মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৯:১৮ অপরাহ্ন
শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের (এনটিসি) জেনারেল ম্যানেজার (ফাইন্যান্স অ্যান্ড একাউন্টস) কেরামত আলীসহ ২/৩ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। কোম্পানিটির একজন শেয়ারহোল্ডার শাহ্ মো. হুমায়ূন কবীর বাদি হয়ে হবিগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ ও সিনিয়র দায়রা জজ আদালতে সম্প্রতি মামলাটি দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি ১৯৪৭ইং সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ ২ নং আইনের ৫ (২) ধারায় তৎসহ ৪২০/৪০৯/১০৯ দন্ড বিধিতে আমলে নিয়ে আগামী ৫ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের হবিগঞ্জের উপ-পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড সরকারের অধীনস্থ একটি লিমিটেড কোম্পানি এবং জয়েন্ট স্টক কর্তৃক নিবন্ধিত ও শেয়ারবাজারের অধীনে ব্যবসা পরিচালনা করে। কোম্পানিতে বাংলাদেশ সরকারের ৫১ শতাংশ এবং ৪৯ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ১৯৭৮ সালে ১২টি চা বাগান নিয়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড সরকারি কোম্পানি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার জগদ্বীশপুর চা বাগান, তেলিয়াপাড়া চা বাগান, চুনারুঘাট উপজেলার পারকুল চা বাগান, চন্ডিছড়া চা বাগান কোম্পানিটির অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। উল্লেখিত চা বাগান থেকে চা উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি ও রপ্তানি করে অর্জিত অর্থ বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং উল্লেখিত বাগানের শ্রমিকের মজুরি ও বাগান উন্নয়নে ব্যয় হয়। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিণত হলেও কিছু অসৎ, দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিশেষ করে ১ নং আসামী কেরামত আলী গংদের দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডের কারণে ২০১৭ সাল থেকে লোকসানে চলতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হয় এবং চলতি অর্থ বছরেও উল্লেখিত আসামী গংদের দুর্নীতির কারণে প্রায় শতকোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। লোকসানের কারণে উল্লেখিত চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি যথাসময়ে পরিশোধ সম্ভব হয় না এবং ব্যাংক বা অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট দেনার পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আসামী কেরামত আলী ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড-এ উপ-মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) পদে যোগদানের পর কোম্পানির অসৎ দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ক্ষমতাশালী কর্মকর্তায় পরিণত হন। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর কেরামত আলী পারিবারিক কারণ দেখিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বরাবরে পদত্যাগপত্র জমা দেন। (যার সিরিয়াল নং- ৫৭৫, তাং- ৩১/১০/২০২১)। ১১/১১/২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল টি কোম্পানী লিমিটেড এর পরিচালনা পর্ষদের ৬৩২তম বোর্ড সভায় পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করা হয়। এর পর বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক অধস্তন কর্মকর্তার কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য এক পত্রের মাধ্যমে কোম্পানি কেরামত আলীকে নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু কেরামত আলী উক্ত পত্র পাওয়ার পরও ৩১/১২/২০২১ তারিখে কোম্পানির নিয়োজিত লোকের নিকট দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোম্পানীর অসৎ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের যোগসাজশে স্বীয় পদে বহাল থাকেন এবং বেআইনীভাবে জিএম পদে পদন্নোতি লাভ করেন। আজ পর্যন্ত তিনি কোম্পানীর নিকট থেকে বেআইনীভাবে ২৭ মাসের বেতন বাবদ আনুমানিক প্রায় চৌত্রিশ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এনটিসিতে যোগদানের সময় আসামী কেরামত আলীর মূল বেতন ছিল পঁচিশ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারী চাকুরী আইন অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে এক সাথে বেতনে ৬/৭টি ইনক্রিমেন্ট যোগ করে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, সরকারী চাকরির বিদ্যমান আইনে গাড়ির জন্য ঋণ নিতে হলে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে ধারাবাহিকভাবে ৩ বছর চাকরি করতে হয়।
কিন্তু কেরামত আলী কোম্পানির দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তাদের হাত করে চাকরিতে যোগদানের ৪ মাসের মধ্যেই বেআইনীভাবে দশ লাখ টাকা কার লোন নেন। কোম্পানির অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে প্রকাশ হয়, কেরামত আলী ৩১/১২/২০২০ তারিখ পর্যন্ত কার লোন, অকটেন ক্রয়, রক্ষনাবেক্ষণ খরচ, টায়ার, টিউব, ব্যাটারি, ক্রয় পরিশোধিত কর ইত্যাদি দেখিয়ে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের উনিশ লাখ ছিয়ানব্বই হাজার নয়শত ষাট টাকা উত্তোলন করেছেন। এ ছাড়া কেরামত আলী ১০/১২/২০১৬ তারিখে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন। একই পদের সমকক্ষ সাবেক সচিব লোকমান হোসেন এবং কেরামত আলীর মূল বেতন সমান হলেও লোকমান হোসেনের বেতন থেকে প্রতি বছর আয়কর কর্তন করা হয় এগার হাজার পাঁচশত টাকা। কিন্তু কেরামত আলীর বেতন হতে প্রতি বছর আয়কর কর্তন করা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এভাবে কেরামত আলী আয়কর জমা না দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করেছেন। কেরামত আলী বেআইনীভাবে সরকারী চাকুরিতে কর্মরত থেকে বেতন, ভাতা, অন্যান্য সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করে স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজনের নামে বে-নামে ঢাকায় ও গ্রামের বাড়ীতে প্লট জমিসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করলে কেরামত আলীর অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের হিসাব বেড়িয়ে অসবে। মামলার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বাদি শাহ্ মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, একজন দুর্নীতিপরায়ন স্বেচ্ছাচারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জনস্বার্থে মামলাটি করেছি। আরও কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার আমার সঙ্গে রয়েছেন। আমরা যেহেতু শেয়ারহোল্ডার এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কোম্পানির (এনটিসি) অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া নৈতিক দায়িত্ব।