শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০১:৩৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিলেট: তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল, আরও এক মাস সময় পেল পিবিআই
সিলেটে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগান জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে ‘হাজার কোটি’ টাকা ভূমি আত্মসাতের অভিযোগে করা দুটো মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছিল সিলেট কোতোয়ালি থানা পুলিশকে।
বহুল আলোচিত এ মামলা দুটো কোতোয়ালি থানা পুলিশ যখন তদন্তে রহস্যজনক কারণে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে এ দুটো মামলার অগ্রগতির জন্য সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছ থেকে মামলা দুটো প্রত্যাহার করে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ হস্তান্তরের জন্য নির্দেশ দেন। এমনকি পিবিআইকে সোমবার (২৫ এপ্রিল) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন আদালত।
সোমবার সিলেট মহানগর মুখ বিচারিক হাকিম আদালতে পিবিআই তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে সময় বাড়ানোর আবেদন করলে বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো আবেদন মঞ্জুর করে তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২৫ মে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে- উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও মামলা তদন্তে গড়িমসির কারণে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহাম্মদসহ তদন্ত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়- আলোচিত এ দুটো মামলা অনেক পুরোনো। সুষ্ঠু তদন্তে সময়ের পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা আরো এক মাসের সময় চেয়ে নেন আদালত থেকে। ইতিমধ্যে পিবিআই রাগীব আলীর বিরুদ্ধে দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগান জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করে ‘হাজার কোটি’ টাকা ভূমি আত্মসাতের বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণাদি পেয়েছে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে দেখা করে তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। যা মামলা ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি তৎকালীন সময়ে দায়েরকৃত মামলার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও সংগ্রহে করে মামলার সাথে সংযুক্ত করে সার্বিক বিষয়ের উপর নজর রেখে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পিবিআই।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল সকালে পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক দেওয়ান আবুল হোসেন ও পরিদর্শক দিলীপ কান্ত নাথ পৃথক দুটো আবেদনে তদন্তের অগ্রগতির বিষয়টি আদালতকে অবহিত করে আরও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আরও সময় প্রার্থনার আবেদন করেন। আদালত এ আবেদন মঞ্জুর করে ২৫ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আবেদনে পিবিআই গত প্রায় দুই সপ্তাহে ভূমি, সাব-রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুসন্ধানের বর্ণনা দিয়ে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সুষ্ঠু ও পরিপূর্ণ তদন্তের জন্য সময় প্রার্থনার কথা উল্লেখ করেছে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়- দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগানের জায়গায় বিধি বহির্ভূতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় ১৯৯৯ সালের ২৫ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত তৎকালীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তদন্ত করে সত্যতা পায়। পরবর্তীতে সংসদীয় উপকমিটি চা-বাগানে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার নেওয়ার সুপারিশ করে। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সিলেট সদর ভূমি কমিশনার এসএম আবদুল হাই বাদি হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় দুটো মামলা করেন। মামলায় প্রতারণার মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে রাগীব আলী, তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন চৌধুরী (প্রয়াত), ছেলে আবদুল হাই, মেয়ে ও মেয়ের জামাতাকে আসামি করা হয়েছিল।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এ মামলা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত করা হয়। পররবর্তীতে পুলিশ তদন্ত করে ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করেছিল। গত ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগান পুনরুদ্ধারে রায় দেন। এতে ওই দুটো মামলা সক্রিয় করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের এ নির্দেশনার বিষয়ে গত ১৬ মার্চ সিলেটের সরকারি কৌসুলির আবেদনের মাধ্যমে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতকে অবহিত করলে গত ২২ মার্চ আদালত এক আদেশে সিলেট কোতোয়ালি থানা পুলিশকে তদন্ত করে ৭ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই দিন আদালত এক আদেশে মামলা দুটোর তদন্তভার পিবিআইকে দিয়ে ২৫ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন।
সিলেটের সরকারি কৌসুলি (পিপি) মিসবাহউদ্দিন সিরাজ পিবিআইর অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে সময় বাড়ানোর আবেদন ও এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।