শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৫:০৪ অপরাহ্ন
বাহুবল (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের বাহুবলের কামাইছড়ায় ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং প্রাণনাশের হুমকীর দায়ে পুলিশসহ ৩জনকে গ্রেফতার ও ইনচার্জ এএসআই বাছির আলমকে প্রত্যাহারের ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
অপরদিকে বহু অপ্রীতিকর ঘটনার নায়ক বাছির আলমকে প্রত্যাহারের পর তার নানা কীর্তি সম্পর্কে মুখ খোলতে শুরু করেছেন অনেক তূক্তভোগি।
শনিবার দুপুরে ওই এলাকা ঘুরে জানা গেছে চঞ্চল্যকর তথ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, ৮/৯ মাস পূর্বে বাছির আলম কামাইছড়া ফাঁড়িতে যোগদানের পর থেকে ওই এলাকা হয়ে ওঠে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। দিনে-রাতে চিহ্নিত চোরাকারবারীসহ দাগী অপরাধীরা দারোগার চার পাশে বিচরণ শুরু করে।
আর তাদের ইশারায় বাছির আলম এলাকায় শুরু করেন রাম-রাজত্ব। এব্যাপারে সময় সময় বিভিন্ন পত্রিকায় তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশ হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এমনকি অতি সম্প্রতি পর পর দুইটি উপজেলা সমন্বয় সভায় বাছির আলমের আটক বানিজ্যসহ বেপরোয়া ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। এরপরও থামেনি তার অপতৎপরতা। তিনি ক্রমেই কামাইছড়া এলাকাকে পরিণত করেন ডেঞ্জার জোনে।
বাছির আলম একটি ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে কোন অভিযানে পুলিশ ফোর্স ব্যবহারের পরিবর্তে সাথে নিতেন চিহ্নিত কয়েক চোরাকারবারী ও রোড ডাকাতকে। এদের মাঝে ‘ফ’ আদ্যক্ষরের একজনকে পরিচয় দেয়া হতো কামাইছড়ার ওসি হিসেবে। তার ইন্ধনেই আটক লোকজনের উপর চলতো অমানষিক নির্যাতন। এধরনের অনেক ঘটনা বেরিয়ে আসছে এলাকাবাসীর বর্ণনায়।
তাদের তথ্যে প্রকাশ, প্রতিদিনই দারোগা বাছির আলম আনন্দ ভ্রমনে আসা যুবক-যুবতিদের ধরে এনে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেন। নির্যাতনও করতেন শারিরিকভাবে। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসলেও পুলিশী হয়রানীর শিকার হতেন। ভুক্তভোগিরা মান সম্মানের ভয়ে এবং অহেতুক হয়রানি থেকে বাঁচতে প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না।
৭ ফেব্রুয়ারী বিকেলে কামাইছড়া রাবার বাগান এলাকায় মৌলভীবাজার রাজনগরের ৬ যুবক-যুবতি আনন্দ ভ্রমনে আসে। বিকেল ৫টার দিকে বাছির আলম ওই ৬ যুবক-যুবতিকে আটক করে কামাইছড়া ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন। পরে বড় স্যারের কথা বলে তাদের স্বজনদের নিকট থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করে সন্ধ্যার পর ছেড়ে দেন। তাদের আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসলে শতাধিক জনতা গেইটে ভিড় করে। এ সময় জনতাকে সামাল দিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।
এমনকি স্থানীয় বড়গাও গ্রামের রফিক উল্লার পুত্র দিন মজুর হেলাল মিয়ার সাথে বাছির আলমের বাকবিতন্ডা হয়। তাৎক্ষনিক গ্রামের কয়েক ব্যক্তি বিষয়টি মিমাংসা করে দিলেও একইদিন রাত ২টার দিকে হেলাল মিয়াকে বাছির আলম একদল পুলিশ নিয়ে বিনা মামলায় বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে আসেন।
পরে তাকে অন্য একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে সোপর্দ করলে জেল হাজতে প্র্রেরণ করা হয়। এঘটনার ব্যাপারে বিরুপ মন্তব্য করলে বড়গাও গ্রামের আঞ্জব উল্লার পুত্র কবির মিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকী দিয়ে ২৪হাজার টাকা আদায় করা হয়। এসময় তৎকালীন ওসিও কবির মিয়ার হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকী দেন বলে ভুক্তভোগি জানান।
দেশের আলোচিত বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চার শিশুর লাশ উদ্ধার নিয়ে ১৭ ফেব্র“য়ারী সমগ্র প্রশাসন যখন ব্যস্ত ঠিক ওইদিন বিকেলে শ্রীমঙ্গলের দুই যুবক-যুবতিকে কামাইছড়া ফয়েন্ট থেকে ধরে নিয়ে বাছির আলম ফাড়িতে আটকে রাখেন। সন্ধ্যার পর তাদের অভিভাবকরা ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন।
২১ ফেব্রুয়ারী রাতে পূর্ব জয়পুর গ্রামে হিন্দু ধর্মীয় উৎসবে দুই মহিলাকে বাছির আলম উত্যক্ত করলে স্থানীয় লোকজন তাকে লাঞ্চিত করেন। এর পূর্বে বৈরাগী পুঞ্জিতে ওরসে ভক্তবৃন্দের হাতে লাঞ্চিত হন ওই দারোগা। গত বছরের নভেম্বরে নিরপরাধ দুই চা শ্রমিককে গ্রেফতারের চেষ্ঠা করলে রশিদপুর ফ্যাক্টরীর কাছে পাগলা ঘন্ঠি বাজিয়ে শ্রমিকরা তাকে গায়ের কাপড় খোলে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করেন।
এসময় এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা না করলে বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত হতো বলে সূত্র জানায়। এছাড়া ভ্রমন পিপাসু যুবক-যুবতিদের ধরে এনে টাকা আদায় ছাড়াও দারোগা নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকদিন আশপাশের লোকজন দারোগার আন্দর মহলে নারী কন্ঠের চিৎকার শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু তখন সময়ে খোদ ওসির আশির্বাদ থাকায় ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেন না।
এদিকে, গত বুধবার দুপুরে শ্রীমঙ্গল-হবিগঞ্জ রোডস্থ লাকসাম স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী শান্তিবাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম (৩০) বাহুবল থেকে কয়েক কার্টুন সিগারেট নিয়ে একটি সিএনজি অটোরিক্সাযোগে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরছিলেন।
ব্যবসায়ী রবিউলকে বহনকারী সিএনজিটি মিরপুর-শ্রীমঙ্গল রোডের কামাইছড়া পাহাড়ে রাবার বাগানের নিকট পৌঁছামাত্র পুলিশের লোক পরিচয়ে একটি মোটর সাইকেল ও একটি সিএনজি অটোরিক্সার ব্যারিকেড দিয়ে ৪ ব্যক্তি তাকে জিম্মি করে এবং ব্যবসায়ীকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে নগদ ১২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এমনকি হত্যার ভয় ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আরও ৩০ হাজার টাকা আদায় করে ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয় তারা। ঘটনাটি ব্যবসায়ী রবিউল শ্রীমঙ্গল থানার ওসিকে অবহিত করে মামলা দায়ের করতে যান। তবে ঘটনাস্থল শ্রীমঙ্গলের বাইরে হওয়ায় রবিউলকে বাহুবল থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
এরপর রবিউল বেলা ৩টার দিকে বাহুবল থানায় গিয়ে মৌখিকভাবে ঘটনার বর্ণনা করেন। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশের পিকআপ চালক পূলক চক্রবর্তী (৩০) কে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আটক করা হয়।
তার দেয়া তথ্যমতে সন্ধ্যায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তার অপর সহযোগী মনিরুজ্জামান শিমুল (৩০) ও আকরাম (৩০)সহ বিকাশ এজেন্ট প্রদীপ দেবকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রদীপ দেবকে সাক্ষী হিসেবে ছেড়ে দেয়া হয়।
এব্যাপারে ওইদিন রাতেই ব্যবসায়ী রদিউেল ইসলাম বাদি হয়ে থানায় মামলা ‘আ’ এবং ’ফ’ আদ্যক্ষরের তার দুই সহযোগি নিয়ে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান করছিলেন। পরদিন বৃহস্পতিবার গ্রেফতাকৃত ৩জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।