মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন
করাঙ্গীনিউজ: অন্তর্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মনোনীত হয়েছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট আইনজীবী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি দায়িত্ব পালন করবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
এমন খুশির খবরে এলাকায় আনন্দ উল্লাস করছে তাঁর পৈত্রিক ভূমি চুনারুঘাট তথা হবিগঞ্জের মানুষ। রিজওয়ানা হাসান রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে ১৯৬৮ সালে জন্মগ্রহণ করলেও পৈতৃক নিবাস চুনারুঘাট উপজেলার ৬নং সদর ইউনিয়নের নরপতি গ্রামে। তার পিতা সৈয়দ মহিবুল হাসান ছিলেন তৎকালিন মন্ত্রী। বাবা-মায়ের একমাত্র কন্যা তিনি এবং পরিবারে সবার ছোট।
চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ লিয়াকত হাসানের আপন চাচাতো বোন।
স্থানীয়রা বলেন, ‘খবরটা শুনে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমরা নরপতি গ্রামের মানুষ গর্বিত। তিনি ঢাকায় বসবাস করলে ও যখনই হবিগঞ্জে কোন অনুষ্ঠান হতো তখনই তিনি পিতার পৈতৃক ভিটা নরপতি চলে আসতেন। যখনই এলাকায় আসতেন তখনই আত্নীয় স্বজনসহ এলাকার গরীব দুঃখী মানুষের সাহায্য সহযোগীতা ও তাদের খোঁজ খবর নিতেন। তিনি অত্যন্ত আন্তরিক এবং ভাল মনের মানুষ। রিজওয়ানা হাসান দীর্ঘদিন যাবত পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। এই লড়াইয়ে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের জীবনযাপনও বেশ কয়েকবার হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি একজন দুঃসাহসী নারী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ কণ্ঠ। এই সময়ে বাংলাদেশকে পূর্ণগঠনে নিঃসন্দেহে তিনি উত্তম ভূমিকা রাখতে পারবেন।
চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়াকত হাসান বলেন, ‘সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আমার ছোট বোন। পরিবারের পক্ষ থেকে আমি গর্ববোধ করি আমার চাচাতো বোন বর্তমান সরকারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায়। সে পরিবেশ নিয়ে কাজ করে, তাই কর্মব্যস্ত থাকায় নিজ বাড়িতে বেশি একটা আসা হয় না। সর্বশেষ আমাদের নিজ বাড়িতে প্রায় দুই বছর আগে এসেছিল।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন হবিগঞ্জ (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, আমরা হবিগঞ্জবাসী খুই আনন্দিত। কারন যিনি দীর্ঘদিন পরিবেশ উন্নয়ন ও জলবায়ূ পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন বর্তমান সরকার তাকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি মনে করি তার মাধ্যমে হবিগঞ্জসহ সারাদেশের পরিবশ, প্রতিবেশকে আরো সুরক্ষার জন্য তিনি নিরলস ভাবে কাজ করতে পারবেন। হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত করণ, হবিগঞ্জে শিল্পদূষণসহ বিভিন্ন পরিবশে উন্নয়ন প্রোগ্রামে তিনি একাধিকবার যোগদান করেছেন।
সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরুতে লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হলেও আইনের প্রতি আগ্রহ থাকায় পরে বিভাগ পরিবর্তন করে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এলএলএম সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের বাইরে বেশ কয়েকটি ফেলোশিপ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ করেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা তৈরির কারণে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিবেশ পুরস্কার”-এ ভূষিত হোন। তার পরিচালিত সংগঠন বেলা ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম ঘোষিত গ্লোবাল ৫০০ রোল অফ অনার্স পুরস্কারে ভূষিত হয়।
এছাড়া প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পেয়েছেন ‘পরিবেশের নোবেল’ খ্যাত “গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজ। তার এসব নানামুখি কর্মকান্ডের কারণেই ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকী তাকে “হিরোজ অফ এনভায়রনমেন্ট” খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে নেপালভিত্তিক ক্রিয়েটিভ স্টেটমেন্টস এ্যান্ড সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ প্রদত্ত “সিলেব্রেটিং ওমেনহুড এওয়ার্ড”প্রাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাঁচজন নারীর একজন। এছাড়াও তিনি ২০১২ সালে এশিয়ার নোবেল পুরস্কার হিসেবে বিবেচ্য ফিলিপাইনভিত্তিক রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন। ২০২২ সালে তিনি আন্তর্জাতিক সাহসী নারী পুরস্কার পান। গত ২০ বছর ধরে যুগান্তকারী আইনি মামলার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিশীলতা পরিবর্তন করে পরিবেশগত ন্যায়বিচারের ওপর জনকেন্দ্রিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। জনস্বার্থ আইন সংস্থা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী হিসেবে বন উজাড়, দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত জাহাজ ভাঙা এবং অবৈধ ভূমি উন্নয়নের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন এবং জিতেছেন। ২০০৯ সালে তিনি টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ৪০ জন এনভায়রমেন্টার হিরোর একজন হিসেবে মনোনীত হন এবং ২০১২ সালে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন। শক্তিশালী মহলের প্রতিরোধ ও নিজের এবং পরিবারের প্রতি সহিংসতার হুমকি সত্ত্বেও বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের স্থানীয় প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে আদালতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য দূর করা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই হবে উপদেষ্টা সরকারের মূল উদ্দেশ্য’। ‘আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে যাহাতে পালন করতে পারি সেজন্য সকলের নিকট দোয়া ও সহযোগীতা কামনা করছি’।#