মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: কনকনে শীতের রাত। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১২টা পেরিয়েছে। হিম শীতল বাসাতে তখন প্রাণ জবুথবু। সারাদিনের কাজের ক্লান্তির পর মাটির ছাপড়া ঘরে কোনো মতে ঘুমিয়ে পড়েছেন চা শ্রমিক পরিবারগুলো। প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য তাদের নেই নূন্যতম শীতবস্ত্র। চা পল্লীতে তখন গভীর রাতের নিস্তব্ধতা। এমন সময় হঠাৎ চা শ্রমিকদের দরজায় কড়া নাড়িয়ে একজন বললেন ইউএনও স্যার আপনাদের জন্য কম্বল নিয়ে এসেছেন।
কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় চা শ্রমিকদের কষ্ট নিজের চোখে দেখতে বের হন নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান। এসময় তিনি বড়লেখা উপজেলার বাহাদুরপুর ও অহিদাবাদ চা বাগানের ১৬০ পরিবারে কম্বল দেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এই কম্বলগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে বাহাদুরপুর ও অহিদাবাদ চা বাগানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন ইউএনও। রাত আনুমানিক ১২টায় পৌঁছান অহিদাবাদ চা বাগান। বাগানের শ্রমিক পরিবারের লোকজন তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। এমন সময় চা বাগানের দক্ষিণ লাইনের বাবু রাম রিকমনের ঘরের দরজায় কড়া নাড়লেন ইউএনও। ঘুম ঘুম চোখে ঘরের দরজা খুলেন বাবু রাম রিকমন। তখন পরম মমতায় বাবুরামকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে ধরেন ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান। বাবু রাম রিকমনের মতো এই বাগান ও বাহাদুরপুর চা বাগানের ১৬০ পরিবার পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বরাদ্দ হওয়া কম্বল। গভীর রাত পর্যন্ত দুটি চা বাগানে কখনো গাড়িতে, কখনো হেঁটে তিনি কম্বল বিতরণ করেন। এসময় শ্রমিক পরিবারের লোকজনের সাথে তিনি কথাও বলেন।
কম্বল পাওয়া অহিদাবাদ চা বাগানের বাবু রাম রিকমন বলেন, ‘হঠাৎ দরজার সামনে লোকজন ডাকছে। দরজা খুলে দেখি ইউএনও স্যার আমাদের জন্য কম্বল নিয়ে এসেছেন। উনি আমাগো দুখের কথা চিন্তা করি কম্বল নিয়ে আইছে। এখন শীতের জ্বালায় আমরা মরমু না।’
এসময় ইউএনও’র সাথে ছিলেন বড়লেখা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উবায়েদ উল্লাহ খান, উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আহমদ জুবায়ের লিটন ও দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন, একাডেমিক সুপারভাইজার শাখাওয়াত হোসেন, অহিদাবাদ চা বাগানের ব্যবস্থাপক কাজল চন্দ্র তালুকদার প্রমুখ।
ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘বড়লেখায় প্রচণ্ড শীত পড়েছে। বাগানের গরিব চা শ্রমিকদের শীত-কষ্ট নিজের চোখে দেখার জন্যই তাদের ঘরে ঘরে কম্বল নিয়ে যাই।’