প্রথমে হাবিবুর রহমান চলাফেরা করতে পারলেও গত এক যুগ থেকে বিছানায় পড়ে ছিলেন। এরমধ্যে সর্বশেষ মাসখানেক আগে তিনি নিজের খাট থেকে পড়ে যান। এতে তার ডান হাত ভেঙ্গে যায়। পরে রাজিয়া বেগম থাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে গত৬/৭দিন আগে হাবিবুর রহমানের ভাঙ্গা হাতে ইনফেকশন দেখা দিলে চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
পরে ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুদিন আগে ভাঙ্গা হাতে ওপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে না পারায় অপারেশন করাতে পারেননি। আর এই বিষয়টি হাবিবুর রহমান পাশের বেড়ের এক জনের সাথে শেয়ার করেন। পরে ঐ ব্যক্তি হাবিবুর রহমানের সামগ্রিক বিষয় জানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করে সাহায্যর জন্য আবেদন করেন। এ ভিডিও দেখেন আমেরিকা প্রবাসী হাবিবুর রহমানের বড় ছেলের ছেলের বউ। এরপর তিনি পরিবারের সদস্যদের দেখালে পরিবারের সদস্য অনুমান করেন তিনিই হারিয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমান।
পরে পরিবারের সদস্যরা শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। এসে হাবিবুর রহমানকে বিভিন্ন বিষয় জিঞ্জেস করেন। তবে হাবিবুর রহমান শুধু নিজের স্ত্রীর নাম বলতে পারছিলেন। এরপর পরিবারের সদস্যা নিশ্চিত করেন তিনিই হারিয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমান। এরপর পরিবারের সদস্যরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বের করে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ছয় তলার একটি কেবিনে শুয়ে আছেন হাবিবুর রহমান। তাকে ঘিরে আছেন নাতী কেফায়াত আহমদ। আছেন পরিবারের অন্যান্যরাও। সব মিলিয়ে হাসপাতালের কেবিন যেন এক উৎসবের রঙ। সবাই একে অন্যর দিকে থাকাচ্ছেন, কেউ কেউ কৌতুহলী প্রশ্নও করছেন হাবিবুর রহমানকে।
তবে তিনি দীর্ঘক্ষণ পরপর উত্তর দেন। বুঝতে পারার উপর নির্ভর করে তিনি প্রশ্নের উত্তর দেন। তবুও প্রশ্ন করছেন পরিবারের বিভিন্ন সদস্য। এসময় পরিবারের সদস্যরা তাকে দীর্ঘ দিন না আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা (তারা বলতে তিনি কাকে বুঝাতে চেয়েছেন তা খুলে বলতে পারেন নি) আমাকে দেয়নি। তবে নাম জিজ্ঞেস করতেই তিনি হাবিবুর রহমান বলে উঠেন। এসময় জয়গুন নেছা কার নাম জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান নিজের স্ত্রীর নাম বলে জানান।
রাজিয়া বেগম বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর আগে এক মাজারে হাবিবুর রহমানের আবার পরিবারের দেখা হয়। সেই সুবাধে তিনি আমাদের পরিচিত হয়ে উঠেন। আমিও তাকে সম্মান করে পীর সাহেব বলি ডাকি। এরপর থেকেই আমি তার দেখাশুনা করে আসছি।
হাবিবুর রহমানের ছেলে জালাল উদ্দিন বলেন, মুক্তিযোদ্ধের পরবর্তীতে আমার বাবা ব্যবসার উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যান। এরপর আমাদের পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুজি করেও তাকে পায়নি। এরমধ্যে ২০০০ সালে আমার মা মারা যান। তিনি যখন হারিয়ে যান তখন আমরা বিয়ানীবাজারের বেজগ্রামে থাকতাম। আর এখন বিয়ানীবাজার পৌরসভার কবসা এলাকায় বসবাস করছি।
নিজের বাবাকে ফিরে পাওয়ার ঘটনা অবিশ্বাস্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। কারণ দীর্ঘ ৪৮ বছর পরে তাকে আমরা পেয়েছি। দাকে পেয়ে পরিবারের সবাই খুশি।