• Youtube
  • English Version
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন

করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

আর্থিক দুরবস্থা দমাতে পারেনি আবুল খায়ের পাটোওয়ারী স্যারকে

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২

ফয়সল আহমদ রুহেল : বাবা ছিলেন দিনমজুর। পরিবারের নিত্যসঙ্গী ছিল দারিদ্র্যতা। আর সেই পরিবারের স্বপ্ন ছিল ছেলে আলেম হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি। ছেলের লেখাপড়া খরচ জোগান দিতে বাবা অন্যের বাড়িতে খাটুনি। ছাত্রজীবনে দু’বেলা খাওয়ার বিনিময়ে অন্যের বাড়িতে লজিং থাকা। পরিবারের স্বপ্ন পূরণে কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্যদিয়ে খেলাপড়া চালিয়ে যাওয়া। পরিবারের সেই স্বপ্ন এক সময় পূরণ করেন মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারী। তিনি হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাজী আব্দুল হেকিম ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের প্রাক্তন ধর্ম শিক্ষক।

 

জন্ম : মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারী ১৯৬১ সালের ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার নরহরিপুর এর দেবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত শরাফত আলী, মাতা নোয়াবজান বিবি। পিতার পেশা ছিল কৃষিকাজ। বর্তমানে কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার পোমগাঁও এর বচইড় গ্রামে বসবাস করছেন। এই শিক্ষকের ভাই-বোন-৩ জন। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি।

 

পারিবারিক : শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারী ৫ ছেলে-মেয়ের জনক। তাদের মধ্যে তিন মেয়ে বড়। তিন মেয়ের বিবাহ হয়ে গেছে। বড় ছেলে কামিল পাশ করে একটি মসজিদে ইমাম হিসেবে চাকরিরত। আর ছোট ছেলে মেট্রিক পাশ করে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে।

শিক্ষা জীবন : মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারীর শিক্ষাজীবনের শুরুতে ভর্তি হন কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার নরহরিপুর কামিল মাদ্রাসায়। ওই মাদ্রাসায় ১৯৬৫ সালে নাজেরা ( নূরানি ) শিক্ষার মাধ্যমে বাংলা শিক্ষা গ্রহণ করেন। তারপর ওই মাদ্রাসায় ইয়াজদাহমে ভর্তি হন। ১৯৭২ সালে ঢাকা মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় একই মাদ্রাসা থেকে ২য় শ্রেণীতে পাশ করেন। এরপর ১৯৭৪ সালে আলিম পরীক্ষায় ৩য় স্থান অর্জন করেন। সর্বশেষ ১৯৭৮ সালে একই মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষায় ৩য় বিভাগে পাশ করেন।

কর্মজীবন : মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারী স্যার ১৯৭৯ সালে হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও কুমেদপুর মক্তব থেকে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৮৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাজী আব্দুল হেকিম ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে ধর্ম শিক্ষক পদে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি সেখানে অত্যন্ত দক্ষতার সহিত প্রায় ৩৫ বছর ৯ মাস কাজ করে ২০২১ সালের আগষ্ট মাসে অবসরে চলে যান। চাকরিকালীন সময়ে হবিগঞ্জের উপজেলার নরজাকান্দায় দীর্ঘ ৩০ বছর থেকে একটি মসজিদে ইমামতিও করেন।

শৈশব : শ্রদ্ধেয় মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারীর স্যার ছোট বেলায় পড়াশোনার চালাতে গিয়ে অন্যের বাড়িতে থেকেছেন লজিং। শুধু খাওয়ার মাধ্যমে। সংসারের চরম অস্বচ্ছলতার কারণে বাবা দিনমজুরী করে ছেলের লেখা পড়ার খরচ চালাতেন। মায়ের খুব আশা ছিল ছেলে লেখাপড়া করবে। আর পরিবারের সকলের আশা ছিল ছেলেটা যেন একজন আলেম হয়। মায়ের ও পরিবারের কথা রেখেছেন মো. আবুল খায়ের। জীবনে চলার পথে অভাব অনটন পিছু ছাড়েনি। তবে সহজেই হাল না ছেড়ে এত প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছেলেটির।

বিদায় অনুষ্ঠান : গুণী শিক্ষক মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারী স্যারের বিদায় অনুষ্ঠান স্কুল কমিটির সভাপতির সাহেবের চেম্বারে খুব ছোট আকারে হয়েছে। সভাপতি সাহেব করুনার কারনে অনুষ্ঠান বড় করেননি। তাই ছাত্রছাত্রীরা স্যারকে অনেকে ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নেন। তারা খুব মর্মাহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা চেয়েছিলেন বড় আকারে বিদায় অনুষ্ঠান হোক। কিন্তু তিনি তাদের শান্তনা দিয়েছেন। গুণী শিক্ষক মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারী মহৎ কর্ম দিয়েই অসংখ্য শিক্ষার্থীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। ভালো কাজ করলেই কেবল মানুষের ভালোবাসা অর্জন করা যায়। মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার চেয়ে আনন্দেরও কিছু নেই।

গুনী এই শিক্ষক ২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশনের জরিপে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সন্মাননা পদকে ভুষিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ফাউন্ডেশন হবিগঞ্জ জেলার নয় উপজেলার ১৮ জন আদর্শ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে পদক দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)। পদকপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জন শিক্ষককে আর্থিক সহযোগিতাও দেবে সংস্থাটি।
ছাত্র-শিক্ষকের যত ভালোবাসা : মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারী স্যার ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে বাড়িতে রাতে যেতেন। তারা লেখাপড়া নিয়মিত করে কিনা দেখতে। অনেক ছাত্ররা বিদেশ থেকে এই শিক্ষকের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। অনেক সময় তারা স্যারের জন্য জামা কাপড় নিয়ে আসেন। দুবাই প্রবাসী মো. হারিছুল হক তার দানের কথা আজও ভুলতে পারেননি। কম্বল থেকে ধরে অনেক কিছু আনতেন এই শিক্ষকের জন্য। হিন্দু ছেলেরাও অনেক কিছু স্যারের জন্য বিদেশ থেকে নিয়ে আসতেন। আবুল খায়ের স্যার তাদের জন্য দোয়া করেন। শিক্ষক ছাত্রের মধ্যে এমন ভালোবাসার বন্ধন অনেক কমই দেখা যায়। একজন শিক্ষক অবসর নেওয়ার পরও ছাত্ররা ভুলে যায়নি শিক্ষকের ভালোবাসা ও বদান্যতার কথা।

পরিবারের আর্থিক দুরবস্থা মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারীকে পোড়ালেও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহকে দমাতে পারেনি। এভাবেই শুরু হয় তার নতুন জীবন। সেখান থেকেই মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারীর বদলে যাওয়া শুরু। এ রকম না বলা আরো অনেক কঠিন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে যাওয়া মানুষটি এক সময় শিক্ষকতায় এসে শিক্ষার্থীর হৃদয় জয় করেছেন। তিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর শিক্ষকতা জীবনে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ জাগ্রত করেছেন। এই শিক্ষক শিক্ষকতার পাশাপাশি মসজিদে ইমামতি করেছেন। বর্তমানে এই শিক্ষকের শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। শ্রদ্ধেয় মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারী স্যারের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ