রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
ইসলাম ডেস্ক:
হজরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) সম্পর্কে আমাদের সবারই জানা। ভারতবর্ষে কোরআন ও হাদিসের খেদমত সম্পর্কে যাঁদের অবদান সর্বাধিক যেমন মুফতি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি, কাসেম নানুতুবি, ইয়াকুব নানুতুবি, আশরাফ আলী থানভি, হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি, হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহ.)-সহ একটা বিরাট জামাতের নাম শুনি আমরা; যে জামাত সম্পর্কে হজরত আতাউল্লাহ শাহ বুখারি (রহ.) বলেছিলেন, এ লোকগুলো মূলত সাহাবিদের মতো। সাহাবিয়ানা আখলাক, সাহাবিয়ানা চরিত্র তাঁদের। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লোকগুলোকে আল্লাহ নির্বাচন করে হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সাথী বানিয়েছিলেন।
আতাউল্লাহ শাহ বুখারি (রহ.) বলেন, ‘সাহাবিদের একটি জামাত আল্লাহ মেহেরবানি করে এ যুগের জন্য রেখে দিয়েছেন। ’ এই যে আমরা দেওবন্দ দেখি, দেওবন্দ মাদরাসার ওলামায়ে কিরামকে দেখি। চট্টগ্রামে কত শত মাদরাসা! পটিয়া, হাটহাজারী, জিরিসহ আরও বহু মাদরাসা রয়েছে। যাঁদের অসিলায় এসব মাদরাসার ভিত্তি হয়েছে এবং বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশে আল্লাহর দীনের কথা, কোরআন-হাদিসের কথা শুনতে পাচ্ছি সেই ওলামায়ে দেওবন্দের মূলে রয়েছেন শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.)।
তাঁরই মাধ্যমে এ উপমহাদেশে হাদিসচর্চা শুরু হয়। এর আগে এখানে কোরআন-হাদিসের চর্চা থাকলেও এভাবে শিক্ষার সুচারু ব্যবস্থা ছিল না। শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) অনেক কিতাব লিখেছেন, তার মধ্যে একটি কিতাবের নাম ফুয়ুজুল হারামাইনিশ শারিফাইন। এ কিতাব তিনি লিখেছেন মক্কা-মদিনায় থাকাবস্থায়।
তখন এ দেশে দীন শিক্ষার উন্নত ব্যবস্থা ছিল না। শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) সফর করে সে যুগে মক্কা-মদিনা গেছেন। এখন আমাদের দেশে বড় বড় মাদরাসা হয়েছে। শিক্ষার উন্নতি হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য এখন আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
পটিয়া, হাটহাজারীসহ অসংখ্য মাদরাসা হয়েছে। কিন্তু এক যুগে এমন ছিল যখন শুধু দাওরা পড়ার জন্য, এমনকি কাফিয়া, শরহে জামি পড়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারত সফর করতে হতো। সে যুগে শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) ভারত থেকে সফর করে মক্কা-মদিনা গেছেন। সেখানে থেকে লেখাপড়া শেষে যখন বাড়ি ফিরছিলেন তখন তার ওস্তাদ প্রিয় ছাত্রের বিদায় উপলক্ষে একটা সভা ডাকলেন। আরবের বড় বড় বিদ্বান একত্রিত করে তিনি তাঁদের সম্বোধন করে বললেন, ‘হিন্দুস্তানের এ ছেলেটি আমার কাছে শিক্ষালাভ করেছে। শিক্ষা সমাপ্ত করে সে দেশে যাচ্ছে। তবে তোমাদের ডেকেছি এ কথা শোনানোর জন্য যে, এ ছেলেটি আমার কাছে কোরআন-হাদিসের শব্দ শিখেছে আর আমি তার কাছ থেকে কোরআন-হাদিসের মারেফত ও রুহানিয়াত শিখেছি। ’
কোরআন-হাদিস তথা শরিয়তের জ্ঞান অর্জনের জন্য মানুষ লেখাপড়া শিখে আলেম হয়, হাফেজ হয়, কারি হয়। এসবের মূল মাকসাদ আত্মার পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর মারেফত লাভে ধন্য হওয়া এবং আল্লাহর মহব্বত ও রসুলের মহব্বতের দ্বারা দিলকে খাঁটি বানানো। আলেমের অন্তরে যদি আল্লাহর মহব্বত না থাকে, রসুলের মহব্বত না থাকে এবং রসুলের হুকুমের গুরুত্ব না থাকে তাহলে তাকে শরিয়তের পরিভাষায় আলেম বলা হয় না।