করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

শ্রীমঙ্গলে হানাদারমুক্ত দিবস পালিত

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:  মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা মুক্তদিবস ছিল আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্ত হয় চা-বাগান ও পাহাড়ঘেরা এই উপজেলা।

দিবসটি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার শ্রীমঙ্গল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রশাসন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাব, শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগ, শ্রীমঙ্গল থানা প্রশাসন, কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদ ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ এর উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০টায় শ্রীমঙ্গল শহরে বের হয় শোভাযাত্রা।

শোভাযাত্রা শেষে ভাড়াউড়া বধ্যভূমিতে শহীদ স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এ সময় শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব।

পরে বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন সাধুবাবারস্থলি বধ্যভূমি ৭১-এ শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

এছাড়া আজ সন্ধ্যায় বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আলোক প্রজ্জ্বলন ও জাগরণী গানের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছিল। এর আগে হানাদার বাহিনীর সাথে লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শ্রীমঙ্গলে হত্যা করেছিল অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নারী-পুরুষকে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে সূচিত অসহযোগ আন্দোলন শ্রীমঙ্গলে তীব্র রূপ নেয়। অফিস-আদালতসহ শ্রীমঙ্গলের চা-শিল্পে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা।

দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনী দেশব্যাপী গণহত্যা চালিয়েছিল। শ্রীমঙ্গলে ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া চা-বাগান এলাকায় বধ্যভূমিতে ৪৭ জন চা শ্রমিককে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী।

ভাড়াউড়া চা-বাগানের কলেজ সড়কে নির্মিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধ আজও তার সাক্ষী বহন করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের হবিগঞ্জ রোডের ওয়াপদার অফিসের পেছনে একটি ছড়ায় ও বর্তমান বিজিবি সেক্টরের সাধু বাবার বটতলাখ্যাত (বর্তমান নামকরণ বধ্যভূমি-৭১) বেশ কয়েকটি স্থানে পাক বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। আর সেখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নিকুঞ্জ সেন, সমীর সোম ও অর্জুন দাসসহ বহু বীর সেনাকে। পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শ্রীমঙ্গলে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মুকিত লস্কর। এরপর একে একে শহীদ হন আনিস মিয়া (রিকশাচালক), ছাত্রলীগ নেতা মইনউদ্দিন, শম্ভু ভূমিজ, সমীর সোম, আব্দুস শহীদ, সুখময় পাল, সুদর্শন, আলতাফুর রহমান সহ আরও অনেকে।

এছাড়া পাকবাহিনী পালিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তাদের শেষ নির্যাতনের শিকার হন চা শ্রমিক নেতা ও চা শ্রমিকদের মধ্যে প্রথম গ্র্যাজুয়েট পবন কুমার তাঁতী। পাকিস্তানি সেনারা পবনকে হত্যা করে ওয়াপদার পাশের ভুরভুরিয়া ছড়ায় তাঁর লাশ ফেলে যায়।

মুক্তিযুদ্ধের একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই ও ভারতের সীমান্ত থেকে মুক্তিবাহিনী ক্রমশ ক্যাম্প অভিমুখে এগিয়ে আসার খবরে পাক বাহিনী ভীত হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর ভোরে তারা পালিয়ে মৌলভীবাজারে আশ্রয় নেয়। এর মধ্য দিয়ে মুক্ত হয় শ্রীমঙ্গল শহর। উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ