করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

কমলগঞ্জে দুইজন চা-শ্রমিক নেতার শোকসভা অনুষ্ঠিত

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: পূর্ব-পাকিস্তান চা-শ্রমিক সংঘের অন্যতম নেতা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর-সুনছড়া চা-বাগানের প্রবীণ শ্রমিকনেতা সুখরাম নায়েক ও প্রবীণ চা-শ্রমিকনেতা সন্যাসী নাইড়ু’র মৃত্যুতে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে এক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।

রোববার (০১ নভেম্বর) সকাল ১১ টার সময় সুনছড়া চা-বাগানে আয়োজিত শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন চা-শ্রমিকনেতা জিবাধন নায়েক।

চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক হরিনারায়ন হাজরার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শোকসভার শুরুতে চা-শ্রমিকনেতা সুখরাম নায়েক ও সন্যাসী নাইড়ু’র স্মতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

শোকসভায় প্রয়াত সুখরাম নায়েক ও সন্যাসী নাইড়ু’র সংগ্রামী জীবনের উপর আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীন, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা,  ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের নেতা রজত বিশ্বাস, সুনছড়া বাগানের চা-শ্রমিকনেতা দিবা শুক্লবৈদ, স্যামুয়ের বেগম্যান, প্রশান্ত কৈরী, প্রয়াত সুখরাম নায়েকের ছোটভাই বুধুরাম নায়েক, লংলা বাগানের চা-শ্রমিকনেতা শিশুলাল লোহার ও চাতলাপুর চা-বাগানের নারায়ন নায়েক প্রমূখ।

সভায় বক্তারা বলেন প্রয়াত সুখরাম নায়েক ও সন্যাসী নাইড়– প্রখ্যাত চা-শ্রমিকনেতা মফিজ আলীর সাথে আলীনগর-সুনছড়া চা-বাগানসহ বিভিন্ন বাগানে চা-শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একজন সাহসী, দৃঢ়চেতা শ্রমিকনেতা হিসেবে চা-শ্রমিকরা যেমন সুখরাম নায়েক ও সন্যাসী নাউড়–কে শ্রদ্ধা করত তেমনি বাগান ম্যানেজমেন্টও তাঁদেরকে সমীহ করতো। সুখরাম নায়েক দীর্ঘদিন যাবত নানা রকম শারিরিক অসুস্থ্যতায় শয্যাসায়ী অবস্থায় গত ১০ অক্টোবর শনিবার সকাল ৭ টার দিকে তিনি সুনছড়া চা-বাগানের নিজ বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন। সন্যাসী নাইড়– গত ০২ মে’২০ সুনছড়া চা-বাগানের নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।

সভায় চা-শ্রমিকনেতারা সাম্প্রতিক মজুরি চুক্তির প্রেক্ষিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যখন মোটা চালের কেজি ৪০/৪৫ টাকা, আলু ৫০/৫৫ টাকা, পিয়াজ ১০০ টাকা, ডাল ১০০/১১০ টাকা, বাজারে ৬০/৭০ টাকার নিচে কোন সবজি মিলছে না সেই সময়ে দৈনিক মাত্র ১২০ টাকা মজুরিতে কি করে একজন চা-শ্রমিক ৬/৭ জনের পরিবার চালাবে? উপরন্ত শ্রমিকদের কাজের নিরিখ বাড়ানো ব্যাপারে ইউনিয়নের নেতারা চুক্তি করায় শ্রমিকদের মজুরি না বেড়ে আরও কমে যাবে।

উল্লেখ্য গত ১৫ অক্টোবর চা-শিল্প সেক্টরের নিন্মতম মজুরি বোর্ডকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশীয় চা-সংসদের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় চা-শ্রমিকদের মজুরি এ ক্লাস বাগানে দৈনিক ১২০ টাকা, বি ও সি ক্লাস বাগানে যথাক্রমে ১১৮ টাকা ও ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পৃথিবীতে বাংলাদেশের চা-শ্রমিকরা সবচেয়ে কম মজুরি পান উল্লেখ করে বক্তারা বলেন প্রতিবেশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চা-শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ১৭৬ রূপি(২০১ টাকা), আসামের চা-শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ১৪৫-১৬৭ রুপি(১৬৬-১৯১ টাকা), শ্রীলঙ্কায় চা-শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ১০০০ রুপি( ৪৬০.৪০ টাকা), নেপালে চা-শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ২৭৮ রুপি(১৯৮ টাকা), কেনিয়ার চা-শ্রমিকদের মজুরি মাসিক ১৫,৯৫০ শিলিং(১২৪৬৯ টাকা) থেকে ৫৩,৮৯৭ শিলিং(৪২১৩৩ টাকা), শীর্ষ চা উৎপাদনকারী দেশ চীনের শ্রমিকদের প্রদেশ ভিত্তিক নিন্মতম মজুরি ঘন্টা প্রতি ১৮.৪ থেকে ২৪ ইউয়ান(২৩৩ থেকে ৩০৫ টাকা)।

করোনাকালে পশ্চিমবঙ্গেরর চা-বাগান বন্ধ থাকার পরও শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে দুর্গা পূজায় তাদের বোনাস ১৮.৫% হতে বৃদ্ধি করে ২০% এবং বোনাসের সিলিং বাড়িয়ে ১৪,৫০০ রুপি(১৬,৫৬০ টাকা) করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের চা-শ্রমিক ন্যূনতম মজুরিসহ দৈনিক ২৩৯ রূপি(২৮৭ টাকা) মজুরি ও আসামের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ৩৫১ রূপি( ৪০১ টাকা) মজুরির দাবিতে দীর্ঘদিন হতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

বলাবাহুল্য অন্যান্য দেশসমূহের চা-শ্রমিকরা আমাদের থেকে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও অনেক বেশি পেয়ে থাকেন। অথচ আমাদের দেশের সরকার কথায় কথায় তাদের তথাকথিত উন্নয়নের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে প্রায়ই বলে থাকেন বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকে প্রতিবেশিদের থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে।

সরকারি তথ্য মতে দেশে মাথাপিছু আয় ২,০৬৪ ডলার(১,৭৫,৫২৪ টাকা), সেখানে চা-শ্রমিকদের সর্বোচ্চ আয় মাসিক ৩,৬০০ টাকা হিসেবে বার্ষিক ৪৩,২০০ টাকা মাত্র। এমতবস্থায় সরকার গঠিত নি¤œতম মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণভাবে ৬/৭ জনের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য দৈনিক ৬৭০ টাকা মজুরিসহ চা-শ্রমিক সংঘের ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ