করাঙ্গী নিউজ
স্বাগতম করাঙ্গী নিউজ নিউজপোর্টালে। ১৫ বছর ধরে সফলতার সাথে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে করাঙ্গী নিউজ। দেশ বিদেশের সব খবর পেতে সাথে থাকুন আমাদের। বিজ্ঞাপন দেয়ার জন‌্য যোগাযোগ করুন ০১৮৫৫৫০৭২৩৪ নাম্বারে।

একটি সুন্নাহকে বাঁচাবো বলে: ফজরবাদ দোয়া!

  • সংবাদ প্রকাশের সময়: রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২

১: মুমিনের দিন শুরু হয় ফজর দিয়ে। ফজরের নামাজ নবীজিরও দিনের প্রথম কাজ ছিল। ফজরের পরে নবীজি নানাবিধ কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। নবীজি ফজরের পর ঘুমুতেন না। বিশ্রাম করতেন না। নবীজির কাজের ধরন ছিল বিভিন্ন। সময় সময় ইবাদত করতেন। রিজিকের সন্ধান করতেন। সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষাদান করতেন। নবীজি সহজ পন্থায় কাজ করতে পছন্দ করতেন। একটি কাজের দুটি পদ্ধতি আছে। সহজ আর কঠিন। নবীজি নির্দ্বিধায় সহজ পথটি বেছে নিতেন। নবীজি প্রতিটি কাজকে ইবাদতে পরিণত করতেন। কাজের শুরুতে দোয়া করতেন। আল্লাহর কাছে বরকত কামনা করতেন। নবীজি সারাদিনের জন্য সকালে দোয়া করতেন। আম্মাজান উম্মে সালমা রা. বর্ণনা করেছেন,
كَانَ يَقُولُ إِذَا صَلَّى الصُّبْحَ حِينَ يُسَلِّمُ:
আল্লাহর রাসূল ফজরের সালাম ফিরিয়ে বলতেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً
ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম, উত্তম রিজিক, কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি (ইবনে মাজাহ ৯২৫)।
২. অপূর্ব দোয়াটিতে তিনটি বিষয় চাওয়া হয়েছে। তিনটি বিষয়ের মধ্যে বান্দার সমস্ত বিষয়াশয় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। মুমিনের যে দিন উপকারী ইলম অর্জনহীন কাটে, সেটা এক ক্ষতিগ্রস্ত দিন। নবীজি বলে গেছেন,
الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ، مَلْعُونٌ مَا فِيهَا، إِلاَّ ذِكْرَ اللَّهِ، وَمَا وَالاَهُ، أَوْ عَالِمًا، أَوْ مُتَعَلِّمًا
দুনিয়া ও তার মধ্যে থাকা সবই অভিশপ্ত, তবে আল্লাহর জিকির এবং তার সাথে সংগতিপূর্ণ অনান্য আমল অথবা আলেম ও ইলম অন্বেষণকারী ব্যতীত (আবূ হুরায়রা রা.। তিরমিজী ২৩২২)।
৩. উত্তম হালাল রিজিক ভক্ষণ করা মুমিনের জন্য অপরিহার্য। রিজিক উত্তম হালাল না হলে, মুমিনের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। যেদিন হারাম উপার্জন করা, সেটা এক নিকৃষ্ট, ক্ষতিগ্রস্ত আর অপবিত্র দিন বলে বিবেচিত হয়। সেদিন কোনও দোয়া কবুল করা হয় না। নবীজি বলেছেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ؛ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ وَلاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ المُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ المُرْسَلِينَ
হে লোকসকল! আল্লাহ পবিত্র আর তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তাআলা রাসূলগনকে যে বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, মুমিনগনকেও সে বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
হে রাসূলগণ, তোমরা পবিত্র বস্তুসমূহ হতে (যা ইচ্ছা) খাও ও সৎকর্ম কর। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই আমি সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত (মুমিনূন ৫১)।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ
হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে জীবিকারূপে যে উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দিয়েছি, তা থেকে (যা ইচ্ছা) খাও (বাকারা ১৭২)।
তারপর হাদীসের বর্ণনাকারী আবূ হুরায়রা রা. বলেছেন,
وَذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَهُ إِلَى السَّمَاءِ: يَا رَبِّ، يَا رَبِّ. وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِّيَ بِالحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟!
নবীজি এক ব্যক্তির কথা আলোচনা করলেন, দীর্ঘ সফরে তার অবস্থা উস্কুখুস্ক, ধূলিমলিন, আকাশের দিকে হাত লম্বা করে বলে, ইয়া রাব্ব, ইয়া রাব্ব, অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক-পরিচ্ছদ হারাম। তার লালন-পালন হয়েছে হারাম মাল দিয়ে সুতরাং কেমন করে তার দোয়া কবূল করা হবে? (মুসলিম ১০১৫)।
৪. মুমিনের একটি মুহূর্তও কর্মহীন বা আমলহীন কাটতে পারে না। আর মুমিনের সব কাজই হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। রাসূলের সুন্নত তরীকা অনুযায়ী। যেদিন মাকবূল কোনও আমল থাকে না, সেটা হয়ে যায় এক অশুভ ক্ষতিগ্রস্ত দিন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
আল্লাহ তো মুত্তাকীদের পক্ষ হতেই (কুরবানী) কবুল করেন (মায়িদা ২৭)।
৫. হালাল রিজিক ভক্ষণ করে, ইখলাসের সাথে আমল করলে, ইন শা আল্লাহ আমার আমল কবুল করা হবে। আমার প্রতিটি আমল হতে হবে আল্লাহর ভয়যুক্ত। কারণ আল্লাহ মুত্তাকীদের আমলই শুধু গ্রহণ করেন। মুত্তাকী মানে যে আল্লাহর ভয়ে গুনাহ ছেড়ে নেক আমলে প্রবৃত্ত হয়।
৬. দিনের শুরুতে একটি দোয়ার বদৌলতে আমি দুনিয়ার সমস্ত কল্যাণ লাভ করার রাস্তা খুলে দিলাম। ছোট্ট একটি দোয়ায় তিনটি বিষয় প্রার্থনা করা হয়েছে। দোয়াটি পড়তে কতক্ষণ লাগতে পারে? বুঝে বুঝে কায়মনোবাক্যে প্রতিদিন দোয়াটি পড়লে, ইন শা আল্লাহ, রাব্বে কারীম আমাকে সেদিনের যাবতীয় অকল্যাণ থেকে রক্ষা করবেন। মাকবূল রিজিক, ইলম ও আমল দান করবেন। ইয়া রাব্ব! আমলের তাওফীক দান করুন। আমীন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো সংবাদ