শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ০৪:৫৯ অপরাহ্ন
ফয়সল আহমদ রুহেল : শিক্ষাগুরু সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভূঞা , যিনি এলাকার সবার কাছে ভূঞা স্যার নামেই পরিচিত।তিনি লাখাই এ,সি, আর, সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকতা পেশায় মানুষজনের যে সম্মান, শ্রদ্ধা তা অন্য কোনো পেশায় পাওয়া যাবে না- হয়তো এই উপলব্ধি থেকে শিক্ষকতাকে নিজের করে নেন কৃষক পরিবারের সন্তান সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভূঞা। আলোকিত মানুষ গড়ার এই কারিগর দীর্ঘ ৩২ বছর শিক্ষকতা করেছেন।
জন্ম : শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভূঞা বি-বাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার কুলিনকুন্ডা (ভূইয়া বাড়ি) এ জন্মগ্রহণ করেন। যারা কৃষি কাজ করেন তারা হলেন কৃষক। কৃষকরা মানুষের প্রাণ। আর সালাহ উদ্দিন আহমেদ এর পিতা আব্দুল হেকিম ভূঞা পেশা ছিল কৃষিজীবী। মাতা শাহানা বেগম ছিলেন সুগৃহিনী। বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগে। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সালাহ উদ্দিন আহমেদ তৃতীয়। এই শিক্ষক স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার পূর্ব রুহিতনসী গ্রামে।
পারিবারিক জীবন : গুণী এই শিক্ষক কর্মক্ষেত্রে তিনি যেমন সফল তেমনি পরিবার প্রধান হিসেবেও। ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক তিনি। সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভূঞা স্যারের ছেলে-মেয়ে সবাই যার যার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে মহিবুল হাসান ভূইয়া (বিবাহিত) মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী লি. কম্পোজিট সার্ভিস, সিলেট। মেয়ে মোছা. সানিয়া বেগম ভূইয়া (বিবাহিতা), ছেলে মো. ওবায়দুল হক ভূইয়া (বিবাহিত), মেয়ে মোছা. আরিফা বেগম ভূইয়া (বিবাহিতা), ছেলে রেজাউল করিম ভূইয়া, একাউন্টস অফিসার, আইডল গ্রুপ, ঢাকা। মেয়ে মোছা. সাদিকা বেগম ভূইয়া ও ছেলে সাঈদ আহমাদ ভূইয়া (অধ্যায়নরত)।
শিক্ষাজীবন
শ্রদ্ধেয় সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভূঞা স্যার ১৯৫৭ সালে কুলিনকুন্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি। ১৯৬১ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন সম্পন্ন করার পর বি-বাড়িয়ার ‘অন্নদা’ নামে একটি স্কুলে ৬ষ্ট থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। ১৯৬৭ সালে নাসিরনগর স্কুল থেকে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে মানবিক শাখায় প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে বি-বাড়িয়া কলেজ থেকে মানবিক শাখায় কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭২ সালে বি-বাড়িয়া কলেজ থেকে মানবিক শাখায় কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে তৃতীয় বিভাগে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এছাড়া ১৯৮৩ সালে কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে মানবিক শাখায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দ্বিতীয় বিভাগে বি এড সম্পন্ন করেন।
শিক্ষকতা জীবন :
সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভূঞা স্যার ১৯৭৮ সালে লাখাই এ,সি, আর, সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হন। ১৫ বছর সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৩ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে উন্নীত হন। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক বিদায়ী সংবর্ধনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ ৩২ বছরের শিক্ষকতার জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
গুনী এই শিক্ষক ২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশনের জরিপে লাখাই উপজেলার আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার পদকে ভুষিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ফাউন্ডেশন হবিগঞ্জ জেলার নয় উপজেলার ১৮ জন আদর্শ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে পদক দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)। পদকপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জন শিক্ষককে আর্থিক সহযোগিতাও দেবে সংস্থাটি।
একজন কৃষক চান তাঁর সন্তান যেন কষ্টকর এবং অবহেলার জীবন কাটাতে না হয়। একজন কৃষক স্বপ্ন দেখেন সন্তানকে ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, ডাক্তার, উকিল, সচিব কিংবা সরকারের আমলা বানাবেন। হয়তো পিতার সেই স্বপ্ন সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভূঞা পূরণ করতে পেরেছেন। শুধু তাই নয় এই শিক্ষক নিজ সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। জীবনের শেষ লগ্নে এসে তাঁর মনে হচ্ছে একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি আনন্দিত এবং গর্বিত। কারণ তাঁর হাত ধরেই শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েছে শতশত শিক্ষার্থী । পৃথিবীতে মানুষের নিত্য আসা-যাওয়া,কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আসেন,যারা কর্ম,সততা,নিষ্ঠা,নীতি,আদর্শের মাধ্যমে স্থান করে নেন হাজার মানুষের হৃদয়ে।আমাদের স্যার তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।স্যারের প্রতি রইল গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ,আমরা তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি।