বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
আবুল কালাম আজাদ: ২০২০ সালে বছর জুড়েই ছিল মৃত্যুর সংবাদ। মহামারি করোনায় দেশের
কৃতিমান মানুষের পাশাপাশি নানা পরিচিত জনকে করেনা কেড়ে নিয়েছে।
আবার কেউ কেউ বয়সের কারণে করোনা আক্রান্ত না হয়েও এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। এসব মৃত্যু আমাদের দারুণভাবে পীড়া দিয়েছে। ভাষার মাস ১২ ফেব্রুয়ারী দেশের কৃতিমান মানুষ, আমাদের গৌরব, লাখো মানুষকে কর্মসংস্থান দিয়ে যিনি সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছেন, বয়ে এনেছেন আমাদের সম্মন, তিনিও চলে গেছেন।
আমাদের বাতিঘর আশার প্রতিষ্ঠাতা শফিকুল হক চৌধূরী না ফেরার দেশে চলে গেলেন। মানুষ জন্মিলে মরিবে, এটাই অবধারিত। তারপরও মানুষের আক্ষেপ থেকে যায়, তাদের কর্মদক্ষতা সাফল্যের কারণে।
তারা যতদিন বাচঁতেন, মানুষের কল্যাণেই কাজ করতেন। এমননি একজন মানুষ ছিলেন তিনি। আজ তিনি আমাদের মাঝে প্রয়াত। কিন্তু তার হাজারো কর্ম আমাদের মাঝে বেঁচে আছে, থাকবে আগামী ভবিষ্যতেও।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার নরপতি গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান শফিকুল হক চৌধুরী শুধু দেশে নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দরিদ্র পীড়িত দেশে
প্রতিষ্ঠা করেছেন আশা’র। যেখানে কর্মরত আছে হাজার হাজার দেশের সন্তান।
কর্মসংস্থান দিয়েছেন সেখানকার বেকার যুবক যুবতীদের। বিশেষ করে আফ্রিকার নানা দেশে আশার যে সফলতা তার পুরোটাই শফিকুল হক চৌধূরীর কৃতিত্ব কিংবা অবদান। সেজন্য উন্নত দেশগুলো প্রয়াত এই গুনি ব্যক্তিকে নানা সম্মাননা প্রদান করে সম্মানিত করেছেন এদেশের মানুষকে তথা চুনারুঘাটবাসীকে।
তিনি দেশের লাখ লাখ বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জাতি গঠনে এবং দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে তার অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে চিরদিন স্মরণ রাখবে।
আশা’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মো. সফিকুল হক চৌধুরী ১৯৪৯ সালে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার নরপতি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে বি. এ (সম্মান) সহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিসিএস ১৯৭৩ ব্যাচের প্রবেশনারী কর্মকর্তা হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়েও চাকরিতে যোগদান না করে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে আত্মনিয়োগ করেন এবং দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ উন্নয়ন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত রয়েছেন। সফিকুল হক চৌধুরী ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা আশা করে প্রেসিডেন্ট
হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া
মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তার এলাকার মানুষকে ভালবেসে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন আশাহাসপাতাল। সেখানে হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসার পাশাপাশি নামমাত্র মুল্যে ওষূধ পাচ্ছে। প্রান্তিক মানুষকে স্যানেটারি সুবিধা দিতে নিজ জেলাসহ সারা দেশে চালু করেছেন স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প। প্রতিষ্টা করেছেন আশা ম্যাটস।
যেখানে শত শত শিক্ষার্থী উপ সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হয়ে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আজ কাজ করছে লাখো যুবক। শফিকুল হক চৌধূরীর মতো মানুষ বার বার জন্মায় না। তারা ক্ষনজন্মা মানুষ
হিসেবে আগামী প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার মৃত্যুতে শুধু চুনারুঘাটবাসী নয়, দেশ হারিয়েছেন এক নক্ষত্রকে। আমরা তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
শফিকুল হক চৌধুরীর মৃত্যুর ১৫ দিনের ব্যবধানে আমরা হারিয়েছি আমাদের আরেক নক্ষত্রকে। আইন ও বিচার বিভাগের পরিচিত মূখ সাবেক বিচারপতি মোঃ আব্দুল হাই। বৃহত্তর সিলেটের কৃতি সন্তান বিচারপতি মোঃ আব্দুল হাই
সর্বশেষ বাংলাদেশ শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনিও ছিলেন আমাদের বাতিঘর।সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারী তিনিও না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
তিনি হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ১০ নং মিরাশী ইউনিয়নের আইতন গ্রামের জজবাড়ীতে জন্ম গ্রহন করেন। বিচারপতি মোঃ আব্দুল হাই ১৯৮৬ হতে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিন জেলার জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন।
২০০০-২০০১ সালে আইন সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি বিচারপতি নিয়োগ হন। বিএনপি সরকারের আমলে তার নিয়োগ বাতিল হলে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে পুনরায়
তিনি বিচারপতি হন। তিনি বিচার বিভাগ থেকে অবসর নেওয়ার পর বাংলাদেশ শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রধমবার দায়িত্ব পালন শেষে দ্বিতীয় মেয়াদে ২ বছরে চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন গত বছর জুলাইতে। তার
মৃত্যুতে চুনারুঘাট তথা সিলেট বিভাগবাসী একজন নিবেদিত মানুষ, একজন সৎ মানুষকে হারালো। প্রয়াত আব্দুল হাই এর মতো মানুষ হয়তো আর জন্মাবে না, কিন্তু তার কর্ম চুনারুঘাটবাসীর পাশাপাশি স্মরণ রাখবে আগামী ভবিষ্যত প্রজন্মরাও। আমরা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আল্লাহ যেন প্রয়াত দুই গুনিজনকে বেহেস্ত নসিব করেন। আমিন
লেখকঃ
আবুল কালাম আজাদ
সিনিয়র সাংবাদিক, হবিগঞ্জ।