মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৮:১২ অপরাহ্ন
এম,এ আহমদ আজাদ,নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট:
ওসির ঘুষ বানিজ্য নিয়ে সর্বত্র তোলপাড় হচ্ছে। ঘুষের রাজা বলে অনেকে আখ্যায়িত করেছেন। মামলায় প্রভাব বিস্তারসহ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি সিলেটের জকিগঞ্জ থানার ওসি মোশাররফ হোসেন। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় ডিআইজি ও পুলিশ সুপার বরাবর পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চার ভুক্তভোগী। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। এনিয়ে তোলপাড় হচ্ছে সিলেট পুলিশ বিভাগে।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে নিজ প্রতিষ্ঠানে এক নারী টেইলার ধর্ষণের শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ করেন। ওসি নানা অজুহাত দেখিয়ে অভিযোগটি নথিভুক্ত করতে বিলম্ব করেন। পাঁচ মাস পর ভুয়া তারিখ বসিয়ে (৩ সেপ্টেম্বর) ধর্ষণচেষ্টার মামলা নেন ওসি। ৩১ অক্টোবর ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে আদালতে অভিযোগপত্র দেন ওসি।
এ ঘটনায় ওই নারী ১২ ডিসেম্বর সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করেন এবং ২৬ ডিসেম্বর ডিআইজি ও পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন। আবেদনে তিনি ওসি ও মামলার আসামি খলাদাপনিয়ার আব্দুল বাছিত চৌধুরী বাচ্চুর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাক্ষ্য দেন মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর মো. রায়হানসহ দু’জন। রায়হান সাক্ষী দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বজনের সঙ্গে বিরোধের জেরে গত ২০ আগস্ট চাঁদাবাজি, মারধর ও চুরির অভিযোগে মামলা করা হয় বিয়াবাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফয়জুর রহমান ওরফে আনোয়ার মাস্টার এবং তাঁর তিন সন্তান ও এক বর্গাচাষির বিরুদ্ধে। ২৮ আগস্ট পুলিশ সুপার বরাবর মামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন আনোয়ার মাস্টারের স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন। ২২ ডিসেম্বর ডিআইজি ও এসপি বরাবর মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে ফের আবেদন করেন। আবেদনে ওসির বিরুদ্ধে বিবাদীর পক্ষাবলম্বন ও ঘুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
গত ২২ ডিসেম্বর কালিগঞ্জ বাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা কানন ব্রত পালের মিষ্টির দোকান থেকে ৩০ বস্তা চিনি উদ্ধার করে পুলিশ। ওই চিনিকে ভারতীয় দাবি করে জব্দ ও পরে তাঁর ছেলে বিপ্লব কামার পালকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে দালালের মাধ্যমে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ছেলেকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন ওই মুক্তিযোদ্ধা। এ ঘটনায় ৬ জানুয়ারি পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দেন বিপ্লব। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে তাৎক্ষণিক তদন্ত করেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার আবু সুফিয়ান ও জাকির হোসেন। বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ইলাবাদ গ্রামের প্রবাসী শাহীন আহমদের বাড়ির জায়গা দখল, ভাঙচুর, লুটপাট, মারধর ও গাছ কাটার ঘটনায় ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে। প্রবাসী অভিযোগ করেন, দ্রুত বিচার আইনে মামলা না করে ওসি বিবাদীর পক্ষ নিয়ে পাল্টা মামলা করিয়েছেন।
পরে তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। শাহীন আহমদ বিডি২৪ লাইভ.কমকে বলেন, একবার তদন্তে গিয়েছিলেন এক কর্মকর্তা। আর কোনো খবর পাননি।
অভিযোগ রয়েছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা কানন ব্রত, আনোয়ার মাস্টারের স্ত্রী মনোয়ারা ও ধর্ষণের অভিযোগকারী ওই নারীর সঙ্গে আপস করার চেষ্টা করা হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) আবু সুফিয়ান বিডি২৪ লাইভ.কমকে বলেন, একাধিক অভিযোগের তদন্ত চলছে। এখনও সাক্ষ্য নেওয়া বাকি। শেষ হলে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
বিভিন্ন অভিযোগ বিষয়ে ওসি মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, বিভিন্ন পক্ষ তাদের মদদ দিচ্ছে। পুলিশ কারও পক্ষ নেয়নি। মুক্তিযোদ্ধার ঘটনার বিষয়ে বলেন, চোরাচালানের চিনি হিসেবে তাঁর অফিসার জব্দ করেছেন। কাগজ সঠিক হলে আদালত থেকে তা ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে পারবেন। ধর্ষণের অভিযোগকারী ওই নারী ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা ও চার্জশিট হয়েছে। শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলার সত্যতা না পেলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।