মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০১:০৮ অপরাহ্ন
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ)প্রতিনিধি: নবীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে ‘ফ্রি স্টাইলে’ চলছে আচরণবিধি লঙ্ঘন। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন নৌকার মেয়র প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী।গণ সংযোগ থেকে শুরু করে পোস্টারিং কিংবা মাইকিং সকল ক্ষেত্রেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।
নবীগঞ্জ শহরে যানবাহনে পোস্টার লাগানোর দায়ে ও যানবাহনে মাইকিংয়ে একাধিক মাইক ব্যবহারের দায়ে গত (০৫ জানুয়ারি) আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী (নৌকা) গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরীকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।একই সাথে যানবাহনে পোস্টার লাগানো ও মাইকিংয়ে একাধিক মাইক ব্যবহারের দায়ে ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর রুহুল আমিন রফু (উটপাখি) কে ৫শ টাকা ও ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী দিব্যেন্দু ধর দীপন (উটপাখি) কে ৫শ টাকা জরিমানা করেন।নৌকার সর্মথনে হাসপাতাল সড়েকের রনির বাসার ছাদে ভোটারদেরকে নজর কাড়া জন্য একটি বিশাল নৌকা ও প্রার্থীর পেষ্টুন লাগিয়েছনে তার মাঝে আলোকসজ্জা করে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছেন।
এছাড়া তিনি পৌর এলাকার সকল পাড়া-মহল্লা ও দোকান-পাট রাস্তার পাশে পোষ্টার লাগানো কাজ ও করেছেন।যা সম্পূর্ন নির্বাচন আচরন বিধি কাজ।এছাড়াও মেয়র ও সাধারন কাউন্সিল ও সংরিক্ষত কাউন্সিলরগনদের নির্বাচনী পোষ্টর ও পেষ্টুন নির্বাচনী আচরন বিধির বাইরে বড় বড় করে টাংকাতে দেখা গেছে। মেয়র, কাউন্সিলর মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী কেউ নির্বাচনী আচরন বিধি না মেনে বিভিন্ন প্রচারনা করতে দেখা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসের সংশ্লিষ্টরা যেন এক রকম নির্বিকার। গণসংযোগ চলাকালে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে একাধিক প্রার্থীকে অর্থদন্ড করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না আচরণ বিধি লঙ্ঘনের মহোৎসব। যদিও এসব দেখার জন্য তিন জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে রয়েছেন তবুও দিন দিন আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তবে প্রার্থীদের দাবি তারা আচরণবিধি মেনেই গণসংযোগ চালাচ্ছেন।এভাবে চলতে থাকলে সামনে নির্বাচনী পরিবেশ আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে পরিস্থিতি, এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা যায়, পৌরসভা নির্বাচনে এ পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করেছেন আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল। এছাড়াও মৌখিক অভিযোগ করেছেন একাধিক সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অনেকে মনে করছেন আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে তেমন কোনো কঠোর শান্তির ব্যবস্থা না নেয়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারটি থামছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দেবশ্রী দাস পার্লি বলেন, আচরণবিধি প্রতি পালন ভালোভাবেই হচ্ছে। তবুও কিছু জায়গায় লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ পাওয়ার পরই তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে পাঠানো হচ্ছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ সাদিকুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আচরণবিধি কঠোরভাবে পর্যবেন করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। আচরন বিধি লঙ্ঘন হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আচরণবিধির’৭-এর ‘খ’ ধারায় রয়েছে, কোনো প্রার্থী পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে চাইলে প্রস্তাবিত সময়ের ২৪ ঘন্টা আগে তাহার স্থান এবং সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। যাতে ওই স্থানে চলাচল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে চলছে তার উল্টো। প্রতিদিনই আওয়ামীলীগ মেয়র প্রার্থী গণসংযোগকালে একাধিক পথসভা করছেন। এসব পথসভা করায় আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এসব দেখতে নির্বাচন অফিসে কোনো কর্মকর্তাকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
আচরণবিধির ৮-এ উল্লেখ আছে, প্রার্থীদের পোস্টার সাদাকালো হতে হবে এবং এর আয়তন ৬০ বাই ৪০ সেন্টিমিটারের অধিক হতে পারবে না। কিন্তু অনেক প্রার্থীই এ বিধি মানছেন না। নির্ধারিত আয়তনের পাশাপাশি অনেকে বড় আকারের ব্যানার ফেস্টুনও টানিয়েছেন।
নবীগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের পোষ্টার বিভিন্ন বাড়ী ও দেওয়াল ভরে ফেলেছেন। ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় টানানো পোস্টারে রাস্তার উপর ছেয়ে ফেলছেন।
আচরণবিধির ২০-এ বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না। এ বিধিও মানছেন না প্রার্থীরা। আচরণবিধিতে দুপুর ২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে বলে উল্লেখ আছে। শুধু তাই নয়, রাত আটটার পর কোনো প্রার্থী গণসংযোগও চালাতে পারবেন না। কিন্তু পৌরসভার অনেক স্থানে দেখা যাচ্ছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাইক বাজানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রচারও চালাচ্ছেন প্রার্থীরা।এছাড়া প্রচারে মোটর সাইকেল ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তা মানছেন না অনেকেই।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল বলেন, আমরা অত্যন্ত সুষ্ঠ পরিবেশে গণসংযোগ করছি। কোনো রকম আচরণবিধি লঙ্ঘনের অবকাশ নেই। আমার নেতাকর্মী ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটিকে বলে দিয়েছি, তারা যেন নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছাবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা আচরণ বিধি মেনেই গণ সংযোগ চালাচ্ছি। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এমন নির্দেশনা দেয়া আছে।
তিনি আরো জানান, স্বাস্থ্য বিধি ও আচরণবিধি মেনেই তারা প্রচার চালাচ্ছেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মাহবুবুল আলম সুমন বলেন, আমরা নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনেই প্রচারনা চালাচ্ছি এবং আমার শুভাকাঙ্খী যারা আমাকে নির্বাচনী প্রচারণায় সহযোগীতা করছেন তাদেরকেও আচরণবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী আইনে জানা গেছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রমানিত হলে কঠোর শাস্তির বিধানও রয়েছে। কোনো প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচন-পূর্ব সময়ে বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে ৬ মাসের কারাদন্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।