করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

নারীরা কালের বিবর্তনে হারাচ্ছে তাদের ঐতিহ্যকে

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১

নুরুল আমিন শাহজাহান: একজন নারী কখনো মা, কখনো স্ত্রী, কখনো বোন। এই অবস্থা থেকে শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও স্থেহের জায়গাটি দখল করে রেখেছে নারীরা। নারী-ঘরের সম্মান ও ইসলামের সম্পদ।

এরূপ বহুগুণে গুণান্বিত নারীরা কালের বিবর্তনে হারাচ্ছে তাদের ঐতিহ্যকে। কথিত ‘সম-অধিকার’ ও ‘মর্যাদা’ আদায়ের নামে- হেনস্তার স্বীকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অধিক লোভ, উচ্চাকাঙ্খা ও বিলাসিতার চাকার নিচে পিষ্ট হচ্ছে তাদের অধিকার ও সম্মান। যে অধিকার ও মর্যাদা প্রাপ্তির লড়াইয়ে নারীরা লিপ্ত,তার চেয়েও বেশী দিয়েছে ইসলাম।
-যেখানে নারীদের জীবন্ত কবর দেয়া সহ ভোগের সামগ্রী বলে গণ্য করা হত,ইসলাম সেখানে নারীদের করেছে সম্মানীত।

ইসলাম বলেছে-
“আর-রিজালু কাওয়ামুনা আলাল নিসা’ অর্থাৎ নারীকে প্রতিষ্ঠা করা, নারীর মর্যাদা সমুন্নত করা প্রত্যক পুরুষের দায়িত্ব”।–আল-কোরআন।

“নারীরা তোমাদের পোষাক আর তোমরা তাদের পোষাক”।–(সুরা- বাকারা ২:১৮৭)

“যার স্ত্রী সাক্ষ্য দিবে তার স্বামী ভাল, তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য।” —-আল-হাদিস।

তাছাড়া সনাতন ধর্মে বলা হয়েছে,
“নারী হল মঙ্গলময়ী লক্ষ্ণী।”—(অথর্ববেদ ৭:১:৬৪)

“হে দেবী! জগতের সকল নারীর মাঝেই আপনার মুর্তি স্বরূপ প্রকাশ।”–( শ্রীশ্রী চন্ডী ১১:৬)

“নারী হল জ্ঞানদাত্রী ও প্রেরণাদাত্রী।” (ঋগবেদ ১:৩:১১)।

কিন্ত এতত্সত্ত্বেও নারী আর কি অধিকার চায়? কিছু অথর্ব নারী ‘বেহায়া ও উলঙ্গপনা’কে নারী স্বাধীনতা ও অধিকার বলে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকার গন্তব্যে । আর এই মতের স্বপক্ষে সায় দিচ্ছে তথাকথিত নারীবাদী পুরুষের দল। এর মূলে রয়েছে তাদের হীন উদ্দেশ্য।
শিয়াল যেমন মুরগীর স্বাধীনতা চায়,
মাছি যেমন মিষ্টির প্যাকেট উম্মুক্ত দেখতে চায়,
ঠিক তেমনি ভাবে ঐ নারীবাদীরাও বেহায়াপনার ছলে ধর্মীয় ঐতিহ্য ধুলায় মিশিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে চায় । ২৫/৩০ টাকা দামের সাবান ও পাউডারের বিজ্ঞাপনও উম্মুক্ত করছে নারীর মূল্যবান দেহকে। এমন সস্তা পণ্যের মতই ব্যবহার হচ্ছে নারীরা। ফলে ফায়দা নিচ্ছে নারীবাদী বুদ্ধিজীবী নামের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরা। অতচ ইসলামে নারীর পর্দার বিধান থাকলেও এসবের তোয়াক্কা করছেনা।

ইসলাম বলেছে-“পর্দা হল নারী সৌন্দর্য্য ও মর্যাদার প্রতীক। নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত-অাবরুর রক্ষাকবচ”।
-ইসলাম আরও বলেছে – এ বিধান (পর্দা) তোমাদের ও তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’।( সুরা-আহযাব -৫৩)
-“তোমাদের মাঝে আল্লাহর নিকট সেই মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত যে তোমাদের মাঝে অধিক তাক্ওয়া সম্পন্ন”।—(সুরা- হুজুরাত-১৩)।
হাদিসে নবী(সাঃ) বলেন – নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয়, তখন শয়তান তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকায়।–(তিরমিজি -১১৭৩)

তাছাড়া সনাতন ধর্মেও নারীর পর্দার বিধান রয়েছে যতেষ্ট।

“মহিলারা পুরুষের মতো পোষাক পরিধান করবে না এবং পুরুষরাও তাদের স্ত্রীদের পোশাক পরিধান করবে না”। (ঋগবেদ -গ্রন্থ নং ১০, অনুচ্ছেদ ৮৫, পরিচ্ছদ ৩০)

এছাড়া মনোসংহিতায় আছে-
কি বালিকা, কি যুবতী, কি বৃদ্ধা কোন স্ত্রীলোকই নিজ গৃহেও স্বাধীন ভাবে কার্য করা উচিৎ নয়।(স্ত্রীধর্ম-১৪৭)।
তাছাড়া ইহুদি ধর্মেও পর্দার বিধান চালু আছে- “বিবিকা যখন ইসহাককে দেখিলেন, তখন উট থেকে নেমে দাসকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমাদের সাথে যে দেখা করতে আসতেছেন, এই পুরুষটি কে? দাস বলল; উনি আমার কর্তা। তখন বিবিকা অতিরিক্ত কাপড় দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিলেন।–(আদি পুস্তক ২৪:৬৪, ৬৫)।

এমনকি বাইবেলে ‘নারীর মস্তক নিচু করে রাখা’ সহ নিউ টেস্টামেন্ট, ত্রিপীটক, গুরুগ্রন্থ সাহেবেও নারীর পর্দার কথা বলা হয়েছে। যদিও এসব ধর্মের অনুসারীরা তাহা অনুসরণ করছে না।
মনে পড়ল; ২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, হিজাব পরিহিতা ইরানী নারী শিরিন এবাদির সাক্ষাতকারের কথা। তৎসময়ে নিউইয়র্কে এক অর্ধনগ্ন মহিলা সাংবাদিক ‘হিজাব পরিহিত শিরিন এবাদিকে উপহাস করে জিজ্ঞেস করল – আপনার বর্তমান অবস্থান ও পোষাকের সাথে কতটা মিল আছে?
শিরিন এবাদী জবাব দিলেন- আমার সম্মানের সাথে পোষাকের ১০০% মিল আছে।
সাংবাদিক – কিভাবে?
শিরিন এবাদী – আপনি যে পোষাককে মডার্ণ মনে করেন, আমার জন্য তাহা নগ্নতা। পৌরাণিক যুগে আপনার মত নগ্ন পোষাক পড়ত মানুষ, যখন কাপড়ের ব্যবহার ছিল না। কোনো রকম ভাবে মানুষ তার লজ্জা স্থান হেফাজত করতো। শিরিন এবাদীর এই বিস্ফোরক জবাবে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন সাংবাদিক। পৃথিবীর এত সর্বোচ্চ সম্মানজনক স্থানে থেকেও ইসলামের বিধান আকঁড়ে ধরে ছিলেন তিনি। কিন্তু আমাদের দেশের কতিপয় নারীরা তুচ্ছ লোভের মোহে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে শিয়াল-শুকুনের তরে। সমান অধিকারের জিকির তুলে সাবরিনা, পাপিয়া, হেলেনা, পিয়াসা, পরিমনির মত নারীদের পথভ্রষ্ট করছে নারীবাদীরা। হয়ত তাদের মতো হাজারো নারী আছে এ তালিকায়। তারা কলঙ্কিত করছে গোটা নারীকূলকে। শুধু তাই নয়, আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যাবে- এদের মত নারীর পেট থেকেই জন্ম নেয় এরশাদ শিকদার, কালা জাহাঙ্গীর, পিচ্চি হান্নান, সাহেদ, প্রদীপ ও সম্রাটের মত কুলাঙ্গারদের।
অপরদিকে ইসলামের জয়যাত্রার মূলে অবদান রাখা নারী হযরত খাদিজা, হযরত আয়েশা, হযরত আমেনা, সাহার বানু সহ অসংখ্য মহিয়সী নারী ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নাম লিখে গেছেন। আব্দুল কাদির জিলানী তাঁর মা আমেনা পর্দাশীল সত্যবাদিনী, যে কারণেই তিনি জগৎ বিখ্যাত ওলি হতে পেরেছেন।
মহাভারতের যুগে সত্যর উপর অটল দাড়িঁয়ে থাকা ‘সত্যবতি’র গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান বেদ ব্যাস’ই বিখ্যাত পন্ডিত হয়ে জগতে পূজিত হতে পেরেছেন। ক্ষুরুক্ষেত্র যুদ্ধে দৌপতির সততা, প্রেরণা ও শক্তির কারনেই পঞ্চপান্ডরা বিজয় চিনিয়ে আনতে পেরেছিলেন।
পরিশেষে বলব- নারীর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সভ্য জাতি গঠনে ধর্মীয় অনুশাসনে পথচলা অত্যাবশ্যক।

লেখক-
সহকারী শিক্ষক
মিরপুর দাখিল মাদ্রাসা ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ