করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

পুতিন, এ যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন কি না এখনো অজানা!

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: সোমবার, ৭ মার্চ, ২০২২

নুরুল আমিন শাহজাহান:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের অবসান পর্যন্ত, একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলেও দেশটির পতন হয়েছিল আভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছিল এর সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের হাত ধরে। তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন ১৯৮৫ – ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ মোকাবেলা করতে গর্বাচেভ অনেকগুলো সংস্কার নীতি বাস্তবায়ন করেছিলেন।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল, লিউনিক বেজনিয়ার্ডের শাসন আমলে কিছু অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সামরিক সিন্ধান্ত। সামরিক শক্তি ও মহাকাশ অভিযানের যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলতে বেপরোয়া হয়ে উঠছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। এসব কারণে আর্থিক খাতের বুঝা বহন করতে গিয়ে উৎপাদন ঘাটতিও স্থবিরতার দেখা দেয়। এছাড়া অত্যাচারী কমিউনিস্ট শাসকের অত্যাচারের দরুন সরকার জনগণের আস্থা হারাচ্ছিল। ফলে সৃষ্টি হয়েছিল গণ-অসন্তোস।

নতুন নেতা হিসাবে মিখাইল গর্বাচেভ ক্ষমতায় এসে দুটি সংস্কার নীতি গ্রহণ করেছিলেন। একটি হল Glasnost বা স্বচ্ছতা নীতি। কমিউনিস্ট পার্টির গোপন পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে অনেকদিন ধরে বিরোধী মত দমন করে আসছিলেন। Glasnost নীতি এ ধরণের দমননীতি বন্ধ করে পরোক্ষ ভাবে স্বাধীনতার অনুপ্রেরণা যোগায়।

অপরটি ছিল Perestroika বা পূর্ণগঠন নীতি। এটা ছিল সরকার নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসা। যার লক্ষ্য ছিল সম্পত্তির মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা। এই স্বচ্ছতা ও পূর্ণগঠন নীতি রাজনৈতিক ও অর্থনীতির ধারাকে একেবারে বদলে দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত! এত ব্যাপক পরিবর্তন এত বছরের রাস্ট্র শাসনকে বদলে দিতে ব্যর্থ হয়।

ফলে দেশের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মানের ব্যাপক অবনতি ঘঠে। ধীরে ধীরে স্বচ্ছতা ও পুনর্গঠন নীতির ফলস্বরূপ পূর্ব ইউরোপের রাজ্যগুলোতে উন্মুক্ত নির্বাচনের আয়োজন করতে শুরু করে। পোল্যান্ডের নির্বাচনে একটি নন- কমিউনিস্ট পার্টি বিজয়ী হয়। ফলে পোলেন্ড স্বাধীনতা ঘোষণা করে সর্বপ্রথম সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসে। এরপরে অন্যান্য নির্ভরশীল রাজ্যগুলো স্বাধীনতার প্রচেষ্টা শুরু করে। এ প্রচেষ্টা সমগ্র সোভিয়েত ইউনিয়ন জুড়ে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

১৯৯১সালের আগস্ট মাসে একদল বিদ্রোহী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য – গর্বাচেভের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। বিদ্রোহীরা সফল না হলেও পরবর্তীতে গর্বাচেভ পদত্যাগ করেন। এই অভ্যুত্থান চলাকালেই একাধিক বাল্টিক রাজ্য স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই, রাশিয়া, বেলারুশ, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কাজাকিস্থান, মালদোভা, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিস্তান, তুর্কেমিনিস্তান সহ মোট ১৫টি রাজ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ত্যাগ করে। এর মধ্য দিয়েই ৬৯ বছরের শক্তিশালী সোভিয়ের ইউনিয়নের পতন হয়।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোনো বিদেশী পরাশক্তির আক্রমণে নয়, বরং নিজেদের উচ্ছাংঙ্খা ও অভ্যন্তরিন অসন্তোসের কারণেই সোভিয়ের ইউনিয়নের পতন সহ বিভিন্ন নামকরা প্রেসিডেন্টেরও পতন হয়েছে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে রাশিয়া – যে ক’জন উল্লেখযোগ্য প্রেসিডেন্ট শাসন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ভ্লাদিমির পুতিন। ১৯৭৫ সালের কেজেবি’র সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগদান করে অসীম সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার দ্বারা তিলে তিলে ঠাই করে নিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আসনে। তাঁর নেতৃত্বে রাশিয়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে বিশ্ব দরবারে জায়গা করে নিয়েছে। নিজ দেশের মানুষের কাছেও একজন বীর হিসেবে আসিন হয়েছেন। কিন্ত বর্তমানে ইউকেন-রাশিয়া যুদ্ধ কি তার ও তার দেশের জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি ক্ষীণ হতে যাচ্ছে?
-পুতিন কি বাইডেনের পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছেন?
-রাশিয়া কি সোভিয়েত ইউনিয়নের মত খন্ড-বিখন্ড হতে চলছে?
-পুতিন কি ভুল পথে পা দিয়েছেন?
-পুতিন কি নিজ দেশেই পরাজিত হবেন?
– রাশিয়া কি আবারো ভংগোর অর্থনীতিতে পতিত হবে?
– এ যুদ্ধের শেষ কেথায়?
-এ যুদ্ধে কার কি লাভ ?
এমন হাজারো প্রশ্ন উঠতেই পারে। কেননা, রাশিয়া-ইউকেন বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র। এই বন্ধুত্বে ছির ধরাতে আমেরিকা ও ন্যাটো যে ঘি ঢেলেছিল তাতেই সফল হয়েছে। ইউকেনের প্রতি ভালবাসা দেখিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ভুমধ্যসাগরে সৈন্য সমাবেশ করলেও রাশিয়া, ইউকেন আক্রমণের সাথে সাথেই ফিরেয়ে নিয়ে যায় তাদের সৈন্য বাহীনিকে। তাতেই বুঝা যায়, জেলেনেঙ্কির প্রতি ভালাবাসা ও পুতিনের বিরুদ্ধে ঘৃনা একটা ফাঁদ মাত্র। যে ফঁাদ- রামায়ণে বর্ণিত পঞ্চবটিতে শ্রীরাম চন্দ্রের – লঙ্কাপতি রাবনের ভাই খর-দুশনের বিরুদ্ধে “মোহিনী অস্র” প্রয়োগের মতই অবিকল। যা খর-দুশনের বাহীনি একে-অপরের মাঝে যুদ্ধ করে নিজেরা নিজেরাই নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল।

বিষয়টা আজকের রাশিয়া-ইউকেনের মতই অনুরূপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কৌশলে যুদ্ধ বাঁধিয়ে রাশিয়াকে থামিয়ে দেয়ার পায়তারায় হয়ত সফল হয়েছে। যুদ্ধে রাশিয়ার বিজয়ী হলেও, বিচক্ষণ পুতিনও হয়ত এ ছালে ভুল করে পা দিয়েছেন। কেননা, এ যুদ্ধ শুরু করতে সহজ হলেও শেষ করা কঠিন হবে। পুতিন, এ যুদ্ধ শেয করতে পারবেন কি না এখনো অজানা। হয়ত; অনেক সৈন্য মারা যাবে, দেশ অর্থনৈতিক ভাবে বিপদস্ত হবে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে পিছিয়ে যাবে, বর্হিবিশ্বের সাথে সম্পর্ক বিচিন্ন হবে। ফলে নিজ দেশেই পুতিন বরাবরের ন্যায় বিদ্রোহের শিকার হতে পারেন।ক্ষমতাচ্যুত হতে পারেন পুতিন। দেশ থেকে বিছিন্ন হতে পারে আরো কয়েকটি রাজ্য। থমকে যেতে পারে দেশের অগ্রগতির জয়রথ।

লেখক: সহকারী শিক্ষক (আইসিটি )মিরপুর দাখিল মাদ্রাসা, বাহুবল, হবিগঞ্জ

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ