সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
বড়লেখা (মৌলভীবাজার)প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্ত্রী, শাশুড়িসহ ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যার পর ঘাতক স্বামী নির্মল কর্মকার (৩২) আত্মহত্যা করেছে। এ সময় পালিয়ে রক্ষা পেয়েছে স্ত্রীর আগের পক্ষের ৮ বছরের শিশুকন্যা চন্দনা।
অনিয়মিত চা শ্রমিক নির্মলের ধারালো দায়ের কোপে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন নিহত বসন্ত বক্তার স্ত্রী কানন বক্তা (৩৪)।
রোববার (১৯ জানুয়ারী) ভোর ৫টায় উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের পাল্লাতল চা বাগানে এ ঘটনা ঘটে।
পারিবারিক কলহের জের ধরে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ ও এলাকাবাসী ধারণা করছেন। বেলা ২টার দিকে পুলিশ নিহতদের লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
ঘাতকসহ একই পরিবারের ৫ জনের লোমহর্ষক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসী স্তম্ভিত। উপজেলাজুড়ে বিরাজ করছে শোকের ছায়া।
চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, থানা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী পাল্লাতল চা বাগানের বাজার টিলার বাসিন্দা বিষ্ণু বক্তার মেয়ে নিয়মিত বাগান শ্রমিক স্বামী পরিত্যক্তা জলি বক্তাকে (২৮) প্রায় ৬ মাস আগে বিয়ে করে একসঙ্গে বসবাস করছে নির্মল কর্মকার (৩২)। জলির আগের স্বামীর ঘরের চন্দনা নামে ৮ বছরের একটি শিশু কন্যাও তাদের সঙ্গে বসবাস করে।
রোববার ভোরে নির্মল কর্মকার ও জলির মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল। নির্মল ধারালো দা দিয়ে স্ত্রী জলিকে কোপ দিলে সে দৌড়ে মা লক্ষ্মী ব্যানার্জীর (৪৭) ঘরে আশ্রয় নেয়। নির্মল সেখানে ঢুকে জলি, তার মা লক্ষ্মী ব্যানার্জী, ভাই বসন্ত বক্তা, ভাইয়ের স্ত্রী কানন বক্তা ও তাদের মেয়ে শিউলি বক্তাকে এলোপাথাড়ি কুপাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ জনের মৃত্যু ঘটে এবং আশংকাজনক অবস্থায় প্রতিবেশীরা কানন বক্তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এরপর ঘাতক নির্মল কর্মকার দা দিয়ে নিজের গলায় কুপাতে কুপাতে নিহত বসন্তের ঘরে ঢুকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। এ দিকে নিহত জলির সাবেক স্বামীর ঘরের কন্যা চন্দনা ঝগড়া শুরুর পরই পালিয়ে যাওয়ায় ঘাতক নির্মলের হাত থেকে বেঁচে যায়।
পাল্লাতল চা বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েতের সভাপতি কার্তিক কর্মকার জানান, রোববার বাগান বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা বাড়িতে ছিল। প্রতিবেশীরা নির্মলের পরিবারে ঝগড়া-ঝাটি চলতে শুনে। জলির মেয়ে চন্দনা পালিয়ে যাওয়ায় রক্ষা পায়। সকাল ৬টার দিকে লোকজন রক্তাক্ত লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। গুরুতর আহত কানন বক্তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
তিনি জানান, ঘাতক নির্মল কর্মকার অন্য এলাকার। সে প্রায় ২ বছর ধরে এ এলাকায় বসবাস করছে। গত ৬ মাস আগে জলিকে বিয়ে করে একসঙ্গে বসবাস করছিল। ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে কুপানোর সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে একে একে সবাই নির্মলের হাতে খুন হন।
বড়লেখা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসীম জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না পুলিশ তা অনুসন্ধান করছে।