করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

শায়েস্তাগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী জয়

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০

করাঙ্গীনিউজ: হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা ব্যালটের মাধ্যমে আবারও পূণরুদ্ধার করেছে বিএনপি। নির্বাচনে ৯শ ভোটের ব্যাবধানে নৌকাকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছে ধানের শীষ।

সোমবার রাত ৯ টায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম এ ফলাফল ঘোষণা করেন। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মাসুদউজ্জামান মাসুক পেয়েছেন ৩ হাজার ১শ ৪১ ভোট। আর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এম এফ আহমেদ অলি পেয়েছেন ৪ হাজার ৪১ ভোট।

এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী (আ’লীগ বিদ্রোহী) বর্তমান মেয়র মোঃ ছালেক মিয়া (নারিকেল গাছ) প্রতীকে পেয়েছেন ২৫শ ৯৯ ভোট, মোঃ ফজল উদ্দিন তালুকদার (চামচ) প্রতীকে পেয়েছেন ১৫শ ১০ ভোট, আবুল কাশেম শিবলু (জগ) প্রতীকে পেয়েছেন ১৪শ ৩০ ভোট ও ইমদাদুল ইসলাম শীতল (মোবাইল ফোন) প্রতীকে পেয়েছেন ৫শ ২২ ভোট।

কাউন্সিলর হিসেবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন- ১নং ওয়ার্ডে মোঃ রজব আলী (উটপাখি), ২নং ওয়ার্ডে মোঃ আবদুল জলিল (উটপাখি), ৩নং ওয়ার্ডে মোঃ মাসুক মিয়া (পাঞ্জাবি), ৪নং ওয়ার্ডে জালাল উদ্দিন মোহন ( পাঞ্জাবি), ৫নং ওয়ার্ডে মোঃ আব্দুল গফুর (পানির বোতল), ৬নং ওয়ার্ডে ফাহিন হোসেন (পাঞ্জাবি), ৭ নং ওয়ার্ডে মোঃ তাহির মিয়া ( উটপাখি), ৮নং ওয়ার্ডে আব্দুল আহাদ (পাঞ্জাবি), ৯নং ওয়ার্ডে আব্বাস উদ্দিন (পানির বোতল)।

সংরক্ষিত নারী কাউন্সিল হিসেবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন ১,২,৩ নং ওয়ার্ডে আছমা আক্তার কলম প্রতীকে ১২৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ৪,৫,৬নং ওয়ার্ডে তফুরা খাতুন চশমা প্রতীকে ১৮৯৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ৭৮,৯, ওয়ার্ডে আফসানা ডলি ১৪৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। মোট ১৮ হাজার ৩৫ ভোটের মধ্যে ১৩ হাজার ২২৪ ভোট কাস্টিং হয়েছে। যা শতকরা ৭৩ দশমিক ৬৭ ভাগ।

এদিকে, এই পৌরসভায় প্রথমবারের মত ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট প্রদানে ভোটারদের কিছুটা বিরম্বনায় পড়তে হয়েছে। তাছাড়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পূর্ন হয়েছে। দুই একটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে উৎসুক জনতার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা হলেও ভোট গ্রহণে কোন বাঁধা সৃষ্টি হয়নি বলে জানালেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

সরজমিনে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্যনিও। এক্ষেত্রে নারী ভোটাদের উপস্থিতি বেশি ছিল।

ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, দীর্ঘদিন পর সুন্দর পরিবেশে তারা ভোট প্রদান করেছেন। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করায় কোন জাল ভোট কিংবা কারচুরি সুযোগ ছিল না। তবে ইভিএমে আগুলের চাপ না মিলাতে বিরম্বনায় পড়েন অনেক ভোটার। অনেকে ভোট না দিয়েও বাড়ি ফিরেছেন।

এর আগে সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৪ টার মধ্যে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অনেক কেন্দ্রের ভেতরে ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকার কারণে সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত ভোট চলে। এ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৩৫। নির্বাচনে ভোটাধিকার গ্রয়োগ করেন ১৩ হাজার ২শ ৮৭ জন। এর মধ্যে ৪৪টি ভোট বাতিল বলে গণ্য হয়। প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ৭৩.৬৭।

বিগত জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং বিভিন্ন উপ-নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কম ছিল। বিশেষ করে হবিগঞ্জ জেলায় অনুষ্ঠিত উপজেলার পরিষদ ও বিভিন্ন উপ-নির্বাচনে সুষ্ট ভোট হয়েছে এমন কোন কেন্দ্রেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তাদের দাবি ছিল, একটি গণতান্ত্রীক রাষ্ট্রে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে না আসা জাতীর জন্য অশুভ ইঙ্গিত।

তবে বিশ্লেকদের সেই শঙ্কা কাটিয়ে উঠেছে এবারের পৌরসভা নির্বাচন। পুরনো সব হিসেবে-নিকাশ বাদ দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট প্রয়োগ করছেন কেন্দ্রে এসেছিলেন ভোটাররা। তীব্র শীত উপেক্ষা করে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে পৌঁছেছেন ভোট দিতে। সকালে কুয়াশা ও শীতের কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার সংখ্যা বাড়তে থাকে।

শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বড়চর কেন্দ্র, সুদিয়াখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় ভোটারদের লম্বা লাইন। বিশেষ করে নারী ভোটারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

উপস্থিত নারী ভোটারদের দাবি, বোরো মৌসুম চলায় অনেক পুরুষ সকালে জমিতে কাজে গিয়েছেন। তবে কাজ থেকে ফিরে ভোটে অংশ নেবেন।

কয়েকজন নারী ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএমের মাধ্যমে এই প্রথম তারা ভোট দিয়েছেন। এ কারণে এটি তাদের নতুন অভিজ্ঞতা।

এদিকে, সুদিয়াখলা কেন্দ্রে আসা সব ভোটার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোট দিতে না পারায় চারটার পরেও খোলা থাকে কেন্দ্র। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় চারদিক যখন অন্ধকার হয়ে যায় তখনও ভোটাররা তাদের ভোট প্রয়োগ করেছেন। রাত সাড়ে ৬টা পযন্ত ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এই কেন্দ্র ছাড়াও কয়েকটি কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের পরের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

শায়েস্তাগঞ্জ বালিকা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা সামছুন্নাহার বলেন, বাড়িত অনেক কাম আছে। এল্লই¹া সকাল সকাল বুট দিতাম আইছি। ভোট দিয়া গিয়া রান্না-বান্না করমু। তিনি বলেন, অকন ক্ষেত রোয়ার সময়। ইতারলাই¹া বাড়ির বেডাইন ক্ষেতে গেছইন। ক্ষেত থাইক্কা আইয়া বুট দিবা।

একই কেন্দ্রে ফিরোজা বেগম নামে এক নারী বলেন, বুট দিতাম না কেরেরেব ? ৫ বছরে একবার বুট দিতাম পারি, সব কাম পালাইয়া হইলেও বুট দিমু। কত বেইট্টাইন বোট দিত আইছে। লাইনে খাড়াইয়া বোট দেওয়নও একটা মজা আছে।

সুদিয়াখলা কেন্দ্রের ভোটার আফজল মিয়া বলেন, উপজেলার বুটে মানুষ বুট দিতে অইছে না। এই বুটে মানুষে বইরা গেছেগা। ৮টা থাকাইকা ভোট আরম্ব অইছে। কিন্তু মানুষ আইছে ৭টার থাইকাঅই। তাছাড়া ইবিঅম (ইভিএম) নিয়া আমরা টেনশন করছিলাম। কিন্তু দেখলাম ইবিঅম দিয়া বুট দেওয়ন আর সুজা।

শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশন এলাকার ব্যবসায়ি মো. সুলতান মিয়া বলেন, বিগত সময়ে দেখেছি ভোটকেন্দ্রে গরু-ছাগল ঘুমাতে। কিন্তু এই পৌরসভা নির্বাচনে গরু-ছালগ ঘুমাবে দূরের কথা ভোটারেরই জায়গা হচ্ছে না।

তবে সচেতন ভোটাররা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচন হওয়ার কারণে ভোটার উপস্থিত বেড়েছে। বিশেষ করে এই ভোটে কাউন্সিলরা নিজেদের উদ্যোগে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে উৎসাহি করেন।

এদিকে পৌরসভা নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন ৩ মেয়র প্রার্থী। তারা হলেন, ইমদাদুল ইসলাম শীতল (মোবাইল ফোন), মোঃ আবুল কাশেম শিবলু (জগ) ও মোঃ ফজল উদ্দিন তালুকদার (চামচ)। প্রদত্ত ভোটের ৮ ভাগের ১ ভাগ ভোট না পাওয়ায় তারা জামানত হারিয়েছেন। ফলাফল অনুযায়ী মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১৩ হাজার ২শত ৮৭।এর মধ্যে ইমদাদুল ইসলাম শীতল ৫শত ২২, মোঃ আবুল কাশেম শিবলু ১হাজার ৪শত ৩০ ও মোঃ ফজল উদ্দিন তালুকদার ১হাজার ৫শত ১০ ভোট পেয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ