জন্ম : মহেশ্বর দাস ১৯৪৩ সালের ৩১ আগষ্ট হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার, ডাকঘর-ইকরাম, খড়তলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহেন্দ্র চন্দ্র দাস। মাতার সোম তারা দাস। মহেশ্বর দাস এর পিতার পেশা ছিল কৃষি কাজ। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে বোন সবার বড়। আর মহেশ^র দাস ছিলেন দ্বিতীয়।
শিক্ষা জীবন : মহেশ্বর দাস নিজ গ্রামে অবস্থিত খড়তলা প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ১৯৫৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ১৯৬১ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় হতে মানবিক শাখায় দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাশ করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজ হতে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন।
শৈশব : মহেশ্বর দাসের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় নিজ গ্রামে অবস্থিত খড়তলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ে ১৯৫১ সালে ১ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে সেই বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৫৬ সালে নিজ বাড়ির নিকটবর্তী সুজাতপুর হানিফ খাঁন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে আজমিরীগঞ্জ এমাল গেমেটেড বিরচরণ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি এবং বার্ষিক পরীক্ষায় ৮ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ১৯৫৮ সালে হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় হতে মানবিক শাখায় দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাশ করেন তিনি। দুর্ভাগ্যবশত: পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারনে অভিভাবকের মতের বিরুদ্ধে পরবর্তী সময়ে কলেজে ভর্তি হতে পারেননি তিনি। তবে মহেশ^র দাসের ইচ্ছা ছিল তিনি এক বৎসর পরে হলেও কলেজে ভর্তি হনে। এরপর ১৯৬৩ সালে হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন। আর্থিক অসুবিধার কারনে এইচএসসি পরীক্ষার পর পড়ালেখার সমাপ্তি ঘটে।
শিক্ষকতা : শায়েস্তাগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৬৪ সালের ২২ এপ্রিল সহকারী বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগদান করেন। উক্ত স্কুলে একটানা ৩৮ বছর শিক্ষকতার পর ২০০৩ সালের ৩১ আগষ্ট স্কুল হতে অবসরে চলে যান।
পারিবারিক : পারিবারিক জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক মহেশ্বর দাস। ছেলে মনীন্দ্র চন্দ্র দাস। মেয়ে রাজলক্ষী রানী দাস।
সমাজ সেবা : ২০১৪ সালে মহেশ্বর দাসের এলাকাতে একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ২০১৫ হতে একটানা ৩ ধাপে ৬ বৎসর যাবৎ বাল্লা গোড়াখালী এস,এস,ডি,পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত আছেন। বর্তমানে স্কুলটি উপজেলার মধ্যে একটি আদর্শ স্কুল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত।
গুনী এই শিক্ষক ২০২২ সালে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান জনাব টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশনের জরিপে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার পদকে ভুষিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ফাউন্ডেশন হবিগঞ্জ জেলার ৯ উপজেলার ১৮ জন আদর্শ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে পদক দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনী ধারাবাহিকভাবে লিখছেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি টি, আলী স্যারের পুত্র বৃটেনের জনপ্রিয় চ্যানেল এস টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সল আহমদ (রুহেল)। পদকপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জন শিক্ষককে আর্থিক সহযোগিতাও দেবে সংস্থাটি।
যে মানুষটি অস্বচ্ছলতার কারনে কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। আর্থিক অসুবিধার কারনে এইচএসসি পরীক্ষার পর পড়ালেখার সমাপ্তি ঘটে। উচ্চশিক্ষা থেকে যায় অধরায়। তবুও দারিদ্রতার কাছে মাথা নত করেননি, প্রতিটি নিঃশ্বাসে সততা নিষ্ঠার সাথে চলেছেন। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহেশ্বর দাস ৩৮ বছর শিক্ষকতা জীবনে ছাত্রছাত্রীদের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পেরেছেন। আর এই শিক্ষকের শিক্ষা ও স্মৃতি দীর্ঘকাল শিক্ষার্থীর মনে গেঁথে থাকবে। পরিশেষে সর্বস্তরের মানুষের নিকট এই শিক্ষাগুরু স্যারের সর্বাঙ্গীন মঙ্গলের জন্য দোয়া প্রার্থী।