নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সমকাল পত্রিকার প্রতিনিধি এম এ আহমদ আজাদের নাম ব্যবহার করে কলকাতা এক্সপ্রেস নামে একটি অনলাইন পত্রিকায় ভুয়া প্রতিবেদন ছাপানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে এম এ আহমদ আজাদ নবীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। (সাধারণ ডায়েরী নং ৫৭০ তাং ১০-০২-২০২৩ইংরেজি)
এ ব্যাপারে এম,এ আহমদ আজাদ বলেন, ‘কলকাতা এক্সপ্রেস নামে একটি অনলাইন পত্রিকায় গত ১২ ফেব্রুয়ারী তারিখে হবিগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের নামে একটি মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়। উক্ত সংবাদে প্রতিবেদক হিসেবে আমার নাম ব্যবহার করা হয়। অথচ ওই প্রতিবেদনটি আমি লিখিনি। এই নিয়ে প্রতিবাদ করায় কলকাতা এক্সপ্রেস কর্তৃপক্ষ আমাকে নানাভাবে হুমকি দেয়, তারা আমার উপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে আমার নামে সাংবাদিকতার নীতি লঙ্ঘন করে নানা রকম অপপ্রচার চালায়।’
তিনি বলেন, কলকাতা এক্সপ্রেস পত্রিকাটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা আমাকেও সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। এর বিপরীতে তারা আমার কাছ ইমেল করে তাদের বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধান রেদওয়ান আহমদকে তার বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠাতে বলে। আমি সেই বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠাই। আমার মতো প্রায় ৫০জন প্রতিনিধি জন প্রতি ১৮০০ টাকা পাঠান। ইমেলে উল্লেখ করা হয় সাবিক যোগাযোগ করতে হবে বাংলাদেশের রেদওয়ান আহমদের সাথে।
আহমদ আজাদ জানান, সেই পত্রিকার কথিত প্রতিনিধি ও সম্পাদকদের নিয়ে বানানো হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রেদোয়ান আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বাংলাদেশের ব্যুরো প্রধান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন এবং জানান যে তিনি যুক্তরাজ্যের বিবিসি বাংলা, দা গার্ডিয়ান, এবং নিউজ এজেন্সি এফপিএ সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে কাজ করেছন। প্রমাণ হিসেবে তিনি বিভিন্ন খবরের লিঙ্ক দিতেন যেগুলো একই নামের অন্য সাংবাদিকের লেখা। তিনি জানান নিউজ এজেন্সি এএফপি থেকে পুরস্কার পেয়েছেন।তাও সঠিক নয়। তিনি তার ফেসবুক পেইজে ঘোষনা দেন,ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বাংলা ভার্ষন কলকাতা এক্সপ্রেস তাই সব প্রতিনিধিকে পাসপোর্ট আপডেট করে ভিসা লাগানোর জন্য। গত ১ ফেব্রুয়ারী কলকাতার নদীয়াতে সম্মেলন হওয়ার ঘোষনায় বলা হয় ঐ সম্মেলনে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও আল জাজিরা টিভির চেয়ারপারসন সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি থাকার ঘোষনা দেয়া হয়।পরে ঐ তারিখে কেন সম্মেলন হয়নি, কেন হয়নি এখন পযন্ত কোন ঘোষনা দেয়া হয়নি।
দৈনিক সমকালের প্রতিনিধি এম এ আহমদ আজাদ বলেন, ‘আমি ইন্টারনেটে খোঁজ নিয়ে দেখি, আসলেই রেদওয়ান আহমেদ নামে বাংলাদেশে একজন সাংবাদিক আছেন যিনি দা গার্ডিয়ান পত্রিকা, বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি বাংলায়তে কাজ করেছেন। কিন্তু এই ব্যাক্তিই কলকাতা এক্সপ্রেসের রেদওয়ান কী না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। কারণ রেদওয়ান আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কলকাতা এক্সপ্রেসের সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র আমি খুঁজে পাইনি।’
একই অভিযোগ করেন সিলেটের ফটো সাংবাদিক রাফায়েত খান, তিনি বলেন, আমার কাছে থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে এখনো কোন কাড বা নিয়োগ দেয়া হয়নি। আমি বারবার যোগাযোগ করলেও কথিত রেদওয়ান আহমদ ফোন রিসিভ করেন না। পরে আমি আমার ফেসবুক বন্ধু আসল রেদওয়ান আহমদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি, কলকাতা এক্সপ্রেসের রেদওয়ান ফেইক।
সাংবাদিক রেদওয়ান আহমেদ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কলকাতা এক্সপ্রেস নামের কোনো পত্রিকার সঙ্গে তিনি সংযুক্ত নন। তিনি আরও বলেন ফেইক রেদওয়ান আহমদের কথায় আমরা ভিসা পাসপোর্ট করেছি। তিনি কখনও ভিডিও কল, বা তার ছবি কোন অনলাইনে ব্যবহার করেন না।তিনি কখনো নিজের ঠিকানা দেননি, তিনি আজাদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে নিউজে এনডিটিভি একটি ফেইক ছবি ইউজ করে নিজের ছবি বলে চালিয়ে দেন, বিষয়টি কয়েক জন কমেন্ট করার পর ছবি ডিলিট করে দেন। ঐরেদওয়ান দাবি করেন কলকাতা এক্সপ্রেস ভারতের নদীয়া থেকে শুভা দত্ত নামে একজন সম্পাদক রয়েছেন। জিডি এন্ট্রি করার পরে ঐ পত্রিকার প্রিন্ট লাইন থেকে ঠিকানা ও সম্পাদক শুভা দত্তের নাম তুলে দিয়েছেন। এখন তার কোন খোঁজ নেই আমি থানায় এব্যাপারে সিলেট সদর থানায় জিডি এন্ট্রি করেছি।
রেদওয়ান আহমদ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে দু-একজন সাংবাদিক ফেসবুকে কলকাতা এক্সপ্রেস পত্রিকায় কাজ করার আগ্রহ জানিয়ে আমাকে বার্তা পাঠায়। আমি তখন কিছুই বুঝতে পারিনি। এর কিছুদিন পর তাদেরই একজন আমাকে কিছু স্ক্রিনশট পাঠান। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করি যে, সেসব স্ক্রিনশটে আমার নাম, পরিচয়, কাজ, এবং সাংবাদিকতার স্বীকৃতি সব আরেকজন অবলীলায় নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছে।’
বিদেশে অবস্থানের কারণে এই ব্যাপারে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি উল্লেখ করে রেদওয়ান জানান, নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া একটি বিবৃতিতে কলকাতা এক্সপ্রেসের সঙ্গে জড়িত না থাকার বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার করেছেন।
আহমদ আজাদের জিডির ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করা হলে নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমদ বলেন বিষয়টি আমরা অত্যান্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। জিডিতে কোন ব্যাক্তির নাম উল্লেখ করা না হলেও একটি মোবাইল নাম্বার রয়েছে, এই নাম্বারটি ট্রেকিং করা হচ্ছে বতর্মানে উনি ঢাকার গাজিপুর অবস্থান করছেন। যিনি মোবাইল ইউজ করছেন তিনি দেশে অবস্থান করছেন। আমরা জিডিটি ফরেনসিক রিপোর্টরের জন্য সিআইডির ক্রাইম ডিপাটমেন্টে পাঠিয়েছি।সেই প্রতিবেদন আসলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।