বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০১:১০ অপরাহ্ন
এম, এ আহমদ আজাদ, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ): হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ কুশিয়ারা ডাইক মেরামতের জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বাধের সামনের বিকল্প জায়গায় বাধ দিয়ে বন্যার পানি আটকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মূল ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি এখনও বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় সহ ওই এলাকার ১০ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্যার্থ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। তারা বিভিন্ন উচু স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প করে পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করছেন।এখনো সরকারী কোন ত্রান সামগ্রী এলাকায় পৌছেনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করেছেন।
এদিকে কুশিয়ারা ডাইকের ভাঙ্গন পরিদর্শন করেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌহিদ বিন হাসান, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
সোমবার বিকাল ৬টা পর্যন্ত ডাইকের ভাঙ্গন বন্ধু না হওয়ায়া লোকজনের মধ্যে আতংক ও উদ্বেক দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধি হয়ে বিভিন্ন প্রায় ১০ হাজার একর ফসলী জমি ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনেরর পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ বিস হাসান জানিয়েছেন। তবে বন্যার পানি বৃদ্ধি থাকায় এ বাঁধ মেরামত কাজ ব্যহত হচ্ছে। পানি বন্ধি মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এদিকে গতকাল সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেলে বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্টের পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলার, রাজের বন্ধ, জোয়াল ভাঙ্গা হাওর, বেলি বিল, বড় হাওর, ঘুঙ্গিয়াজুরি হাওরের প্রায় ১০ হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। প্রতি ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ইতোমধ্যে উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বনগাও, ইসলামপুর, পারকুল, ঢালার পাড়, পাহাড়পুর সহ ১৫টি গ্রাম এবং দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক, কসবা, কুমারকাঁদা, ফাদুল্লা, রাধাপুর, দুর্গাপুর, জামারগাঁও সহ ২০টি গ্রাম এবং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বিবিয়ানা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
ইনাতগঞ্জ বাজারের পার্শবর্তী উমরপুর, ইনাতগঞ্জের বাজারের ছড়া, পুর্ববাজার কলনী, চন্ডিপুর, বটপারা, বাউরকাপন, মোকামপারা, রাজনগর সহ আশ পাশের শত শত গরীব পরিবারের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে।র্ দীঘলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাইদ এওলা বলেন, আমরা সারারাত পাহাড়া দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ রক্ষায় থাকলেও বিকালে হঠাৎ করে বিকট শব্দ হয়ে প্রায় ১০০ হাত জায়গা নিয়ে ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছে রাতের মধ্যে ভাঙ্গন বিশাল আকার ধারন করবে। আমার মনে হয় বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয়।
আউশকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন, বলেন, কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে তার ইউনিয়নেন প্রায় ২০ টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জোয়াল ভাঙ্গা হাওর, বেলী বিলের হাওরে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। রাতের বেলা পানি বৃদ্ধি পেয়ে কি হবে আল্লাহ ভাল জানেন। এখনো সরকারী ত্রান সামগ্রী তার ঐ এলাকায় পৌছেনি বলে জানান।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান কুশিয়ারা ডাইক পরিদর্শনকালে বলেন এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ মেরামতের জন্য সরকার অত্যান্ত যতœশীল। আমরা ইতিমধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছি, দু-এক দিনের মধ্যেই বাধ মেরামত করা হবে। এ বাধে যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তা খতিয়ে দেখা হবে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান জানান, প্রতি ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশংকা করছি কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে গেছে তাই এটা মেরামত করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কুশিয়ারা ডাইক হঠাৎ করে ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে কয়েকটি হাওরের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম,এল সৈকত বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৫৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙ্গে যাওয়া কুশিয়ারা ডাইকে মেরামতের জন্য আমাদের লোকজন কাজ করছে।