শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৭:২৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি,হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের ইটভাটার শ্রমিকরা জানেন না মে দিবস কি। ফলে তাদের অধিকার সম্পর্কে তারা এখনও রয়েছেন অন্ধকারে।
তারা শুধু জানেন মে দিবস মানে দল বেঁধে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে গাড়ীর শ্রমিকদের মিছিল করা, আর সংগঠকদের দেয়া নাস্ত খাওয়া।
তাদেরকে টানা ষোল ঘন্টা কাজ করতে হয়। অথচ তাদের নেই কোন নিয়োগপত্র, নেই কোন কর্মঘন্টা, কোন সাপ্তাহিক ছুটি, শ্রমিক রেজিস্ট্রার, ছুটির রেজিস্ট্রার বা কোন বই, নেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপকরণও।
ইটভাটার শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। কিন্তু যাদের জন্য এ দিন পালন করা হয় তারাই জানেনা এর ইতিহাস কিংবা আসল প্রয়োজনীয়তা। তারা দিন শেষে সেই তিমিরেই অবস্থান করে।
অথচ মহান মে দিবস পালনের নাম করে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো জমকালো আয়োজনের কমতি করেননা।
যদিও শ্রম আইনে বলা আছে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, ছবিসহ পরিচয়পত্র, সার্ভিস বই প্রদান, রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ, ছুটির রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ, ছুটির বই প্রদান, সাপ্তাহিক ছুটি, ওভারটাইম রেজিস্ট্রার, দৈনিক রেজিস্ট্রার থাকতে হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ইটভাটার কোন মালিক শ্রমিকদের জন্য তা কার্যকর করেননি।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, জেলায় ইটভাটাগুলোতে শ্রমিক সংখ্যা কত, এর মাঝে কতজন শিশু শ্রমিক রয়েছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের কোন দপ্তরে নেই।
কতজন শ্রমিক শ্রম শোষণের শিকার তারও কোন হিসেব নেই সরকারি দপ্তর কিংবা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে। শ্রমিকদের কেউই জানেনা তার কর্ম জীবনে আট ঘন্টা বলে যে একটা শব্দ আছে। তারা এটি বোঝেওনা।
তাদের জানতে বা বুঝতে দেয়াও হয়না। জেলার প্রায় অর্ধেক ইটভাটাই বাহুবল উপজেলায় অবস্থিত। এখানে অর্ধশতাধিক ইটভাটা রয়েছে। ভাটাগুলোতে ফজরের আজানের আগেই ঘুম থেকে উঠে ইট কাটার কাজে ব্যস্থ হয়ে পড়ে হাজারো শ্রমিক।
কাঁচা ইট কাটে টানা সন্ধ্যা পর্যন্ত। গোড়ার টপ শ্রমিকদের হাতগুলো ফেঁকাসে সাদা হয়ে থাকে। এক পর্যায়ে তা ঘা যায়। যা কখনোই ভাল হয়না। ঝাল মরিচে রান্না করা খাবার খেতে গেলেই অন্তরাত্মা পর্যন্ত জ্বলে উঠে।
চোখের পানি গাল বেয়ে ঠোঁটের কোণা দিয়ে মুখে চলে যায়। এভাবেই দিন শুরু আর শেষ হয়। এ জেলার প্রায় বিশ হাজার শ্রমিকের সিংহভাগই শ্রম শোষণের শিকার হচ্ছে।
ইটভাটায় যে শ্রমিকরা কাজ করে সে মনে করে এখানে ষোল ঘন্টা কাজ করলেও সকাল-বিকাল মালিকদের লাথি গুতো খেতে হয়।
বাহুবলের মেঘনা ব্রিকসের ম্যানেজার রাসেল মিয়া জানান, ছুটি কি জিনিস তারা জানেননা। মে দিবস মানে কি তাও তার জানা নেই। শুধু জানেন ২৪ ঘন্টা কাজ করতে পারলেই এ ইটভাটার মালিকরা বেতন তুলে দেয়।
শরীয়তপুর থেকে আসা ইটভাটার আগুন কারিগর আবুল হাশিম জানান, এত দূর থেকে আগুনের লোক নিয়ে এসে এখানে কাজ করাই। কোন ছুটি নাই। ছয় মাসের জন্য এলে ঈদ পর্যন্ত এখানেই করতে হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা মেইল সর্দার আতিকও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ছয় মাসের জন্য এসেছি। মরি-বাঁচি তবুও ভাটায়ই কাজ করতে হবে।
হবিগঞ্জ ইটভাটা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শ্রমিকরা এসে কাজে যোগ দেন ইটভাটায়। জেলায় শতাধিক ইটভাটায় প্রায় বিশ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।
তিনি বলেন, আমরা কি পাব শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার। টানা ষোল ঘন্টা আমাদের শ্রমিকরা পরিশ্রম করেও ন্যায্য বেতন পাচ্ছে না। কাজ করানোর পরে মালিকরা বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে বিদায় করে দিচ্ছে।
আমরা কি মে দিবসের শ্রম আইনে পড়ি না, আমরা কি শ্রমিক না। আমাদের দ্বারা সরকার কোটি কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করছে ইটভাটা থেকে। দগদগে আগুনের উপর ২৪ ঘন্টা কাজ করে আগুন কারিগররা। অথচ তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপকরণ নেই।