রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন
বাহুবল (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: ইটের দালালী থেকে সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া নবিন। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মিরপুর ফয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছে সে।
মেধা না থাকায় পড়ালেখা বাদ দিয়ে সে জড়িয়ে পড়ে বাহুবল উপজেলার বিখ্যাত ইট ব্যবসার দালালীতে। সাথে চালায় ডিস্ট্রিক ট্রাকের দালালীও। সিলেটের বড় বড় ব্যবসায়ীদের ইট কিনে দিয়ে প্রতি হাজারে ৫০ থেকে ১শ টাকা করে দালালী ছিল তার পেশা।
ইট ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে ইট না নিলেও সে ট্রাক ভাড়া দিয়ে ট্রাকের চালকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিত ১ থেকে ২ শ টাকা।
বিবাহিত জীবনে এক সন্ন্তানের জনক হলেও সে খোঁজজ রাখত না তার পরিবারের। এক সময় সিলেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অাস্তা সৃষ্টি করে তাদের কাছ থেকে টাকা এনে ইট কিনে দিবে বলে আত্নসাত করত।
স্থাণীয় লোকজন জানান, সম্প্রতি সে ইটের দালালী ছেড়ে দিয়ে বছর দুই এক আগ থেকে এলাকা থেকে চলে যায়।
এখন পেশায় সে র্যাব অফিসার। র্যাবের ডিএডি পরিচয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে ঘিরেই তার অপরাধ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি। তার শিকারের আওতা থেকে বাদ যান না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী, দেশজুড়ে পরিচিত সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী কিংবা আটপৌরে জীবনযাপনকারী সাধারণ একজন চাকুরজীবী বা গৃহিণীও।
একের পর এক ব্যক্তিকে টার্গেট করে ফেসবুক আইডি হ্যাক, ভিডিও ও ছবি জালিয়াতি, র্যাব কর্মকর্তা সেজে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায়, পর্নোগ্রাফি ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির চরিত্রহননের মাধ্যমে অকল্পনীয় সব উপায়ে সাইবার অপরাধ করেন তিনি।
থ্রিলারকে হার মানানো অবিশ্বাস্য প্রতারণা কৌশল প্রয়োগ করে দীর্ঘদিন ধরে অসংখ্য ভুক্তভোগী মানুষের লাখলাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর অবশেষে র্যাবের জালে আটকা পড়লেন পেশাদার সাইবার অপরাধী ও অনলাইন ভিত্তিক প্রতারক চক্রের হোতা মাহফুজুর রহমান নবিন (২৮)।
আটক নবিন হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানাধীন মামদ নগর (তিতারকোনা) গ্রামের মৃত ইজাজুর রহমানের পুত্র।
বুধবার র্যাব-৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী আব্দুল্লাহপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, টার্গেট করার ক্ষেত্রে নারীদেরকেই তিনি সাধারণত প্রাধান্য দিতেন। ফেসবুক আইডি হ্যাক করার পর প্রথমে তিনি আইডির মালিককে মানসিক চাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে আইডিতে থাকা একান্ত ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্টস বিভিন্ন জনকে পাঠিয়ে দিতে থাকেন। তারপর ধারাহিকভাবে হ্যাককৃত আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন, সম্ভাব্য সকল উপায়ে আইডির মালিকের সম্মান বিনষ্ট করা এবং সবশেষে এই আইডিগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন মুখী, বিচিত্র প্রতারণার জাল বিস্তার।
র্যাবের দাবি অনুযায়ী, আটক নবিন অসংখ্য নারীকে টার্গেট করে অশ্লীল ছবি ও ভিডিওতে তাদের মাথা জুড়ে দিয়ে ছবি ও ভিডিও নির্মানের মাধ্যমে তাদের চরিত্র হনন এবং তাদেরকে ব্ল্যাকমেইলিং এ জড়িত। এভাবে তিনি স্বামী-স্ত্রী/প্রেমিক- প্রেমিকার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতেন। পরিকল্পিতভাবে ভেঙ্গে দিতেন দীর্ঘ দিনের সাজানো সংসার। এছাড়াও টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ফরমায়েশ নিয়েও তিনি এই কাজটি করতেন। তার ছবি বিকৃতির তালিকা হতে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা বিদেশি সরকার প্রধানেরাও বাদ পড়েন নি। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে বিষোদগার ও কুরুচিপুর্ণ মন্তব্য তার কাছে নৈমিত্তিক ব্যাপার বলে জানা যায়।
র্যাবের হাতে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার উদ্ভাবনী সব প্রতারণা কৌশল এবং ভয়ঙ্কর অপরাধ প্রবণতার কথা জেনে উপস্থিত র্যাব কর্মকর্তারাও হতবাক হয়ে পড়েন। এ পর্যন্ত র্যাবের কর্মকর্তা, টেলিভিশন উপস্থাপিকাসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফেসবুক আইডি হ্যাক এবং একই নাম ও ছবি ব্যবহার করে আইডি বানিয়ে তাদের ব্যক্তি ইমেজ ব্যবহার করে অভিনব সব উপায়ে সাইবার অপরাধে লিপ্ত হন আটক নবিন।
এ ছাড়াও চিত্রনায়িকা মৌসুমী, সংগীত শিল্পী কৌশিক হাসান তাপসসহ আরো অনেকেরই ফেসবুক আইডি হ্যাক করার জন্য তিনি টার্গেট করেছিলেন মর্মেও প্রমাণ পাওয়া যায় বলে জানিয়েন সংশ্লিষ্ট র্যাব কর্মকর্তারা।
পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য আটক নবিনকে হবিগঞ্জের বাহুবল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অন্যের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ব্যবহার, হ্যাক চেষ্টা, আইডি ডিজেবল করে দেওয়ার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত করা, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ উপার্জন, অনলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য মন্ত্রী ও বিদেশি সরকার প্রধান সম্পর্কে নোংরা, কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা মন্তব্য করা, অশ্লীল ছবি ও ভিডিওতে বিভিন্ন জনের মাথা জুড়ে দিয়ে ছবি ও ভিডিও বানিয়ে সেটা ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলিং, মোবাইল ও অনলাইনে পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট বহন, স্থানান্তর ও ছড়িয়ে দেওয়াসহ সাইবার অপরাধ সম্পর্কিত অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়ার হোসেন শামীম।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কয়েকমাসের নিরবিচ্ছিন্ন চেষ্টায় এই ধূর্ত অপরাধীকে আটক করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়ে অন্যান্য সাইবার অপরাধীদেরকেও আইনের আওতায় আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম। এছাড়াও ক্রমবর্ধমান এই অপরাধ প্রতিরোধে অনলাইন ভিত্তিক অ্যাপসমূহ ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হবার অনুরোধও জানান র্যাব ৯ এর এই কর্মকর্তা।
বাহুবল মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, নির্দিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে।