সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০২:২২ অপরাহ্ন
আব্দুর রাজ্জাক রাজু,চুনারুঘাটঃ দেশে বিভিন্ন আইন, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান থাকা সত্বেও ইটভাটার দৌরাত্ম্য কমছে না।চুনারুঘাটের গাজিপুর ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি হুমায়ুন কবীর ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমদ এর দুইটি ইট ভাটা এখন সাধারণ মানুষের গালার কাটা।
১৭ বছর আ’লীগ ক্ষমতা থাকাকালীন গায়ের জোরে ইট ভাটা তৈরী করে মানছেন না কোনো নিয়মকানুন৷৫০/৬০ বিঘা কৃষি জমির উপর নির্মিত ইট ভাটায় কৃষি জমির ক্ষতি ও দেশের ভূ-প্রকৃতি ধ্বংস করে মাটি পুড়িয়ে তৈরি করেছেন ইট।
দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার ও টাকার গরমে পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়েই চালাচ্ছেন ইটভাটা।এ নিয়ে স্থানীয় পরিবেশবাদী সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক রাজু অভিযোগ করলে হবিগঞ্জ জেলা পরিবেশ অফিস তাদের কে কারণ দর্শানো নোটিশ ফেরন করেন।
যার স্মারক নং-২২.০২.৩৬০০.১৫৬.৭১.১৩৯.২৪.৩০৪। আগামী ৭ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন ডিডি আক্তারুজ্জামান।
গাজিপুর ইউনিয়নের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ গাজিপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজ,গাজিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,গাজিপুর জামেয়া ইসলামিয়া কওমি মাদ্রাসা,মজলিস মিয়া একাডেমি,গাজিপুর একাডেমি, গাজিপুর রায়হানিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও সবথেকে সন্নিকটে মদিনাতুল উলুম মহিলা মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রছাত্রী সহ এলাকাবাসীর পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলছে।
ছাত্রছাত্রীদের মেধা বিকাশ ও শ্বাঃস্বকষ্ট জনিত রোগ প্রচুর পরিমান বেড়েছে।ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন গাজিপুর স্কুল এন্ড কলেজের পিয়নসহ অনেক মানুষ।শিক্ষার্থীদের ফল বিপর্যয় হচ্ছে প্রতি বছর।গাজিপুর হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু নাসের বলেন,ইট ভাটার দুষিত পরিবেশে ছাত্রছাত্রীদের রোগ জীবানু বাড়ছে এবং ফলাফল বিপর্যয় হচ্ছে।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সেক্রেটারী রুবেল আহমেদের মালিকানাধীন প্রীতম ব্রিকস এর ঠিক সামনে বাংলাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অরুন কুমার শর্মা এর গ্রামের বাড়ি।তিনি বলেন ইট ভাটার দুষনের জন্য পুঁজার সময় বাড়িতে ১/২দিনের বেশি থাকতে পারিনা।একই এলাকার বাসিন্দা বার্ডেম হাসপাতালের ডাক্তার তোফায়েল আহমেদ বলেন ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ, ভূমির উর্বরতা হ্রাস ও বন উজাড় হচ্ছে৷ কৃষি জমি দিন দিন কমছে।এসব ইটের ভাটায় কয়লার পাশাপাশি কাঠও পোড়ানো হয়৷ অথচ কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ৷ ফসলি জমিতে লোকালয়ে এসব ইটভাটার চিমনির উচ্চতা কোনোটিরই ৬০ ফুটের বেশি নয়৷ অথচ চিমনি থাকতে হবে ১২০ ফুট লম্বা৷
চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর টিএইচও ডাক্তার মোজাম্মেল হক বলেন,ইটভাটার ধোঁয়ায় যে কার্বন মনোঅক্সাইড থাকে তা বাতাসকে যেমন দূষিত করে, তেমনি গাছপালা এবং ফসলের ক্ষতি করে৷ ইটভাটার বর্জ্যে যে সালফার থাকে তা নদী বা জলাশয়কে দূষিত করে৷ এর ফলে খোয়াই নদী ও ইছালিয়া ছড়া থেকে মাছসহ সব ধরনের জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ ইটভাটার আগুনের প্রচণ্ড তাপে ইটভাটার আশপাশের ফসলি জমি নিষ্ফলা হয়ে যায়৷
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা আক্তার বলেন,ইটভাটার কারণে বাতাস দূষিত হওয়ায় মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়৷ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ তে উল্লেখ আছে, ইটভাটায় ফসলি জমির উপরের মাটি (টপ সয়েল) ব্যবহার করলে প্রথমবারের জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। দ্বিতীয় বার একই অপরাধের জন্য ভাটা কর্তৃপক্ষকে ২ থেকে ১০ বছরের জেল এবং ২ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। অনুমোদন না নিয়ে ইটভাটা স্থাপন করলে এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে।আইনে জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, বনভূমি, জলাভূমি এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করলে একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার করলে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি হতে পারে।বেলা হবিগঞ্জ এর সাধারণ সম্পাদক এড.তোফাজ্জল হোসেন সোহেল বলেন, আইন সরকারের অফিস আদালতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। ফলে কৃষি, পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশের সচেতন নাগরিক, কৃষিবিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।এই ইট ভাটা গুলো বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসলেই হল।