বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন
মোহাম্মদ জাহির মিয়া তালুকদার: সারাবিশ্ব আজ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বাংলাদেশও এর সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন সেবাকে ঢেলে সাজাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার দিকে দুর্বার গতিতে ধাবিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার সকল কর্মকান্ডের মধ্যে ডিজিটাল স্মার্ট সেবা প্রদান দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। অনলাইলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলী তেমনি একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
সারাদেশে অফলাইনে লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতেই যে কোন সরকারি কর্মচারীকে বদলী করা হয়ে থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও অফলাইনে আবেদন করেই বদলী হয়ে থাকেন। ২০২৩ খ্রি. থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলী অনলাইনে কার্যকর করা হয়। এ বছর মার্চ মাসের শেষের দিকে এ প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ১৭ এপ্রিলে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ার ডেডলাইন বেঁধে দেয়া হয়। যদিও পরে সেটা কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়।
গত বছরে সহকারী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষকগণ বদলীর সফটওয়ার ব্যবহার করে আবেদন করলেও এবার IPEMIS সফটওয়ার ব্যবহার করে প্রথম ধাপে বদলীর কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। বদলীর আবেদন সহকারী শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষক থেকে ক্ষেত্রমতে প্রধান শিক্ষক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, বিভাগীয় উপপরিচালক এবং মহাপরিচালক পর্যায়ে গিয়ে সয়ংক্রিয়ভাবে নম্বরের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে থাকে।
এরপর সহকারী শিক্ষককের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং প্রধান শিক্ষকের জন্য বিভাগীয় উপপরিচালক চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করার পর সহকারী শিক্ষকের বদলীর আদেশ সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং প্রধান শিক্ষকের বদলীর আদেশ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষর করে জারী করে থাকেন যা সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের আইডিতে প্রদর্শিত হয় এবং ডাউন লোড করে নিজে সংরক্ষণ করতে পারেন।
বদলীকৃত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার আইডিতে গিয়ে সহকারী শিক্ষককে যোগদান করানোর মধ্য দিয়ে অনলাই বদলী প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়ে থাকে।
এখন কথা হলো, বদলীর আবেদন কোন পর্যায়ে বাদ দিলে কি হতে পারে?
সেটা আবার অফলাইনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করা যাবে।
সেখানেও বিফল হলে অফলাইনে মহাপরিচালক বরাবর আবেদন পাঠালে সেখানে সব কিছু সঠিক থাকলে আপনি সফলভোবে বদলীর আদেশ পেতে পারেন।
তবে, এবার অন্ত: উপজেলা ( একই উপজেলার ভিতরে) বদলীতে কোন সমস্যা থাকলে মন্তব্যসহকারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করতে হয়েছে।
# তাহলে,চূড়ান্ত অনুমোদনকারির কাছে কি তাহলে লাইন দিতেই হবে ?
#অথবা সেটা যাতে রিজেক্ট না করে সে জন্য তদবির করতেই হবে ?
#এক কথায় যদি বলি সেটা হচ্ছে্ একটা বিশাল “না” ।
আপনি যখন অনলাইনে আবেদন করেছেন, সিস্টেমে সয়ংক্রিয়ভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন, সেখানে আর লাইনে দাঁড়িয়ে দর্শন চাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
আপনাকে সংশ্লিষ্ট অনুমোদনকারি কর্মকর্তা অবশ্যই চূড়ান্ত অনুমোদন দিবেন। এর বিকল্প আপাতত নেই।
তাই, কারো ফোনে, কিম্বা ডাকে সাড়া দিয়ে দৌড় শুরু না করে, কিম্বা কারো প্রলোভনে মোহিত না হয়ে একেবারেই ঘরে বসে থাকুন, আর আপনার আইডিতে চোখ রাখুন । যথা সময়ে আপনি আপনার বদলীর আদেশ সিস্টেম থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।
চলন্ত গাড়ি থেকে নামলে ভারসাম্য রাখার জন্য অযথাই আমরা দৌড়াই। বদলীর ক্ষেত্রেও এবার তাই হলো মনে হচ্ছে।
বিভিন্ন জনের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে দৌড়ঝাঁপ বা লাইনে দাঁড়ানো আর নিজেকে বোকা বানানো একই কথা ।
এতদিন বদলীর জন্য দৌড় ঝাঁপ যেভাবে করেছেন এখন সেই দিন শেষ ।
তাই, ক’দিন আগের বদলীতে যারা বিশাল লাইনে দাঁড়ালেন (অযথাই), মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত ছিলেন, বা ভয়ে একেবারে কুকড়ে গিয়ে ছিলেন, তারা অযথাই ভয় পেলেন আর নিজেকে কষ্ট দিলেন ।
হয়তো অযথা অজায়গায় কিছুটা ক্ষতির সম্মুখিনও হয়ে থাকতে পারেন। এটা একেবারেই তথ্য না জানার জন্য , আত্মবিশ্বাস না থাকার কারণে হলো।
এখন, প্রাথমিক শিক্ষায় কোন ধরনের কষ্ট ছাড়াই বদলী হতে পারেন।
তাই, আপনি সরকার প্রবর্তীত সিস্টেমে বিশ্বাস রাখুন, আর প্রলোভন প্ররোচনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিন ।
আপনি স্মার্ট, তো বাংলাদেশ স্মার্ট।
লেখক: ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, হবিগঞ্জ সদর, হবিগঞ্জ।