেন চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিল। ঘুষের টাকা নিয়ে ঠিকাদারদের সাথেও ঘটেছিল দ্বন্ধ মামলা মোকদ্দমা। এক পর্যায়ে তার পুত্র সৈয়দ ইসলাম মামলায় কারাভোগও করেন। সব লেনদেনের দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন পুত্র সৈয়দ ইসলাম। নলকূপ, টিআর, কাবিখা ইত্যাদি টাকা নিয়ে কাজ দিয়েছেন। কাবিখার কাজ নিয়ে শাহ রাসেল নামে এক ব্যক্তির সাথে তুমুল দ্বন্ধে জড়ান চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিল। অবশেষে নিজের ইজ্জত রক্ষায় আপোসে মিমাংসা হয়। নির্বাচিত হওয়ার প্রথম বছরেই প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি আড়াল করা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন।
ত্রিশ হাজার টাকা নিয়ে গভীর নলকূপ পছন্দের ব্যক্তির ঘরে ঘরে স্থাপন করার সুযোগ করে দিয়েছেন। স্ট্রিট লাইট রাস্তার পাশে বসানোর কথা থাকলেও উৎকোচের বিনিময়ে ব্যক্তির আঙ্গিনায় স্থাপন করে দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার ছেলে।
স্বাধীনতা দিবসে সরকার বিরোধী বক্তব্য রাখায় তিনি তোপের মুখে পড়েন এবং ক্ষমা চেয়ে পার পান। বিভিন্ন অভিযোগে চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগী কমিশনার ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্তও হয়। অনৈতিক সুবিধা না দেয়ায় হামলার সম্মুখীনও হয়েছেন।
নীহার রঞ্জন দেব নামে এক ব্যক্তিকে মাত্র চার হাজার টাকা উৎকোষ নিয়ে টিআর প্রকল্প দেয়ার কথা থাকলেও অবশেষে প্রকল্প না দেয়ায় নীহার দেব উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভয় উত্তাপন করলে বিষয়টি চেয়ারম্যান অস্বীকার করেন। কিন্তু অডিও বার্তা থাকায় অবশেষে আপোসের মাধ্যমে ঘুষের চার হাজার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন তিনি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমানের অনৈতিক কর্মকান্ডের দায়ে গত বছর উপজেলার ৭ ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন মহল মিলে তার বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রতিবাদ সভা মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদিকে বিগত ৫ বছরের আমলে তিনি যেসকল ইউএনও এসেছেন তাদের সকলের সাথেই দ্বন্ধে জড়িয়েছেন। ফলে উন্নয়ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারেননি। সামাজিক বিরোধ মিমাংসায়ও ভূমিকা রাখতে পারেননি। এর কারণ চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত প্রতিপালন করেননি ক্ষুব্ধ পক্ষ।
তবে চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান দাবী করে বলেন আমি জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক মহলের অসহযোগিতা থাকলেও আমি বড় বড় ব্রীজ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছি যা একান্ত আমার ভূমিকায়ই হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অতীতে আনিত সকল অভিযোগকে ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন বলে জানান।
স্থানীয়দের মতে, জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া চেয়ারম্যান ও তার পুত্র অল্প দিনে কিভাবে গাড়ি বাড়ির মালিক হন এই প্রশ্নই মানুষের মুখে মুখে।