সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ১০:০৩ অপরাহ্ন
করাঙ্গীনিউজ: হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার স্টেশনের কাছে তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুতের ১৩ ঘন্টা পর সিলেটের সাথে সারাদেশের ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
রোববার রাত সাড়ে টার দিকে পুরনো লাইন সংষ্কার করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। পড়ে বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়া ট্রেনগুলো নিজ নিজ গন্তব্যে ছেড়ে যায়।
রোববার (০৬ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার স্টেশনের কাছে লাইন রক্ষণাবেক্ষনের কাজ করছিলেন একদল শ্রমিক। এ সময় কোন সিগনাল না থাকায় আখাউড়া থেকে সিলেটগামী একটি তেলবাহী ট্রেন মেইন লাইন দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অটোমেটিক ট্রেনের ইঞ্জিন চলে যায় ২নং লাইন দিয়ে এবং বগিগুলো মেইন লাইন দিয়ে। যে কারণে ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। উল্টে যায় দুটি বগি। এ সময় ট্রেনের বগিতে হালকা অগ্নিকান্ড ঘটলেও স্থানীয় লোকজনই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহজীবাজার স্টেশন মাস্টার কাইয়ুম ইসলাম। তিনি জানান, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন উদ্ধার শেষে লাইন মেরামত করা হয়। পরে রাত সাড়ে ১২টায় ট্রেন চলাচল শুর করে।
এ ঘটনায় দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটি। এর প্রধান করা হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম (পূর্ব) এর প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীনকে। চার সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অপরটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। এর প্রধান করা হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকার বাণিজ্যিক পরিবহন কর্মকর্তা (দ্বিতীয়) মাইনুল ইসলামকে। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটিকেও ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার জন্য স্টেশন মাস্টারের ভুলকে দোষারোপ করছেন ট্রেনের চালকরা। তারা বলছেন, শাহজীবাজার স্টেশনের কাছে লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছিল। কিন্তু তাদের আগে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। এমনকি ট্রেন আসার সময় স্টেশন মাস্টার সেখানে না থাকায় কোনো ধরণের সিগনালও দেয়া হয়নি।
দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনের সহকারী চালক হামিদ আহমেদ বলেন, লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছিল। কিন্তু আমাদের কোনো নোটিশ বা সিগনাল দেয়া হয়নি। ফলে ট্রেনটি মেইন লাইন দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ইঞ্জিন অটোমেটিক ২নং লাইনে চলে যায়। এছাড়া বগি চলে যায় ১নং লাইনে। যে কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
অপরদিকে, ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতের কারণে দুপুর থেকে সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এ সময় শ্রীীমঙ্গল, কুলাউড়া ও আখাওড়াসহ বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহি ট্রেন আটকা পড়ে। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েন এ পথের কয়েক হাজার যাত্রী।
এদিকে ট্রেন দুঘর্টনার কারনে চট্টগ্রাম গামী পাহাড়িকা ট্রেন শায়েস্তাগঞ্জে আটকা পড়লে ট্রেনের যাত্রীরা টিকেটের মুল্য ফেরতের জন্য স্টেশন মাষ্টার কক্ষের সামনে হইহুল্লুর শুরু করে। এসময় যাত্রীরা রেল স্টাফদের মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে এঘটনাটি ঘটে। এসময় যাত্রীদের রোসানল থেকে অফিসের মালামাল হেফাজতের জন্য পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম গামী পাহাড়িকা ট্রেনটি শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে আটকা পড়ে। এসময় ট্রেনের কিছু যাত্রী নেমে এসে টিকেটের মুল্য ফেরতের জন্য হইহুল্লুর শুরু করে। এমনকি যাত্রীরা স্টেশনের মালামাল ভাংচুরের চেষ্টা চালায়।
যেসকল যাত্রী শায়েস্তাগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা যাবার জন্য অগ্রীম টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন কিংবা সিলেট স্টেশন থেকে টিকেট নিয়ে ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন তারা সংশ্লিষ্ট কাউন্টারে টিকেট ফেরত দিয়ে টাকা বুঝে নিতে।
এ দিকে দুর্ঘটনায় কবলিত বগিগুলোর মধ্যে ২টি তেলের ট্যাংক লিকেজ হয়ে তেল পড়তে থাকে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় নারী-পুরুষ, শিশুরা বালতি, মগ, হাড়ি নিয়ে তেল সংগ্রহে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অনেকেই রাস্তায় ভেসে যাওয়া তেলও সংগ্রহ করেন।
রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, লিকেজ হওয়া দু’টি ট্যাংকে প্রায় ৮০ হাজার লিটার তেল ছিল। যার অধিকাংশই পড়ে গেছে। এ তেলের বাজার মূল্য অন্তত ৫০ লাখ টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে চট্টগ্রামের (পূর্ব) প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন উদ্ধারে কাজ চলছে। একটি লাইন স্বাভাবিক হয়েছে। রাতেই ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে। রাত সাড়ে ১২ টায় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটি উদ্ধার কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।