করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

প্রিয় অপ্রিয় প্রিয়া সাহা

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৯

এম এ মজিদ:
আমি খুব আগ্রহ ভরে শুনছিলাম প্রিয়া সাহার অভিযোগগুলো। প্রিয়া সাহার পিছনে দাড়ানো লম্বা দাড়িওয়ালা ব্যক্তিকেও একই সাথে ফলো করছিলাম। হয়তো দাড়িওয়ালা ভদ্র লোককেও সাজিয়ে নেয়া হয়েছে কোনো একটি দেশের বিরুদ্ধে মুসলিম নিধনের কথা বলানোর জন্য। রাণীর বেশে ট্রাম্পের পাশে দাড়ানো মহিলাকেও দেখছিলাম।

আপনার মনে হতে পারে ট্রাম্পের পাশে দাড়ানো মহিলাটি ট্রাম্পকে বলছে-একজন নির্যাতিতা নারী আপনাকে কিছু বলতে চায়। এমনিতেই প্রিয়া সাহা মুখটা এগিয়ে, বডিটা বেকিয়ে ট্রাম্পকে তার অভিযোগের কথা বলতে লাগলেন। ট্রাম্পের চোখ যেন কপালে উঠে গেল।

বাম পাশে বসা আরেকজনের কাছে জানতে চাইলেন- ভদ্র মহিলার অভিযোগ কি সত্য হতে পারে? আবারও প্রিয়া সাহা-বলিষ্টভাবেই বললেন, হ্যা সংখ্যা লঘু হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টানরা বসতবাড়ি ছাড়া হয়নি, তাদেরকে দেশেই থাকতে দেয়া হচ্ছে না, বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, রাষ্ট্রযন্ত্র মুসলিম সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে, আমরা কোনো বিচার পাচ্ছি না। আমার অভিযোগ সত্য। যেভাবে বিষয়টা টেলিকাস্ট হয়েছে মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক কাকতালীয়ভাবে ট্রাম্পের সাথে প্রিয়া সাহার দেখা। সুযোগ বুঝে অভিযোগগুলো ট্রাম্পকে বলা। বিষয়টা ঠিক তেমন না।

বিবিসি বাংলার একটি অনুষ্টান হয়েছিল হবিগঞ্জে। আমিসহ অনেকেই সেখানে আমন্ত্রিত ছিলাম। আমাকে একটি প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ আমি কী প্রশ্ন করব, তা কয়েকদিন আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। কোন সময় কোন ভঙ্গিতে কার পরে কার আগে কার পাশে বসা থাকতে হবে, কোন সময় আমার প্রশ্নটির জন্য হাত তুলা দিতে হবে তার সবকিছুই ছকবাধা।

বিশ্বাস করুন, এমন সাজানো প্রশ্ন করতে আমি রাজী হইনি। অন্য কেউ রাজী হয়েছে, প্রশ্ন করেছে, যখন টিভিতে দেখলাম, আমার নিজেই বুঝতে অসুবিধা হয়েছে, প্রশ্নটি তাৎক্ষনিক করা না কি ২/৩দিন আগে ট্রায়াল দিয়ে শেখানো বুঝানো প্রশ্নটি জাস্ট পড়ে শুনানো হয়েছে। ঠিক একইভাবে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের বড় মাপের মিডিয়াগুলো একই কাজ করে থাকে।

অর্থাৎ তারা যা চায়, ঠিক তা আপনার কাছ থেকে তাদের মতো করে আদায়ে করে নিয়ে থাকে। এখানে ব্যক্তির স্বাধীনতা থাকে না বললেই চলে। এখন তো কঠিনভাবে পালনীয় একটি বিষয় হচ্ছে-আপনি যদি কোনো ভিআইপির সাক্ষাতকার নিতে চান তাহলে তাকে সরাসরি কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। আপনার প্রশ্ন ইমেইলে তার কাছে পাঠাতে হবে। তার কর্মকর্তা কর্মচারীরা সেটা গবেষনা করবেন, তারপর প্রশ্নের জবাব লিখে কয়েকধাপে তা বিচার বিশ্লেষন করে আপনার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সেটাই ভিআইপির এক্সক্লোসিভ সাক্ষাতকার।

আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে বলা হয়ে থাকে বিশ্ব প্রেসিডেন্ট। আপনি মানুন আর না মানুন সেটাই আপাততঃ সত্য।আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত পৌছুতে অন্তত কয়েকমাসের পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয় আছে। প্রিয়া সাহার অভিযোগগুলো তাৎক্ষনিক তো নয়ই বরং কয়েকমাসের রিহার্সেল এর বিষয়। যদিও বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকান হাই কমিশনার তাৎক্ষনিক বলেছেন, প্রিয়া সাহার অভিযোগ সত্য নয়।

অবিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নেই যে, আমেরিকান হাই কমিশন প্রিয়া সাহার অভিযোগের বিষয়ে আগে থেকেই অবগত এবং সেভাবেই তাকে তৈরী করা হয়েছে। এমন একটি অভিযোগ প্রিয়া সাহার মুখ থেকে বের করিয়ে আনতে অনেক শ্রম ঘাম মেধা অর্থের ব্যাপার স্যাপার থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। না থাকাটাই বরং অস্বাভাবিক। অন্য কোনো দেশের হাত রয়েছে বলেও আমি বিশ্বাস করি।

প্রিয়া সাহা আমেরিকায় যেতে নির্ধারিত ফ্লাইট মিস করেছিলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তাকে আরেকটি ফ্লাইটে আমেরিকায় পৌছে দেয়া কোনো ছোট খাট বিষয়? আমার বিশ্বাস পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের সংযোগ ছাড়া কোনো মন্ত্রী এমপির দ্বারাও বিকল্প ফ্লাইটে এভাবে আমেরিকায় যাওয়া সম্ভব নয়। প্রিয়া সাহা আসলে কী ম্যাসেজ দিতে চেয়েছেন? বাংলাদেশ একটি উগ্র মৌলবাদীদের দেশ? যেখানে বারুদের গন্ধে শ্বাস নেয়া যায় না? প্রিয়া সাহা সরাসরি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন, সেই যুদ্ধে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এর সরাসরি হস্তক্ষেপ, সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। যদিও সে যুদ্ধে প্রিয়া সাহাদের কিছুই হবে না, তবে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।

প্রিয়া সাহার অভিযোগ খন্ডন করতে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অর্থের বিচারে বাংলাদেশকে কোটি কোটি ডলারের অন্যায় সুযোগ সুবিধা কোনো না কোনো দেশকে দিতে হবে। রাষ্ট্র যন্ত্র যদি মৌলবাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে থাকে, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টানের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়াদের শেল্টার দিয়ে থাকে তাহলে সে অভিযোগ আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধেই যায়? সেটা কি আওয়ামীলীগ মেনে নেবে? প্রিয়া সাহা একটি শ্রেণীর মানুষের কাছে ইতিমধ্যে প্রিয় হয়ে গেছেন, আবার একটি অংশের কাছে অপ্রিয় হয়েছেন।

ডাক্তার দিপু মনির সাথে, আওয়ামীলীগের বড় বড় এমপি মন্ত্রীর সাথে প্রিয়া সাহার হাস্যুজ্জল কালো মুখটি মিডিয়ায় বারবার জ্বলজ্বল করে উঠে। জানতে বড় ইচ্ছা হয় প্রিয়া সাহাকে এতো দুর কার স্বার্থে টেনে নিয়ে আসা হয়েছে, এতোদিন কার স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি খুবই লজ্জিত এমন একটা মহিলার স্বামী হবিগঞ্জে চাকুরী করেছেন, হবিগঞ্জের আলোবাতাসে শ্বাস নিয়েছেন, সেই আলো বাতাস থেকে আমাকেও শ্বাস নিতে হবে।

লেখকঃ আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ