শাহ্ মোস্তফা কামাল, শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে: হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টার ও অনলাইনে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে কাউন্টার ও অনলাইনে একযোগে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়া মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই সমুদয় টিকিট উধাও হয়ে যায়। ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম উভয় পথের আন্তনগর ট্রেনগুলোর টিকিটের এক-ই অবস্থা। এরপরও কিছু টিকিট প্রত্যাশী নির্ধারিত সময়ে কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও কাউন্টার থেকে পাওয়া যায় না আন্তনগর ট্রেনের টিকেট নামক সোনার হরিণ।
একই অবস্থা অনলাইনের বেলাতেও ঘটে। নির্ধারিত সময়ের আগে থেকে উৎপেতে থেকে অবিরাম চেষ্টা করলেও অনলাইনে অ্যাপসের মাধ্যমে টিকেট পাওয়া সম্ভব হয় না। তবে কাউন্টার কিংবা অনলাইনে টিকেট পেতে ব্যর্থ হলেও রেলওয়ের কিছু অসাধু লোকজনের কাছে সব সময় আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর টিকেট পাওয়া যায়। কাংখিত টিকেটের দ্বিগুণ তিনগুণ দাম দিলে রেল কাউন্টারের সামনেই রেলওয়ের অসাধু কর্মচারীর হাতে পাওয়া যায় আন্তঃনগর ট্রেনের সব শ্রেণির টিকেট।
এমন কি শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশনে কাংখিত গন্তব্যের টিকিট না পেলে, উক্ত ট্রেনের টিকেট পাওয়া যাবে শমসেরনগর, কুলাউড়া, ভানুগাছ, শ্রীমঙ্গল, মাইজগাঁও, সিলেট, শাহজীবাজার, নোয়াপাড়া, মনতলা, আজমপুর রেল স্টেশন থেকে। এগুলোর ব্যবস্থা করে অসাধু রেল কর্মচারী ও কালোবাজারি চক্রটি।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম রেলপথের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর টিকেট কালোবাজারীদের কাছে হামেশাই পাওয়া যায়। তবে কারা এসব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট কালোবাজারে বিক্রি করছে তা জানেন না স্টেশনের ম্যানেজার। দায়িত্বশীলদের এমন ‘অন্ধত্বের সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী চক্র।
শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনের যাদের বিরুদ্ধে টিকেট কালোবাজারীর অভিযোগ রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে স্টেশনের বুকিং সহকারী মাজহারুল, সোহাগ মিয়া, কামরুল ইসলাম, সাহাব উদ্দিন, মঈনুল ইসলাম, বাবু, হৃদয় ও আলম। আন্তঃনগর টিকেট নিয়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাদের উপর মহলে ম্যানেজ থেকে শুরু করে সব সমস্যা সমাধান করে দেয় অসাধু চক্র।
গত ২০১৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমি আক্তার গোপন
সংবাদের ভিত্তিতে অসাধু রেল বুকিং সহকারী ও
বহিরাগত কালোবাজারীকে হাতে নাতে আটক করেন। পরে তাদেরকে জরিমানাসহ মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেন। জরিমানা ও মুচলেকা দেওয়ায় তারা কেউ বদলী ও অবসরে যান। বেশ কিছুদিন কালোবাজারে টিকেট বিক্রি বন্ধ থাকলেও বর্তমানে অসাধু চক্রটি প্রতিদিন আন্তনগর ট্রেনের টিকেট ছদ্মবেশে বিক্রি করছে।
শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী আলী হোসেন জানান, অনেক কষ্টে বেশি দাম দিয়ে একটি চট্টগ্রামের টিকিট কিনেছি। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারী মুক্ত রাখার জন্য টিকিটের গায়ে যাত্রীর নাম ও মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। তবে টিকিট বাহক যাত্রী, টিকিটে উল্লেখিত ব্যক্তিই কি-না তা যাচাই করা হয় না। ফলে, কালোবাজারে টিকিট বেচা-কেনার সম্ভাবনা থেকেই যায়।