শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীর পেটে লাথি মেরে চারমাসের সন্তান হত্যার অভিযোগে স্বামী শিবলুকে (২২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (১০ জুলাই) নওগাঁর রানীনগর থানা পুলিশ আদালতে করা অভিযোগ এজহার হিসেবে গ্রহণ করে। পরে আজ বিকেলে শিবলুকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ৩০ মে উপজেলার পশ্চিম বালুভরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে ২৬ জুন গৃহবধূ সাথী আক্তার (২০) বাদী হয়ে নওগাঁ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাসুরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী সাথী বগুড়ার আদমদীঘির অন্তাহার গ্রামের শাহিন মন্ডলের মেয়ে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, রানীনগরের পশ্চিম বালুভরা গ্রামের শাকবর রহমানের ছেলে শিবলুর সঙ্গে গত বছরের ২০ মার্চ সাথীর বিয়ে হয়। বিয়েতে যৌতুক হিসেবে দেড় লাখ টাকা ও বেশকিছু আসবাবপত্র দেয়া হয়।
এর কিছুদিন পর থেকেই ব্যবসার জন্য শিবলু তার সাথীকে বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক নিয়ে আসার জন্য চাপ দেন। টাকা দিতে না পারায় নানাভাবে সাথীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলতে থাকে। এরইমধ্যে এ ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয়ভাবে সমাধানও করে দুই পরিবার।
এরপর গত ৩০ মে শিবলু তার বাবা, মা ও বড়ভাইসহ আত্মীয়দের কথায় সাথীকে মারধর করেন। একপর্যায়ে পেটে লাথি মারলে তার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ওই দিনই খবর পেয়ে সাথীর পরিবারের লোকজন তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখা যায়, আঘাতে সাথীর পেটে থাকা চার মাসের সন্তান মারা গেছে। বিষয়গুলো নিয়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। অবশেষে সাথী নিজেই বাদী হয়ে ২৬ জুন নওগাঁ আদালতে অভিযোগ করেন।
ভুক্তভোগীর বাবা শাহিন মণ্ডল বলেন, ‘যৌতুকের দাবিতে আমার মেয়ের ওপর তারা বার বার নির্যাতন চালাতেন। আমার সাধ্যমতো জামাইকে কয়েকবার সহযোগিতা করেছি। এরপরও বন্ধ হয়নি যৌতুক দাবি। একপর্যায়ে মেয়ের লাথি মেরে পেটে থাকা সন্তান নষ্ট করে ফেলে। জামাইসহ তার পরিবারের অভিযুক্তদের কঠিন শাস্তির দাবি করছি। সেখানে আমার মেয়ে নিরাপদ নয়।’
ভুক্তভোগী সাথী বলেন, ‘যৌতুকের দাবিতে নানাসময় আমাকে নির্যাতন করা হতো। পেটের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার আগেই বিদায় নিয়েছে। একজন মা হিসেবে আমি কতটা আঘাত পেয়েছি- তা বুঝাতো পারবো না। তাদের কঠিন বিচার দাবি করছি।’
রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন আকন্দ বলেন, এ ঘটনার মূল আসামি শিবলুকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।