মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৭:৩৪ অপরাহ্ন
করাঙ্গীনিউজ: ভূমিহীন-গৃহহীনদের একটি সুন্দর ঘরের স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে প্রায় ৭০ হাজার পরিবার পেলো একটি আধাপাকা বাড়ি। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে এসব ঘর ও জমি দেওয়া হয়।
এক সঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বে অন্যন্য নজির সৃষ্টির করলো বাংলাদেশ।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘর বিতরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন টানা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে মুজিববর্ষ ঘোষণা করে সরকার। মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না- এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের অধীনে চলমান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে ঘর পেলো ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার। দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর করে দিতে এখন পর্যন্ত প্রায় নয় লাখ পরিবারকে তালিকাভূক্ত করেছে শেখ হাসিনা সরকার।
উদ্বোধন শেষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপকারভোগীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন সরকার প্রধান।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে ঘর পাওয়া পারভীন নামে এক নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে এবং সুস্থতা কামনা করেন।
নিজের স্বামী নিয়মিত কাজ পায় না এবং খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটে জানিয়ে পারভীন ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমার স্বামী কাজ পায় না। মাঝে-মধ্যে না খেয়ে থাকতে হয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। কোনদিন ভাবিনি ঘর হবে। আপনি আমাদের ঘর দিয়েছেন, জমি দিয়েছেন। আপনি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুন।
কয়েকটি বাক্য বলেই উপকারভোগী নারী কৃতজ্ঞতায় কাঁদতে থাকেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে সান্তনা দিয়ে বলেন, আপনি কাঁদবেন না। আমি মনে করি এটা আমার কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, জাতির পিতা কন্যা হিসেবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করবো, এটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার স্বপ্ন পূরণ করবো। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে সে জন্য আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ করেছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও যেন গৃহহীন ও ভূমিহীন না থাকে আমি সেই ব্যবস্থা করবো। সেই সঙ্গে আপনারা যেন আপনাদের জীবন-জীবিকার পথ খুঁজে পান সেই ব্যবস্থাও করবো।
সারাদেশে যারা ঘর পেয়েছেন তাদের ঘরের সামনে একটি করে গাছ, বিশেষ করে ফলজ গাছ লাগানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
নদী ভাঙনে যাতে আর কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমার আনন্দের দিন, যাদের কিছুই নেই তাদের ঘর করে দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে পেরেছি।
এক সঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে ঘর দেওয়ার নজির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না পৃথিবীর কোনো দেশে কখনো অথবা আমাদের দেশে কোনো সরকার এত দ্রুত এতগুলো ঘর করেছে। … এই ঘরগুলো তৈরি করা সহজ কথা নয়।
সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করার দৃঢ় প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করে টানা তিনবারের সরকার প্রধান বলেন, মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। আমরা সবার জন্য ঠিকানা করে দেবো, সবাইকে ঘর করে দেবো। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন সুন্দর ভাবে বসবাস করতে পারে সেটাই আমার লক্ষ্য।
৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারের মধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে ব্যারাকের মাধ্যমে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়।