করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

মৌলভীবাজারে ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের বিক্ষোভ মিছিল

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১

করাঙ্গীনিউজ: ডানকান ব্রাদার্সের পরিচালনাধীন মৌলভীবাজারের আলীনগর চা-বাগানের ফাঁড়ি সুনছড়া চা-বাগানে গত ২৮ মে রাতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় চা-শ্রমিক সংঘের যুগ্ম-আহবায়ক হরিনারায়ন হাজরা ও চা-শ্রমিক যুব-সংঘের সাধারণ সম্পাদক স্বপন নায়েক মারাত্নক আহত হন।

দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে নিয়ে সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় হামলা চালিয়ে হরিনারায়ন হাজরার বাড়ি ভাংচুর এবং ৭ টি গরু, ৫ টি ছাগল, দোকানের ক্যাশ ও একটি দানবাক্স লুট করে নিয়ে যায়।

এই ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে ০২ জুন সন্ধ্যায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

শহরের কোর্টরোড(মনুসেতু সংলগ্ন) কার্যালয় হতে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌমুহনা চত্ত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্টিত হয়।

জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সহ-সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহিন মিয়া, জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোঃ গিয়াসউদ্দিন প্রমূখ।

সমাবেশে বক্তারা এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার দাবি করেন। নেতৃববৃন্দ বলেন হরিনারায়ন হাজরা ও স্বপন নায়েক বাগানের কাঁচা পাতা চুরির সংবাদ কর্তৃপক্ষকে জানানোর কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা এই হামলা চালায়। কর্তৃপক্ষ চোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তথ্যদাতার নাম চোরদেরকে জানিয়ে দেয়। সন্ত্রাসীদের হামলায় হরিনারায়ন হাজরা ও স্বপন নায়েকের মাথায় রক্তাক্ত জখম হয়। সন্ত্রাসীদের হামলায় মারাত্মক আহত শ্রমিকরা যাতে চিকিৎসা নিতে না পারে এজন্য সন্ত্রাসীরা বাগান থেকে বের হওয়ার রাস্তায় সশস্ত্র পাহারা বসায়। এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বাগানের শ্রমিকরা হেড টিলা বাবু গোপাল চক্রবর্তীর সাথে দেখা করতে গেলে তিনি শ্রমিকদের সাথে দেখা করেননি।

শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোয় যান, কিন্তু তিনিও শ্রমিকদের সাথে সাক্ষাত করেননি।

শ্রমিকরা বাগান কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কাউকে না পেয়ে উপায়ান্ত না দেখে ৯৯৯ কল দিয়ে পুলিশকে ডেকে আনেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে রাত ১১ টায় পুলিশ বাগানে এসে ক্ষতিগ্রস্থ বসত বাড়ি পরিদর্শন না করে বাগানের বাংলোয় ম্যানেজারের সাথে বৈঠক করে চলে যেতে যান। এসময় শ্রমিকরা আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার দাবি জানালে পুলিশের সহযোগিতায় আহত হরিনারায়ন হাজরা ও স্বপন নায়েককে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্ত্তি করা হয়। হাসপাতালে হরিনারায়ন হাজরার মাথায় ৬ টি এবং স্বপন নায়েকের মাথায় ১ টি সেলাই লাগে।

চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও সন্ত্রাসীদের নানারকম হুমকিতে হাসপাতালে চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই হরিনারায়ন হাজরা ও স্বপন নায়েককে চলে আসতে হয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরীর প্রতিবেশীর বাড়িতে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা দুঃসাহসী হামলা করে এখনো নির্বিঘ্নে আছে। বাগান কর্তৃপক্ষ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হাত থেকে শ্রমিকদের রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা তো নেননি উপরন্তু হরিনারায়ন হাজরা এবং তার ভাইদেরসহ স্বপন নায়েক, মিলন নায়েকসহ ৭ জনের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।

বাগান কর্তৃপক্ষ মামলা করেই ক্ষান্ত হননি, তারা হরিনারায়ন হাজরা, স্বপন নায়েকসহ ৭ জন শ্রমিককে বাগানের কাজ থেকেও বরখাস্ত করেছেন। অথচ হামলাকারী বহিরাগতদের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বাগান কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। পুলিশ হরিনারায়ন হাজরা ভাইকে গ্রেফতার করলেও শ্রমিকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি।

মূলত বাগান কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম, চা পাতা চুরি, ছায়াবৃক্ষ চুরি, শ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে কথা বলার কারণে হরিনারায়ন হাজরা, স্বপন নায়েকসহ কয়েকজনের উপর স্বার্থান্বেষীমহল রূষ্ট ছিলেন। এর আগেও বিভিন্ন সময় চার্জশীট, কাজ বন্ধ রাখাসহ বিভিন্নভাবে হরিনারায়ন হাজরা ও তার ভাইদের বাগান কর্তৃপক্ষ নাজেহাল করেন।

নেতৃবৃন্দ চা-শিল্প রক্ষা ও শিল্পের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে অবিলম্বে চা-বাগানের কাঁচা পাতা চুরি, ছায়াবৃক্ষ নিধন বন্ধ, শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বে-আইনী বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে শ্রমিকদের কাজে পুনঃবহাল, বাড়িঘরে ভাংচুর, গবাদি পশু ও অর্থ লুটপাটের সাথে জড়িত বহিরাগত সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি বিধান এবং ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপুরণ এবং লুটপাটকৃত গবাদি পশু ও অর্থ উদ্ধারের দাবি জানান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ