বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০১:২০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিলেট: সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি আজ মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এমসি কলেজে পৌঁছে তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। কাজ শুরুর পর তদন্ত কমিটির সদস্যরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তারা ৩ দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন আর ৭ দিনের মধ্যে দেবেন চূড়ান্ত প্রতিবেদন।
তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউসি) পরিচালক (প্রশাসন) শাহিদুল কবির চৌধুরী বলেন, ‘এ রকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণধর্ষণ একটি নিন্দনীয় ঘটনা। যেহেতু আমরা শিক্ষার সঙ্গে জড়িত, তাই আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে তিনদিনের মধ্যে প্রাথমিক এবং সাতদিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে। আমরা এমসি কলেজের প্রশাসন অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। আগামীকালও আমরা সিলেটে আমাদের তদন্ত কাজ চালাবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই নির্যাতিতা নারীর সঙ্গে কথা বলাটা সহজ হবে না। তবু আমরা চেষ্টা করব কথা বলার। তদন্তের স্বার্থে এটি করা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ থাকার পরও ছাত্রাবাস কেন খোলা ছিল এ বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে।’
এর আগে গতকাল সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহিদুল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের এই কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই তদন্ত কমিটির সদস্যরা আজ মঙ্গলবার বিকেলে সিলেটে এসে পৌঁছান এবং এমসি কলেজে গিয়ে নিজেদের তদন্ত কাজ শুরু করেন। তারা এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই ঘটনা সম্পর্কে জানেন- এমন কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলবেন তারা। এর পাশাপাশি তারা ছাত্রাবাসে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে এমসি কলেজ বন্ধ থাকার মধ্যেও ছাত্রাবাস খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের থাকতে দেওয়া নিয়ে কলেজ প্রশাসন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর কাছ থেকে ওই গৃহবধূকে জোর করে তুলে নিয়ে ছাত্রাবাসের সামনে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় কলেজের সামনে তার স্বামীকে আটকে রাখে দুইজন। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের অনুসারী বলে জানা গেছে।
ওসিসি’তে চিকিৎসা গ্রহণের পর গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেট মহানগর হাকিম ৩য় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নিলার কাছে সেই রাতের ঘটনার জবানবন্দি দেন নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ। এ সময় তিনি ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। আদালত গৃহবধূর জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে পরিবারের জিম্মায় দিয়ে দেন।
চাঞ্চল্যকর এই মামলায় এখন পর্যন্ত এজাহারনামীয় পাঁচ আসামিসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিলেট রেঞ্জ পুলিশ ও র্যাব-৯। তাদের মধ্যে ছয়জনকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর ও পাঁচ নম্বর আসামি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার সভাপতি রবিউল হাসান, এজাহারভুক্ত আসামি মাহবুবুর রহমান রনি, সন্দেহভাজন আসামি রাজন ও আইনুদ্দিন। আর গতকাল সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া মাহফুজুর রহমান মাসুমকে সিলেটের শাহপরাণ (র) থানায় রাখা হয়েছে।