সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৪:১৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: মহান রুশ বিপ্লবের ১০২-তম প্রতিষ্ঠাবাষিকী পালন উপলক্ষে ০৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিিিটর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শহরের কোর্টরোডস্থ(মনু সেতু সংলগ্ন) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সহ-সভাপতি ও মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৪৫৩ এর সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি অবণী শর্ম্মা এবং ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৩০৫ এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া ও কোষাধ্যক্ষ তারেশ বিশ্বাস সুমন, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৪৫৩ এর সহ-সভাপতি ও কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ শাহজাহান আলী এবং কোষাধ্যক্ষ মোঃ গিয়াসউদ্দিন, জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, সদস্য মোঃ জসিমউদ্দিন, খোকন মিয়া, হাসান মিয়া প্রমূখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, মহান রুশ বিপ্লবের অজেয় ও অমর শিক্ষাকে সামনে রেখে সাম্রাজ্যবাদী অন্যায়যুদ্ধ তথা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং বাংলাদেশের মত নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী দেশগুলোতে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব জয়যুক্ত করে বিশ্ব বিপ্লব তথা সমাজতন্ত্র-কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার সুমহান লক্ষ্য আজ পৃথিবীর সকল শোষিত মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ। বিশ্ব শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণকে বিভ্রান্ত, বিভক্ত ও বিপথগামি করতে সর্বাত্মক তৎপর রয়েছে সকল রূপের সুবিধাবাদী ও সংশোধনবাদীরা।
‘মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ব্যর্থ, সমাজতন্ত্র ব্যর্থ এবং পুঁজিবাদ শ্বাশ্বত ও সংকট মুক্ত’ বলে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ও সকল রূপের সুবিধাবাদী-সংশোধনবাদীরা যে প্রতিবিপ্লবী প্রচারাভিযান চালিয়েছিল তার বেঠিকতা প্রমাণিত হচ্ছে সমগ্র পুঁজিবাদী-সা¤্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় চলমান দীর্ঘস্থায়ী মন্দা ও সংকটের মধ্য দিয়ে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বলশেভিক পার্টির গঠন প্রক্রিয়া থেকে সকল রূপের সংশোধনবাদ-সুবিধাবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে পার্টি গড়ে উঠেছিল।
আজকেও আমাদের দেশের সংশোধনবাদীদের তৎপরতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণির নের্তৃত্বে, শ্রমিক শ্রেণির একনায়কত্ব ও মহান কমরেড স্টালিনের অবদানকে অস্বীকার করে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় শান্তিপূর্ণ পথে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের হালুয়া রুটির অংশীদার হওয়া। ইতিহাসের অমোঘ নিয়ম এবং বর্তমান কঠোর বাস্তবতায় রুশ বিপ্লব তথা সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রাসঙ্গিকতা আরো সামনে আনছে, সামনে আনছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী বিকল্পকে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর মহামতি লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার বলশেভিক পার্টি তথা শ্রমিকশ্রেণি বলপ্রয়োগে বুর্জোয়াশ্রেণিকে উৎখাত করে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব জয়যুক্ত করলে পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটে। পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার বিপরীতে জন্ম নেয় সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা। অতীতের সামাজিক বিপ্লবের মত এক শ্রেণির শোষণের পরিবর্তে আরেক শ্রেণির শোষণ নয়, বরং রুশ বিপ্লব অবসান ঘটালো মানুষ কর্তৃক মানুষকে শোষণ করার সমাজ ব্যবস্থা। শ্রমিকশ্রেণির একনায়কত্বাধীনে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক বিনির্মাণের যাত্রাবিন্দু।
সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও বিনির্মাণ প্রক্রিয়া অগ্রসর হওয়ার মধ্যদিয়ে রাশিয়ায় শ্রেণি শোষণ-লুণ্ঠণ, দারিদ্র-বেকারত্বসহ শ্রমিক-কৃষক-জনগণের ৫টি মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা পূরণ হয়। শ্রেণি শোষণের অবসানের মধ্যদিয়ে নিপীড়িত জাতিসত্তাসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, নারী মুক্তি, শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতিসহ সাংস্কৃতিক বিপ্লব, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বৈপ্লিবিক পরিবর্তনসহ চিন্তা-চেতনার বৈপ্লবিক রূপান্তরে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠে।
রুশ বিপ্লব দুনিয়ার শ্রমিকশ্রেণি, নিপীড়িত জাতি ও জনগণের সামনে মুক্তির আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রথ প্রদর্শন করে। সভায় বক্তারা বলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালের মধ্যে পূঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়া সবচেয়ে মন্দা ও সংকটে নিমজ্জিত হয়ে মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা মূর্ত হয়ে উঠেছে।
সাম্রাজ্যবাদীরা জোরদার করছে সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতিকে। তাদের এই যুদ্ধ প্রস্তুতি থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদের লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড, সিল্ক রোড, স্ট্রীং অব পার্লস, বিসিম ইকোনিমক করিরোড, এআইআইবি ব্যাংক ইত্যাদি পদক্ষেপের বিপরীতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইন্দো-প্যাসিফিক রণনীতিকে নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক ভারতকে কাউন্টার ব্যালেন্স হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে লুক ইস্ট পলিসিকে সমন্বিত করে অগ্রসর হচ্ছে।
এরই প্রেক্ষিতে প্রতিবেশি দেশসমূহে ভারতের নেতৃত্বের আকাক্ষার স্বার্থ জুড়ে দিয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মূল ভূ-খন্ডের সাথে উত্তর-পূর্ব ভারতের সর্বাত্মক যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, ট্রানজিট, ট্রানশিপমেন্ট ইত্যাদি চুক্তি এবং সম্প্রতি বাংলাদের উপকূলে ভারতের রাডার স্থাপন, চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট ব্যবহার, ফেনী নদীর পানি ব্যবহার ইত্যাদি জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পাদন করা হয়। ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব সুতীব্র। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সংঘাত ও যুদ্ধের বিপদ বৃদ্ধি করছে। রোহিঙ্গা সমস্যা, আসামের নাগরিকত্ব সমস্যা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এর রকম জটিল পরিস্থিতিতে মহান রুশ বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে সকল দেশপ্রমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে।
সভা থেকে পিয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ, সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও সংস্থা সমূহের সাথে সম্পাদিত জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল, ভারতের সাথে সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল, বিনাবিচারে হত্যা-খুন-গুম বন্ধ, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ, শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ন্যূনতম মূল মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ ও শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী সংশোধিত শ্রমআইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন, হোটেল, স’মিলসহ বিভিন্ন সেক্টরে ৮ ঘন্টা কর্মদিবসসহ শ্রমআইন বাস্তবায়ন ও সরকার ঘোষিত নিন্মতম মজুরি কার্যকর, সমকাজে সমমজুরি ও কর্মক্ষেত্রে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করার দাবি জানানো হয়।