• Youtube
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

অমর একুশে আজ

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

করাঙ্গী নিউজ : রক্তঝরা অমর একুশে আজ। প্রতিটি বাঙালির শোক ও গৌরবের দিন। বোধ শানিত করে মায়ের ভাষা বাঙলাকে সঙ্গে নিয়ে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্পের দিন। ১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর চোখ রাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা রক্ষার সেই আন্দোলন পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলে। তাই ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি চালায় তাদের পুলিশ বাহিনী। এতে সালাম, বরকত, রফিকসহ অনেকে শহিদ হন। তাদের আত্মত্যাগেই রক্ষা হয় মায়ের ভাষা বাংলা। শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বাঙালি। অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দিনটি শুধু বাঙালির নয়, পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষের। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষও দিনটি পালন করছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের জন্য দিনটি অন্যরকম আবেগের। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির রক্তঝরা পথ বেয়েই অর্জিত হয় মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং সে ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় বাঙালির চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল।’

প্রতি বছরের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ অবদানের বিষয়টি শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কুরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহিদদের রুহের মাগফিরাতের জন্য প্রার্থনা করা হবে। আজ সরকারি ছুটি।

দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ বাংলাসহ অন্যান্য ভাষার বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। সংবাদত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ঢাকা মহানগরীতে ট্রাকের মাধ্যমে রাজপথে ভ্রাম্যমাণ সংগীতানুষ্ঠান এবং নৌযানের সাহায্যে ঢাকা শহরসংলগ্ন নৌপথে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজনসহ জেলা-উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছে। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর তিন ধরনের পোস্টার প্রকাশ করেছে।

বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় জাদুঘর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, আরকাইভস্ ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, শিশু একাডেমি, ক্ষুদ্র্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক একাডেমি, বিরিশিরি-নেত্রকোনা, রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি, মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্রন্থমেলা, আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, সুন্দর হাতের লেখা ও রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। জাতীয় জাদুঘর ও অধীনস্থ শাখা জাদুঘরসমূহ এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সব প্রত্নস্থল ও জাদুঘরসমূহে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিস্টিক) শিশুদের বিনা টিকিটে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভাষা শহিদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধাঞ্জলি : মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার পরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এ সময় অমর একুশের ঐতিহাসিক অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ বাজানো হয়। ভাষা শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে দ্বিতীয় দফায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শেখ হাসিনা।

এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বেসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী ফারুক খান, মাহবুবউল আলম হানিফসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শহিদ বেদিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।

এরপর একে একে শহিদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে বিচারপতিগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবর্গ শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এসএম সফিউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শল শেখ আবদুল হান্নান এবং নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মো. নাজমুল হাসান। চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে হুইপরা শহিদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিমউদ্দিন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতগণ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্য এ এস এম মাসুদ কামাল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে কমিশনার ও কমিশন সচিব, এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর সর্বস্তরের জনগণের জন্য শহিদ মিনার খুলে দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : মহান শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ দুদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ (রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর)।

এছাড়া আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৬টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সারা দেশে সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরিসহকারে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহিদদের কবর ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি। নিউ মার্কেটের দক্ষিণ গেট থেকে আওয়ামী লীগের প্রভাতফেরি শুরু হবে। আগামীকাল বিকাল ৩টায় রয়েছে আলোচনা সভা। তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ