করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

নবীগঞ্জে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার নেপথ্যে…!

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০২১

এম এ আহমদ আজাদ,নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ): শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশ এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেয়ায় নবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন ছিল দেশব্যাপী আলোচিত ছিলো।

শনিবার নবীগঞ্জ পৌর নির্বাচনের প্রতি নজর ছিল উৎসাহী জনতার। কারণ উক্ত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে অংশ নিয়েছিলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর জামাতা গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী।তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। নবীগঞ্জ প্রচারণায় জম জমাট ছিলো নবীগঞ্জ।

বিশেষ করে কেন্দ্রীয় যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিষ্টার সায়েদুল হক সুমন ছিলো আলোচনায়। তিনি র্দীঘ এক সাপ্তাহের বেশি সময় প্রচারণায় ছিলেন। প্রতিদিন অংশ নিয়ে ফেসবুক লাইভে বক্তব্য দিতেন। তার কিছু ফেসবুক লাইভ বক্তব্য ব্যাপক সমালোচিত হয়। এতে ভোটের মাঠে নেগেটিভ প্রভাব পড়ে।আওয়ামীলীগের ঘাটি হিসাবে পরিচিত নবীগঞ্জে মন্ত্রী জামাতা মাত্র ২৬৪ ভোটে পরাজিত হন।

আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পরাজিত হবার নেপথ্যে কারন হচ্ছে, নেতাদের শুধু সেলফিবাজির মাধ্যমে প্রচারণা, ভোটের রাতে মারামারি, দলীয় কোন্দলে মাধ্যমে কিছু নেতাদের সক্রিয় অংশ গ্রহন না করা, ব্যারিষ্টার সুমনের উল্টাপাল্টা বক্তব্য ভাইরাল হয়,আওয়ামীলীগের সমাবেশে পেট্রোল বোমা হামলা ও মামলার বিষয় গুলো বেশি প্রভাব ফেলে। এসব বিষয় গুলো বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে। মানুষের সেন্টিমেন্ট বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে চলে যায়। তাই আওয়ামীলীগের ঘাটি হিসাবে পরিচিত নবীগঞ্জ পৌরসভায় অল্প ভোটে ব্যবধানে নৌকার পরাজয়। মন্ত্রীর জামাতা গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী কে ২৬৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছাবির আহমদ চৌধুরী (ধানের শীষ)।

এদিকে আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী ফলাফলের পরিবর্তণের অভিযোগ এনে নির্বাচন প্রত্যাখান করেছেন । শনিবার রাতে ফলাফল ঘোষণার পর নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নৌকার প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন – নহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট গ্রহণ শেষে ভোটকেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী আমি ৯৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হই, কিন্তু সরকারি হিসেবে আমাকে ৬৬৯ ভোট দেখানো হয়েছে। আমাকে ইচ্ছা করে ফলাফল টেম্পারিং করে পরাজিত করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন দুটি কেন্দ্রের ফলাফলে উল্টপাল্ট করা হয়েছে।এসব কেন্দ্রে এজেন্টের কোন স্বাক্ষর না নিয়ে ফলাফল ঘোষনা করা হয়। নহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার এসব ফলাফল পরিবর্তন করেছেন।

আমি এবিষয়ে আইনি লড়াই করে যাবো। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে দলীয় বক্তব্য উপস্থাপন করেন নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী।

বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, প্রাথমিক ফলাফলে মোট ১০টি কেন্দ্রে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৭৪৯। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৮৫। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুল আলম সুমন (জগ) ২৬১৯ ভোট। ২৬৪ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে বেসরকারি ফলাফলে বিজয়ী হন ছাবির আহমদ চৌধুরী। বিএনপির সমর্থকরা নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনন্দ মিছিল করেছেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াকে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এক টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

ভোট চলাকালীন সময় প্রত্যেকটি সেন্টারে ভোটরদের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা যায়। বিকেল ৪টার পর শুরু হয় ভোট গণণা। পরে কেন্দ্র থেকে ভোটের ফলাফল উপজেলা কন্ট্রোল রুমে নিয়ে আসেন স্ব স্ব ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারবৃন্দ। রাতে ফলাফল ঘোষণা করেন রির্টানিং অফিসার সাদেকুল ইসলাম। ফলাফলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছাবির আহমদ চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

নবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন- ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা মিলন পারুল (আনারস) তার প্রাপ্ত ভোট ১৮৬৪। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক মহিলা কাউন্সিলর জাকিয়া আক্তার লাকী (জবাফুল) প্রাপ্ত ভোট ১৬৩৬।

৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে পূর্ণিমা রানী দাশ(আনারস) প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন তার প্রাপ্ত ভোট- ১৩৪৪, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রোকেয়া বেগম (অটোরিকশা) তার প্রাপ্ত ভোট ১১৭২। ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর সৈয়দা নাসিমা বেগম (আনারস) প্রতীকে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন তার প্রাপ্ত ভোট ২৫৫০, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোছাঃ শেলী বেগম(চশমা) প্রাপ্ত ভোট ১৩৩৪।

কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন ১নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ জাকির হোসেন (পানির বোতল) প্রাপ্ত ভোট ৬০৭, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক কাউন্সিলর মোঃ মিজানুর রহমান (উটপাখি) প্রাপ্ত ভোট ৪৯৬। ২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন আঃ ছোবহান (পানির বোতল) প্রাপ্ত ভোট ৪৯৩, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ সুন্দর আলী (পাঞ্জাবি) প্রতীকে প্রাপ্ত ভোট ৪০৭।

৩নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন মোঃ নানু মিয়া (পানির বোতল) প্রাপ্ত ভোট ৬৮৯, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহ মোঃ রিজভী আহমেদ খালেদ(উটপাখি) প্রাপ্ত ভোট ৫৫৪। ৪নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর যুবরাজ গোপ(উটপাখি) প্রাপ্ত ভোট ৯৬৬। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রানেশ চন্দ্র দেব (টেবিল ল্যাম্প) প্রাপ্ত ভোট ৮০২। ৫ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন মোঃ লুৎফুর রহমান (পানির বোতল) প্রাপ্ত ভোট ৭৬১, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর সাংবাদিক এটিএম সালাম (টেবিল ল্যাম্প) প্রাপ্ত ভোট ৫৮০।

৬নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন- বর্তমান কাউন্সিলর জায়েদ চৌধুরী (ডালিম) প্রাপ্ত ভোট ৭৬৮, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ মোঃ আবুল কাশেম (পানির বোতল) প্রাপ্ত ভোট ৪৫৩। ৭নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন কাউন্সিলর পদে বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ কবির মিয়া (পানির বোতল) প্রাপ্ত ভোট ৮৮২, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রুহুল আমিন রফু (উটপাখি) প্রাপ্ত ভোট ৭৫৮। ৮নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বর্তমান কাউন্সিলর বাবুল চন্দ্র দাশ (টেবিল ল্যাম্প) প্রতীকে ৫৭৪ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর সন্তোষ দাস(পানির বোতল) প্রাপ্ত ভোট ৫৪৫।

৯নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন মোঃ ফজল আহমদ চৌধুরী (পাঞ্জাবি) প্রাপ্ত ভোট ৬৭৩, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শেখ জগলুল হাসান(পানির বোতল) প্রাপ্ত ভোট ৪৪৪।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ