• Youtube
  • English Version
  • মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

নির্বাচনের নতুন হাওয়া

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৮

করাঙ্গীনিউজ: আগামী সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল কী হবে সেটা পরের কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো কোনো নির্বাচন আর করতে পারবে না, এটা নিশ্চিত।

২০১৪ সালের মতো তারা নির্বাচন কমিশন ও পুলিশকে নির্বাচনের সময় কাজে লাগানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং শেষ পর্যন্ত করে যাবে। কিন্তু দিনকাল আর আগের মতো নেই। আগের নির্বাচনে জনগণ চোখ-কান বন্ধ করে চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল। এবার তারা চোখ-কান খুলে রেখে উঠে দাঁড়িয়েছে। এই পরিবর্তনই সামগ্রিক পরিস্থিতির মধ্যে পরিবর্তন ঘটিয়েছে, যা আগামী নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলতে বাধ্য।

আওয়ামী লীগের খুব শখ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার। এটা স্বাভাবিক। কে বা চায় নির্বাচনে পরাজিত হতে। এজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষে কিছু জরিপ কাজও চলছে দেশি-বিদেশি সংস্থার দ্বারা।

তাদের জরিপের ফল থেকে দেখা যাচ্ছে, দেশের যুব সম্প্রদায় থেকে শুরু করে জনগণের অধিকাংশই চান আওয়ামী লীগের জয়! এসব যে তৈরি করা তথ্য এতে সন্দেহ নেই। কারণ নির্বাচন সামনে রেখে যে রাজনৈতিক হাওয়া বইছে তার মধ্যে এ ধরনের কোনো ইঙ্গিত নেই। কিন্তু ইঙ্গিত বা ইশারার দিকে আওয়ামী লীগ তো তাকায় না। সে ধরনের যত ইশারাই থাকুক, তার কোনো পরোয়া না করে তারা ক্ষমতার গদিতে বসে নিজেদের কথাই বলে যায় এবং প্রচারমাধ্যমে তা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

আওয়ামী লীগের নেতানেত্রীরা মুখে যা-ই বলুন, তাদের অবস্থা জনগণের দাবি-দাওয়ার চাপে আর অনড় থাকছে না, তাদেরকে নড়াচড়া করতে হচ্ছে এবং অনেক সিদ্ধান্তই তাদেরকে নিতে হচ্ছে, যে বিষয়ে তাচ্ছিল্য ছাড়া অন্য কোনোভাবে তারা কথা বলত না। বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। সংলাপের ফল কী দাঁড়াল সেটা এক কথা। কিন্তু অবস্থা ছিল বরফের মতো, তা গলতে শুরু করেছে এবং গলার এই কাজটি করছে জনগণের আন্দোলনের উত্তাপ।

দুই দফা আলোচনার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আর আলোচনা সম্ভব নয় বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা সম্ভব। এ কথা অজানা নয় যে, আনুষ্ঠানিক আলোচনার থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অনেক বেশি ফলপ্রসূ। আসল কথা হল দুই দফার সংলাপ, তার ধরন যা-ই হোক।

বিরোধী দলকে অসুবিধায় ফেলার জন্য সরকার বেপরোয়াভাবে আইন-কানুনের কোনো তোয়াক্কা না করে বিরোধী দল, বিশেষত বিএনপির হাজার হাজার কর্মীকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে এবং অসংখ্য কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রান করছে। এর উদ্দেশ্য এসব বিরোধীদলীয় কর্মী যাতে নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে না পারেন।

কাজেই নির্বাচনের আগে এ কর্মীদের মুক্তি এবং মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি প্রয়োজন। এ দাবিও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। কিন্তু তার কোনো ফল এখনও দেখা যাচ্ছে না। কারণ বিরোধীদলীয় কর্মীদের ধরপাকড় এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা এখনও পর্যন্ত হচ্ছে। সরকার যে নির্বাচনের আগে এ ধরনের কাজ করছে, এর মধ্যে তাদের শক্তির কোনো পরিচয় নেই। নিঃসন্দেহে এর মধ্যে আতঙ্কের পরিচয় আছে।

এভাবে বিরোধীদলীয় কর্মীদের তারা ফেরারি অবস্থায় থাকতে বাধ্য করছে। কারণ গ্রেফতারের ভয়ে তারা পালিয়ে থাকছেন, নিজেদের এলাকায় কাজ করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতেই সরকার তাড়াহুড়ো করে ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছিল। এই তাড়াহুড়ো যে আওয়ামী লীগের জন্য সুবিধাজনক এবং বিরোধীদের জন্য অসুবিধাজনক, এটা সহজেই বোঝা যায়। এ কারণে বিরোধীপক্ষ সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে এবং নির্বাচন কমিশনকে বলছে নির্বাচনের তারিখ মাসখানেক পিছিয়ে দেয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের তারিখ কিছুটা পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছে।

দুই শিবিরের মধ্যে মনোনয়ন প্রার্থী অনেক। কিন্তু আওয়ামী লীগের মধ্যে এদের সংখ্যা অনেক বেশি। এ ছাড়া অন্য একটা পার্থক্য উভয়ের মধ্যে আছে। গ্রেফতার ও মামলার ভয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা অস্থির থাকায় ও পালিয়ে বেড়ানোর কারণে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন না পেলেও মনোনয়নপ্রাপ্তদের মতো নিজেদের প্রচার কাজ করতে পারছে না।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের লোকজন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় অনেকেই মনোনয়নপ্রাপ্তদের মতো করেই নিজেদের প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বেশ আগে থেকেই তারা এ কাজ শুরু করেছে।

এভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু করা আওয়ামী লীগের পক্ষে একটা অসুবিধার সৃষ্টি করবে। কারণ এটা জানা কথা যে, যারা মনোনয়ন পাবে না, তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে অনেকেই বিভিন্ন এলাকায়, বলা চলে প্রায় সব এলাকায়ই দাঁড়াবে। এবং এভাবে দাঁড়ালে তারা আওয়ামী লীগের বেশকিছু ভোট টেনে নেবে। কেউ কেউ হয়তো আওয়ামী লীগকে হারিয়ে জিতেও যাবে। কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে এটা হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা নেই। কারণ বিএনপির অতি সামান্যসংখ্যক ছাড়া এ ধরনের আগাম প্রচারণা করতে কেউই পারেনি। কাজেই বিএনপি ও বিরোধী জোট যাদেরকে মনোনয়ন দেবে তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ালে তার পক্ষে সেভাবে ভোট টানা সম্ভব নয়।

জনগণের জীবনের প্রাপ্তি এবং অর্থনীতির উন্নয়ন এক কথা নয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ইত্যাদি সত্ত্বেও এসব যে জনগণের জীবনে কোনো সুফল আনার নিশ্চিত শর্ত নয়, এটা বাংলাদেশের দিকে তাকালেই দেখা যায়। এটা ঠিক যে, এখানে এমন কোনো বিরাট খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ নেই, যে রকম দুর্ভিক্ষ ১৯৭৪ সালে হয়েছিল, যাতে লাখ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু অনাহারে মৃত্যু না হলেও এখন ব্যাপকভাবে গরিব মানুষের মৃত্যু হচ্ছে অপুষ্টিতে।

কোনোরকমে দুমুঠো ভাত খেয়ে মানুষ বেঁচে থাকছে। কিন্তু দেহে পুষ্টির দারুণ অভাবের জন্য নানা ধরনের রোগের দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলেই এসব লোকের বসবাস বেশি। অথচ সেখানে চিকিৎসার কোনো সুব্যবস্থা নেই। গরিব মানুষকেও শহরে আসতে হয় চিকিৎসার জন্য। তার ব্যয় নির্বাহের জন্য গরু-ছাগল থেকে জমিজমা পর্যন্ত অনেককে বিক্রি করতে হয়। বিক্রি করে দিয়ে নিঃস্ব হতে হয়। অর্থাৎ দেশের উন্নয়ন নিয়ে যে ঢাকঢোল পেটানো হয়, তার কোনো ফল গ্রামের ও শহরের গরিবদের কাছে পৌঁছায় না। শহরে এসে গরিব রোগীদের যেভাবে ও যে পরিবেশে চিকিৎসা নিতে হয়, তাতে তাদের অবস্থা গরু-ছাগল ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় না।

কাজের সন্ধানে যারা শহরে আসে, তাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে বাসস্থান। যেসব বাসস্থানে তাদেরকে থাকতে হয় সেগুলো গরু-ছাগলের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ, মানুষ তো দূরের কথা। অথচ এটাই হল বাস্তব অবস্থা। শিক্ষা ক্ষেত্রেও গ্রামের ও শহরের গরিবদের, শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের সন্তানদের কী অবস্থা এটা সবারই জানা। কাজেই দেশের ও অর্থনীতির উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনের উন্নতি মোটেই এক বিষয় নয়। বাংলাদেশে এই পার্থক্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার মতো।

নির্বাচনের সময় স্বাভাবিকভাবে যা হয়ে থাকে, আওয়ামী লীগ খুব জোরেশোরে প্রচার চালাচ্ছে যে তারা আবার ক্ষমতায় এলে জনগণের জীবনকে দুধ-মধুতে ভাসিয়ে দেবে। কিন্তু একটানা দশ বছর ক্ষমতায় থেকে যারা জনগণের জীবনের মৌলিক সমস্যাগুলোর দিকে তাকায়নি, তারা আবার ক্ষমতায় এলে সে কাজ করবে এ কথার ওপর জনগণের পক্ষে ভরসা রাখা মুশকিল।

বিএনপি কোনো ফেরেশতার দল না হলেও তারা একটানা বারো বছর ক্ষমতার বাইরে। কাজেই তারা একটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে, যদিও এদিক দিয়ে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাদের রেকর্ডও ভালো নয়।

গত দশ বছরে সব থেকে অসুবিধাজনক যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে সেটা হল নির্যাতন। খাওয়া, পরা, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদির সমস্যা তো আছেই। তবে সাধারণভাবে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে সেটা দম বন্ধ হওয়ার মতো। এত বেশি নির্যাতন গত দশ বছরে জনগণের ওপর হয়েছে, সর্বস্তরের জনগণের ওপর, তার হাত থেকে পরিত্রাণ তারা পেতে চান। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো উচ্চবাচ্য নেই।

উপরন্তু নির্বাচনের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তারা যেভাবে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড়, গ্রেফতার, মামলা-মোকদ্দমার মধ্যে ফেলে ব্যাপক নির্যাতনের যে ব্যবস্থা জারি রেখেছে, এটা একেবারে দম বন্ধ করে রাখার মতো। আগামী নির্বাচনে এটা যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, এতে সন্দেহ নেই।

এবারের নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, এর প্রতি শুধু দেশের লোকের নয়, বিদেশিদের, বিভিন্ন দেশের জনগণের দৃষ্টি যেভাবে এখন পড়েছে, তাতে মনে করা যেতে পারে যে ২০১৪ সালের মতো কিছু হওয়া এবার সম্ভব নয়। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন হওয়াই এখন সব মহলের কাম্য। এটা নিশ্চিত হলে নির্বাচনের ফলাফল কী হবে সেটা ভবিষ্যতের হাতে।(যুগান্তর অনলাইন)

১২.১১.২০১৮

বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ