মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন
করাঙ্গীনিউজ:
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাজধানীর শাহবাগ মোড়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কসহ বিভিন্ন মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা।
এ ছাড়া ময়মনসিংহে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই। শুক্র ও শনিবার জনসংযোগ কর্মসূচি এবং রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ধর্মঘট পালন করা হবে। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, হাই কোর্টে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল রাখার প্রতিবাদে টানা তৃতীয় দিনের মতো রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এদিন বৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে দেখা যায় তাদের। অন্যদিন দুপুর আড়াইটায় আন্দোলন শুরু করলেও গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেন তারা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে পরবর্তী তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে রাজু ভাস্কর্যের দিকে পদযাত্রা করেন আন্দোলকারীরা।
‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কোটাবৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘মেধাবীদের যাচাই করো, কোটা পদ্ধতি বাতিল করো’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীরা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ জানান। এ ছাড়া বিভিন্ন গানের মাধ্যমে তারা কোটাব্যবস্থার নিন্দা জানাতে থাকেন। এদিকে দুজন শিক্ষার্থীকে খালি গায়ে বুকে ও পিঠে কোটাবিরোধী স্লোগান লিখে আন্দোলনে অংশ নিতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে আগের দিনগুলোর মতোই শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ফার্মগেট-শাহবাগ, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ-সায়েন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়।
সাধারণ মানুষকে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা যায়। তবে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা জায়গা করে দেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে শুক্র, শনি ও রবিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলকারীদের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘চার দফা দাবির ওপর শুক্রবার অনলাইন ও অফলাইনে জনসংযোগ করা হবে। শনিবার বিকাল ৩টায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হবে এবং এদিন সমাবেশে রবিবারের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রবিবার সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হবে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘হাই কোর্টের শুনানি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসনমাত্র। আমি নির্বাহী বিভাগকে প্রশ্ন করতে চাই-তারা ২০১৮ সালে কী এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যা পাঁচ বছরেই চেঞ্জ হয়ে যায়। এখনো রাষ্ট্রপক্ষ কিংবা নির্বাহী বিভাগ থেকে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি এবং কোনো প্রকার আশ্বস্ত করা হয়নি। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব এবং কোনো প্রকার আপস করা হবে না। ’ শিক্ষার্থীরা বলেন, সংবিধানে স্বাধীনতা, সাম্যের যে স্পিরিট ছিল, সেই স্পিরিটের বাইরে গিয়ে গুটিকয় শিক্ষার্থী হাই কোর্টে রিট করে। কোটার পুনর্বহাল সারা বাংলার শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না। কোটার পুনর্বহাল বাতিল করার জন্য আমরা রাজপথে লড়াই করে যাব। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এসেও আজ আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। যতদিন না আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে, আমরা কঠোর প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত, ২০১৮ সালের কোটার পরিপত্র বহালের আগ পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। আমরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করছি। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের হুমকি : জাবি প্রতিনিধি জানান, আপিল বিভাগ কর্তৃক সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল আদেশের রায় বাতিল না হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক বেঞ্চ, টুল ফেলে অবরোধ করে রাখেন। এর ফলে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে নবীনগর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। তবে এ সময় শিক্ষার্থীরা রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।