মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০২:১৯ পূর্বাহ্ন
করাঙ্গীনিউজ:
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী শূন্য হয়ে পড়েছে এক সময়ের দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ হিসেবে পরিচিত হবিগঞ্জ জেলা। বড় থেকে নিচু স্তরের সব নেতাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। প্রকাশ্যে নেই কোনো কর্মীও। জেলার ৪ জন এমপির মাঝে ৩ জনেরই সন্ধান নেই। তাদের মোবাইল ফোনসহ যোগাযোগের সব মাধ্যমই বন্ধ।
একমাত্র নিজ বাসায় অবস্থান করছেন সাবেক স্বতন্ত্র এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া। এদিকে এক সময় লোকে লোকারণ্য থাকত সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আবু জাহিরের বাসা। সেটি এখন নীরব নিস্তব্ধ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ৬তলা বিশিষ্ট বাড়িটি। যাদের পদচারণায় মুখরিত থাকত বাড়িটি তাদের কাউকেই আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। নিমিষের মধ্যেই হাওয়া হয়ে গেলেন সবাই।
সদ্য সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আবু জাহির, সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর চৌধুরী, সদ্য সাবেক এমপি ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল, সদ্য সাবেক স্বতন্ত্র এমপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচিত মুখ ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, হবিগঞ্জ পৌর মেয়র আতাউর রহমান সেলিম, যুবলীগ সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন নেতার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।
সদস্য সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি আমার হবিগঞ্জের বাসায় আছি। আমি সব সময় জনগণের পাশে ছিলাম, আছি। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে আমার কোনো দ্বিমত ছিল না। তবে আমি চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে যেন আমার এলাকায় কোনো প্রকার সহিংসতা না হয়। সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা কে কোথায় আছেন তা আমি জানি না। তবে গণমাধ্যমে নেত্রীর (শেখ হাসিনার) বক্তব্য দেখে অনুপ্রেরণা পাচ্ছি।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, হবিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুর দিকে বেশ দাপটে ছিল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলো। নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু ২ আগস্ট প্রথম দফায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আওয়ামী লীগ। এ সময় শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় নিমিষের মধ্যেই তারা পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগ অফিস ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি তৎকালীন এমপি মো. আবু জাহিরের বাসার সামনে রাখা কিছু মোটরসাইকেল আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় তারা আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। বিভিন্ন অলিগলি থেকে বের হয়ে ফের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। টানা ৬ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। পরে সর্বশেষ নিজেদের সব শক্তি নিয়ে তারা ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের মিছিলে গুলি ছুড়লে এ সংঘর্ষ বাঁধে।
জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীদের লাঠিসোটাসহ জেলা সদরে এনে জড়ো করা হয়। নেতাদের অনেকেরই সঙ্গে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। দফায় দফায় তারা গুলি ছুড়েন। এরপরও মাত্র কয়েক মিনিট টিকতে পেরেছেন। নিমিষের মধ্যেই অনেকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। কয়েকজন গিয়ে জড়ো হন এমপি মো. আবু জাহিরের বাসায়। তারা সেখান থেকে গুলিও ছুড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ওই বাসাটি ঘেরাও করে ফেলে। এ সময় গুলিতে মারা যান রিপন শীল নামে একজন। বিকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তারা অবরুদ্ধ ছিলেন। রাত ১১টার দিকে সেনাবাহিনী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শান্ত করে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করে। এরপর থেকেই মূলত আর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হবিগঞ্জ শহরে দেখা যায়নি।
ছাত্র জনতার ওপর গুলি চলিয়ে গণহত্যাকারী খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে হবিগঞ্জে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে জেলা বিএনপি। বুধবার বেলা আড়াইটায় শহরের শায়েস্তানগর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে শহর প্রদক্ষিণ করে চৌধুরী বাজার খোয়াই মুখে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
এ সময় পথসভায় সভাপতিত্ব করেন পৌর বিএনপির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী ফরিদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ। বক্তৃতা করেন বিএনপি নেতা ইসলাম তরফদার তনু, অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক দল আহবায়ক সৈয়দ মুশফিক আহমেদ।